জুমে ধান কাটা শুরু

বৃষ্টির অভাবে ফলন বিপর্যয়, খাদ্য সংকটের আশঙ্কা চাষিদের

রাঙামাটি প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ৬ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

পাহাড়ের সুউচ্চ মাটিতে উৎপাদিত জুমের পাকা ধান কাটা শুরু হয়েছে জুমিয়াদের। কিন্তু অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় ও বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় জুমের ফলন ভালো হয়নি বলে জানিয়েছেন চাষিরা। এতে করে আগামীতে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
উঁচু পাহাড়ের ঢালে জঙ্গল কেটে ও আগুনে পুড়িয়ে পরিষ্কার করে মাটিতে ধানসহ নানা জাতের সবজি ও অর্থকরী ফসল একত্রে চাষাবাদকৃত জমিকে স্থানীয় ভাষায় জুম চাষ বলা হয়। সাধারণত পৌষ-মাঘ মাসে পাহাড়ের ঢাল পরিষ্কার করে ফাল্গুন-চৈত্র মাসে আগুনে পুড়িয়ে মাটি উপযুক্ত করে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে সুঁচালো দা দিয়ে গর্ত খুঁড়ে একসঙ্গে ধানসহ নানা সব্জির বীজ বপনের মাধ্যমে এ চাষ করা হয়। শ্রাবণ-ভাদ্র-আশ্বিন মাসে জুমের ধান কাটা হয়। জুম ধানের মধ্যে রয়েছে গেলং, কবরক, রাঙ্গী, শুরি, মধুমালতী, কামারাং বিনি ধান ইত্যাদি। এছাড়া অর্থকরী ফসল হচ্ছে মারফা, মরিচ, বেগুন, তিল এবং ঢেঁড়স। রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ বছর রাঙামাটির দশ উপজেলায় ৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে জুম ধানের আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে গড়ে ১ দশমিক ৩ মেট্রিক টন হিসেবে এ বছর জুম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ হাজার ৫শ হেক্টর। কিন্তু এ বছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় জুমের ফসল কিছুটা কম হয়েছে।
এদিকে জুম চাষিরা জানিয়েছে, এ বছর সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় জুমে ভাল ফলন হয়নি। এ ফসল আগামী দুই মাস যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এতে করে খাদ্য সংকটের শঙ্কায় রয়েছেন তারা। রাঙামাটি সদর উপজেলার মগবান ইউনিয়নের বরাদম এলাকার জুমচাষি ধনমণি চাকমা বলেন, এবছর জুমের ধান ভালো হয়নি। এ নিয়ে আগামী ২ মাসের খোরাক হবে কিনা তা নিয়ে চিন্তায় আছি। আরেক জুমচাষি মিশু চাকমা বলেন, বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ফসল নিয়ে খুব চিন্তায় আছি। কিভাবে চলবো আগামী মাসগুলো জানি না। এদিকে রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রবার্ট ত্রিপুরা বলেন, প্রাকৃতিকভাবে বৃষ্টিপাত কম হওয়ার ফলে এ বছর জুম চাষিদের জুমের ফলন ভালো হয়নি। এতে করে আগামী দিনগুলোতে খাদ্য সংকটের আশংকা করা হচ্ছে। রাজস্থলীর ১ নম্বর ঘিলাছড়ি ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার জয়রাম ত্রিপুরা বলেন, অনাবৃষ্টির ফলে গত বছরের তুলনায় এ বছর জুম চাষ কম হয়েছে। অনেক জায়গায় পানি না পাওয়ায় ধান মরে গেছে।
রাঙামাটি সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু মো. মনিরুজ্জামান বলেন, জুমচাষ হচ্ছে পুরোপুরি মৌসুমী বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভরশীল ফসল। এ বছর কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি না হওয়ায় জুমচাষ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, রাঙামাটি সদর উপজেলায় ২৫০ হেক্টর জমিতে জুমের আবাদ হয়েছে। পাহাড়ি জমিতে যদি জুম চাষ করা হয় তাহলে প্রায় তিন-চার বছর ঐ জমি অনাবাদি রাখা হয়। পাহাড়ের অনাবাদি জমিগুলোতে চাষ করার জন্য কৃষকদের আমরা কাজু বাদাম দিচ্ছি। আমরা তাদের পরামর্শ দিচ্ছি জুমচাষের পাশপাশি অন্যান্য ফসল ফলানোর জন্য যাতে করে তাদের পাবিারিক চাহিদা মেটানো যায়।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তপন কুমার পাল বলেন, রাঙামাটিতে কয়েকটা এলাকায় বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে জুমের ফলন কিছুুটা কম হতে পারে। তবে জুমে অন্যান্য যে ফসলগুলো আছে যেমন- তিল, মারফা, পেঁেপ, আদা, হলুদ, মরিচ, সবজি, কলা আশাকরি এগুলোর ফলন ভালো হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জুম চাষ পদ্ধতিকে আধুনিকায়ন ও জুম চাষিদের ব্যাংক থেকে ঋণের সুবিধা দিলে জুমে ব্যাপক উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে এ অঞ্চলের খাদ্যর ঘাটতি পূরণ হবে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ প্রথমবার ৩১ লাখ কোটি ডলার ছাড়াল
পরবর্তী নিবন্ধপুকুরে জালে আটকা ১২ ফুট লম্বা অজগর