জুমে ধান কাটার উৎসব

রাঙামাটি প্রতিনিধি | বুধবার , ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ৪:১১ পূর্বাহ্ণ

হিল্লো মিলেবো জুমত যায় দে, জুমত যায় দে, যাদে যাদে পধত্তুন পিছ্যা ফিরি রিনি চায়, শস্য ফুলুন দেঘিনে বুক্কো তার জুড়ায়।’ এটি চাকমা সম্প্রদায়ের জনপ্রিয় একটি গান। সারা বছর পরিশ্রম শেষে পাহাড়ি তরুণীরা যখন জুম ক্ষেতের পাকা ফসল ঘরে তুলতে যায় যখন মনের আনন্দে জুম ঘরের মাচায় বসে জুম্ম তরুণতরুণীরা গানটি গেয়ে থাকে। তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড়িদের জুম ক্ষেতে শুরু হয়েছে পাকা ধান কাটা। ধুম পড়েছে মারফা (পাহাড়ি শশা), ছিনারগুলা (পাহাড়ি মিষ্টিফল), বেগুন, ধানি মরিচ, ঢেঁড়শ, কাকরোল, কুমড়াসহ নানা ফসল তোলার কাজ। এরপর ঘরে উঠবে তিল, যব; সবশেষে তোলা হবে তুলা।

পাহাড়ি জুম চাষিরা পৌষমাঘ মাসে পাহাড়ের ঢালে জঙ্গল পরিষ্কার করে শুকানোর পর ফাল্গুনচৈত্র মাসে আগুনে পুড়িয়ে জুম ক্ষেত্র প্রস্তুত করে। এরপর বৈশাখজৈষ্ঠ্য মাসে পোড়া জুমের মাটিতে সুঁচালো দা দিয়ে গর্ত খুঁড়ে একসঙ্গে ধান, তুলা, তিল, কাউন, ভুট্টা, ফুটি চিনার, যব প্রভৃতি ফসলে বীজ বপন করে। আষাঢ়শ্রাবণ মাসে জুমের ফসল ঘরে আসতে শুরু করে। সে সময় মারফা, কাঁচা মরিচ, চিনার, ভুট্টা পাওয়া যায়। ধান পাকে ভাদ্রআশ্বিন মাসে।

এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় রাঙামাটিসহ পার্বত্য তিনটি জেলার পাহাড়ে জুমের ভালো ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। রাঙামাটি সদর উপজেলার বরাদম ইউনিয়নের গোলাছড়ি এলাকার কালাধন চাকমা জানান, এবার তার জুমের ফসল আশানুরূপ ভালো হয়েছে। রাঙামাটি সদররের মগবান ইউনিয়নের অরুণ কান্তি চাকমা তার জুমের ফসল কাটতে কাটতে বলেন, এবার আমার জুম থেকে ভাল ধান পাবো আশা করছি। এর পাশাপাশি আমি হলুদও রোপণ করেছি।

এদিকে রাঙামাটি সদর উপজেলার শুকরছড়ি এলাকার জুম চাষি মঙ্গল বিকাশ চাকমা জানান, আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার জুমের ফসল ভাল হয়েছে। ভবিষ্যতে কৃষি বিভাগের কাছ থেকে কিছু সহযোগিতা পেলে ফলন আরও ভাল হতে পারে।

রাঙামাটি সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আপ্রু মারমা বলেন, রাঙামাটি সদর উপজেলায় এবার ২৮০ হেক্টর জমিতে জুমের ধান উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে উফশী ধান হচ্ছে ৩০ মেট্রিক টন। হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয়েছে ২.৬ মেট্রিক টন। আর স্থানীয় বীজের ধান উৎপাদন হয়েছে ২৫০ মেট্রিক টন। হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয়েছে ১.৭০ মেট্রিক টন।

রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক পবন কুমার চাকমা বলেন, প্রতিবারের ন্যায় এবারও জুমের ফসল ভালো হয়েছে। জুম চাষ পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর একটি ঐতিহ্য। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগ মানুষ এই জুম চাষকে কেন্দ্র করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচকবাজার ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধসিএনজিতে ঘুরে বেড়ায় ওরা সুযোগ বুঝে গ্রিল কেটে চুরি