সালাম বিনিময় ইসলামের উত্তম শিষ্টাচারিতা
সম্মানিত মু’মীন ভাইয়েরা! আল্লাহ তা’য়ালাকে ভয় করুন। আল্লাহ তায়ালা আপনাদের উপর যেসব অধিকার অপরিহার্য করেছেন তা যথাযথ আদায় করুন। মুমীন ভাইদের অধিকার সমূহ সংরক্ষণ করুন ও পবিত্র ধর্ম আল ইসলামের সৌন্দর্য ও শিষ্টাচারিতা অনুসরণ করুন। ইসলামী গুণাবলীতে গুনান্বিত হওয়া সকল প্রকার কল্যাণ ও সমৃদ্ধি অর্জনের সহায়ক। ইসলমী আদর্শ বিমুখ হওয়া অনিষ্টতা ও ধ্বংসের অন্যতম কারণ। “সালাম” ইসলামী শরীয়তে ইসলাম ও মুসলমানের কল্যাণের অন্যতম নিদর্শন।
আল কুরআনের আলোকে সালাম প্রদানের নির্দেশনা: আল্লাহ তা’য়ালা মহাগ্রন্থ আল–কুরআনে এরশাদ করেছেন “আর তোমাদেরকে যদি কেউ অভিবাদন জানায় তোমরাও তদাপেক্ষা উত্তম অভিবাদন (সালাম) পেশ করো, অথবা তারই মতো ফিরিয়ে দাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী।” (৪–সূরা–আন নিসা: আয়াত: ৮৬)
আল্লাহ তা’য়ালা আরো এরশাদ করেছেন “অর্থ: হে মুমীনগণ তোমরা নিজেদের ছাড়া অন্যলোকদের গৃহে প্রবেশ করোনা যতক্ষণ পর্যন্ত গৃহবাসীদের নিকট হতে অনুমতি না পাবে ও গৃহবাসীদের প্রতি সালাম না করবে। এ নিয়ম তোমাদের জন্য কল্যাণকর, আশা করা যায় তোমরা অবশ্যই উপদেশ গ্রহণ করবে। (২৪ সূরা আন নূর: ২৭)
সম্মানিত মুসলিম ভাইয়েরা! জেনে রাখুন! ঈমানী ভ্রাতৃত্ব ও ধর্মীয় বন্ধন সর্ব প্রকার রক্তের বন্ধনের চেয়েও সুদৃঢ় শক্তিশালী। আল্লাহ ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশের প্রতি আনুগত্য ব্যাতিরেকে কল্যাণ ও সৌভাগ্য অর্জিত হয় না। ইসলামী বিধানে সালাম দেয়া সুন্নত। সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব। মুসলামানদের পারস্পরিক সাক্ষাতে ভাব বিনিময়ে সাদর সম্ভাষণ ও শুভেচ্ছা জানানো ইসলামী সংস্কৃতির অন্যতম নিদর্শন ও পরিচায়ক সালাম বিনিময়।
হাদীস শরীফের আলোকে সালাম’র গুরুত্ব: প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসংখ্য হাদীস শরীফে সালাম’র গুরুত্ব ও তাৎপর্য বর্ণিত হয়েছে, নিম্নে কয়েকটি হাদীস এর অর্থ উপস্থাপন করা হলো:
পরিচিত–অপরিচিত সকলকে সালাম বিনিময় করার গুরুত্ব : হযরত আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন (ইয়া রাসূলাল্লাহ) ইসলামে কোন আমলটি উত্তম? নবীজি বললেন, তোমরা অন্যদের খানা খাওয়াবে এবং পরিচিত–অপরিচিত সকলকে সালাম দিবে। (বোখারী শরীফ, হাদীস নং : ৬২৩৬)
পরস্পর শিষ্টাচারিতা ভালবাসা বৃদ্ধি করে: সালাম পারস্পরিক সম্পর্ক সুন্দর ও মধুর করে। মনমালিন্য বিদুরীত করে, সৌহার্দ ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি করে। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, তোমরা যতক্ষণ ঈমান আনবেনা ততক্ষণ জান্নাতে প্রবেশ করবেনা। আর যতক্ষণ পরস্পর ভালবাসবেনা ততক্ষণ ঈমানদার হবেনা। আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয়ে বলব না? যা আমল করলে তোমরা পরস্পরকে ভালবাসবে। তা হলো তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালাম প্রচলন করো। (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং ৫৪, আবু দাউদ শরীফ, হাদীস নং ৫১৯৩)
সালাম করলে পরিবারে বরকত হয়: সালাম একটি পুণ্যময় আমল সালামে আমিত্বের বিলোপ ঘটে, আল্লাহর দয়া রহমত ও বরকত বর্ষিত হয়। হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে বৎস! তুমি যখন তোমার পরিবারে প্রবেশ করবে সালাম করবে। এতে তোমার বরকত হবে এবং তোমার পরিবারেও বরকত হবে। (তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং : ২৬৯৮)
