জুমাতুল বিদা আজ। রমজানুল মোবারকের শেষ জুমায় মসজিদে মসজিদে আজ মুসল্লিদের ঢল নামবে। আজ জুমার নামাজে খতিবের কন্ঠে ধ্বনিত হবে ‘আল বিদা মাহে রমজান, আল বিদা মাহে রমজান’। তখন মুসল্লি রোজাদারদের মাঝে রোজার বিদায়ে সকরুণ আর্তি–আকুতি বিরহ লক্ষ্য করা যাবে। যারা রোজার মাসটি সত্যি সত্যি ইবাদত বন্দেগিতে ও কঠিন সিয়াম সাধনার মাধ্যমে অতিবাহিত করেছে, তাদের জন্য শুভ বার্তার জানান দেয় মাহে রমজান। আর যারা মহিমান্বিত ফজিলতপূর্ণ রোজার মাস পেয়েও নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারেনি, যারা রোজা পেয়েও আত্মশুদ্ধি অর্জন করতে পারেনি তাদের জন্য রয়েছে দুঃসংবাদ। এই রোজার মাসেও দেশে দেশে চলছে নিরীহ মানুষের ওপর সবল ক্ষমতাধর দেশগুলোর সীমাহীন নিপীড়ন–অত্যাচার। ফিলিস্তিনের গাজার মুসলমানরা আজ রোজার দিনেও শান্তিতে নেই। তাদের ভিটে মাটি ঘর–বাড়ি কেড়ে নিয়েছে নিপীড়ক বর্বর দেশ ইসরায়েল। ইসরায়েলি স্থল ও বিমান হামলায় ফিলিস্তিনের গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। দেড় বছর ধরে ইসরায়েলি বর্বরতায় প্রায় ৬০ হাজার গাজার মুসলমান বেঘোরে প্রাণ হারিয়েছে। প্রায় ২০ হাজার অবুঝ নিরীহ শিশুর প্রাণ কেড়ে নেয়া হয়েছে। গাজায় এখন চলছে চরম মানবিক বিপর্যয় ও দুর্ভিক্ষ। ইসরায়েল শুধু বর্বর হামলা–গণহত্যায় থেমে থাকেনি, তারা গাজায় জাতিসংঘের ত্রাণ সামগ্রী ঢুকতেও বাধা দিচ্ছে। ফলে এক মুঠো খাবারের জন্য গাজার মানুষ আজ আর্তি–ফরিয়াদ জানাচ্ছে। শিশুরা তৃষ্ণার্ত, তারা প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত। অথচ বিশ্ববাসী তাদের জন্য তেমন কিছুই করতে পারছে না। ফিলিস্তিনের গাজার মুসলমান নারী–পুরুষ শিশু বৃদ্ধরা আজ মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য হচ্ছে। এই রোজার দিনে তারা এক বেলা আহারও জোগাড় করতে পারছে না। সাহরি–ইফতারি ছাড়াই তারা উপোস রোজা রাখছে। কী ভয়াবহ অবস্থা গাজার মুসলমানদের! অথচ আমরা কতই সৌভাগ্যবান, আমরা আল্লাহর মেহেরবানিতে গাজাবাসীর চেয়ে অনেক স্বস্তি–সুখে দিন যাপন করছি। তবে আমাদের প্রিয় স্বদেশেও মজলুম নিপীড়িত লাখো লাখো রোহিঙ্গা মুসলমান আজ শরণার্থী জীবন যাপন করছে। গাজা–রোহিঙ্গাসহ বিশ্বের মজলুম মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে আজ সমগ্র বিশ্বকে। সব ক্ষমতাশালী বড় দেশকে এবং জাতিসংঘকে বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের দুঃখ–দুর্দশা লাঘবে সর্বাত্মক প্রয়াস চালিয়ে যেতে হবে। সর্বাবস্থায় মজলুম মানুষের পাশে থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহপাক। কোরআন মজিদের সূরা নিসার ৭৫ নং আয়াতে এই নির্দেশনা রয়েছে। আজ জুমাতুল বিদার দিনে বিশ্বের মজলুম মানুষের মুক্তির শপথ ধ্বনিত হোক লাখো–কোটি কণ্ঠে। পৃথিবী থেকে অন্যায়, অবিচার, নিপীড়ন, চরমপন্থা যুদ্ধ–সংঘাত চিরতরে অবসান হোক। ক্ষুধা ও দারিদ্র্য থেকে বিশ্ববাসী নিষ্কৃতি পাবে–এই প্রত্যাশাও পূরণ হোক। আজ জুমাতুল বিদার দিনে মসজিদ থেকে বের হয়ে গরিব–দুখীদের মাঝে বেশি বেশি দান সদকাহ করে আল্লাহপাকের করুণাসিক্ত হোন।