সালামের ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য: পবিত্র ইসলামে মুসলমানদের পারস্পারিক অধিকার স্বীকৃত। এটা নিছক সাধারণ অধিকার নয়, ধর্মীয় অধিকারের অন্তর্ভূক্ত। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন এক মুসলমানের উপর অপর মুসলমানের ছয়টি অধিকার রয়েছে। ১. যখন সাক্ষাৎ হয় সালাম দিবে ২. দাওয়াত করলে, ডাকলে বা বিপদে সাড়া দেবে ৩.হাঁচি দিলে আলহামদুলিল্লাহর উত্তরে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলবে, ৪. অসুস্থ হলে সেবা করবে, ৫. মুসলমানের মৃত্যু হলে জানাযায় উপস্থিত হবে, ৬. নিজের জন্য যা পছন্দের মুসলমান ভাইয়ের জন্য তা পছন্দ করবে। ( বোখারী শরীফ, ৬ষ্ঠ অধ্যায় সালাম অধ্যায়: পৃ: ১৯১)
যে যাকে সালাম দেবে: হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন ছোটরা বড়দের সালাম দিবে, হাঁটা ব্যক্তি বসা ব্যক্তিকে সালাম দিবে, কম সংখ্যক লোক অধিক সংখ্যক লোককে সালাম দিবে। (মুসলিম শরীফ হাদীস নং ২১৬০) ছোটদেরও আদর্শ শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে বড় জনেরা ছোটদের সালাম দেয়াও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
সালাম কারী উত্তম ব্যক্তি : প্রথম সালামকারী ব্যক্তি নিরহংকারী। অহংকার মুক্ত মহৎপ্রাণ হৃদয়বান ব্যক্তিগণ প্রথম সালাম দিয়ে থাকেন এরশাদ হয়েছে, হযরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট সেই লোক উত্তম যে প্রথম সালাম কারী। (আবু দাউদ শরীফ, হাদীস নং : ৫১৯৭)
দুই ব্যক্তির মধ্যে যিনি প্রথমে সালামের সূচনা করেন তিনি উত্তম ব্যক্তি একজন মু’মীন তাঁর মুসলিম ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎকালে সালাম থেকে বিমূখ হবে তা কোন ভাবেই সমচীন নয়, সালাম পরস্পর হিংসা বিদ্ধেষ দূরীভুত করে সম্প্রীতি ভালবাসা বৃদ্ধি করে।
কেবলমাত্র সালামের উত্তরে ওয়া আলাইকুম সালাম বলে সংক্ষিপ্ত করবেনা “ওয়ারাহমাতুল্লাহ ওয়াবারকাতুহু” শব্দগুলো বৃদ্ধি করলে আরো উত্তম এবং অধিক সওয়াব অর্জিত হবে।
আলোচনার প্রারম্ভে সালাম : মুসলমানের উচিৎ আলোচনার প্রারম্ভে সালাম বিনিময় করা। উত্তম চারিত্রিক বৈশিষ্ট ধারণ করা ও অনুসরণ করা একজন মুসলমানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। হযরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, কথাবার্তা সূচনার আগে সালাম বিনিময় করবে। (তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং : ২৬৯৯)
ইশারায় সালাম করা বিজাতীয় সংস্কৃতি : হাদীস শরীফ প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি অন্য জাতির অনুসরণ করে সে আমাদের দলভূক্ত নয়। তোমরা ইয়াহুদী খৃষ্টানদের অনুকরণ করোনা। ইয়াহুদীদের সালাম হাতের আঙ্গুলের ইশারায়। খৃষ্টানদের সালাম হলো হাতের ইশারায় (তিরমিযী শরীফ: ৫/৫৬)
সালাম সহকারে অনুমতি গ্রহণ ইসলামি সংস্কৃতি: বিনা অনুমতিতে সালাম বিহিন কারো গৃহে প্রবেশ করা ইসলাম অনুমোদন করেনা। সালামসহ অনুমতি সহকারে প্রবেশ করা ইসলামী আদর্শের পরিচায়ক।
হযরত কালাদাহ ইবন হাম্বল (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবীজির কাছে আসলাম। অত:পর সালাম না করে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে প্রবেশ করলাম, নবীজি বললেন, তুমি ফিরে যাও। আসসালমু আলাইকুম বলো, অত:পর বলো আমি কি প্রবেশ করতে পারি? (তিরমিযী শরীফ,হাদীস নং : ২৭১০)
আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের আপনাদের সকলকে পবিত্র কুরআনের বরকত দান করুন। কুরআনের আয়াত ও প্রজ্ঞাপূর্ণ উপদেশ দ্বারা আমাদের নাজাত দান করুন। বিতাড়িত শয়তানের প্ররোচনা হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। মহান আল্লাহ তা’য়ালা এরশাদ করেছেন, “যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ করবে নিজেদের লোকদেরকে সালাম করবে। অভিবাদন আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। যা বরকতময় ও পবিত্র। আর আল্লাহ তোমাদের জন্য নিদর্শনগুলো এমন ভাবে বর্ণনা করেন যেন তোমরা বুঝতে পার। (২৪ সূরা: আননূর:৬১) আমীন।
লেখক : খতীব, কদম মোবারক শাহী জামে মসজিদ।