জুনে জাহাজ ভিড়ছে না পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনালে (পিসিটি)। সব ধরনের প্রস্তুতি এবং তোড়জোড় থাকলেও ভয়াল করোনার থাবা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বহুল প্রত্যাশার প্রকল্প পিসিটি বাস্তবায়নকে পিছিয়ে দিয়েছে। অবশ্য নতুন এই টার্মিনালে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাহাজ ভেড়ানোর প্রস্তুতি চলছে। অপরদিকে এই টার্মিনালের জন্য বিদেশি অপারেটর নিয়োগেরও প্রক্রিয়া চলছে। তবে বিদেশি অপারেটর নিয়োগের আগের সময়টাতে বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় টার্মিনাল চালু করে দেবে।
বন্দর সূত্র জানায়, দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের প্রবেশদ্বার চট্টগ্রাম বন্দরের উপর চাপ কমাতে পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল (পিসিটি) নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। একেবারে আড়ালে পড়ে থাকা একটি জায়গায় পিসিটি গড়ে তোলা হচ্ছে। একটি রাস্তা সোজা করে দেয়ার মাধ্যমে অত্যন্ত মূল্যবান একটি টার্মিনাল নির্মাণের সুযোগ তৈরি হয় চট্টগ্রাম বন্দরের। পতেঙ্গার বিমানবাহিনীর জহুরুল হক ঘাঁটির পাশ থেকে বোট ক্লাবের সন্নিকট পর্যন্ত রাস্তার বাঁকে অনুৎপাদনশীল হিসেবে পড়ে থাকা ৩২ একর ভূমিতে ১৮৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে পিসিটি নির্মাণ করা হচ্ছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তহবিল থেকে প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করছে। পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনালে ৬০০ মিটার লম্বা জেটি নির্মাণ করা হচ্ছে। যাতে একই সাথে তিনটি কন্টেনারবাহী জাহাজ বার্থিং করা যায়। পাশাপাশি তেল খালাসের জন্য ২২০ মিটার লম্বা একটি ডলফিন জেটিও থাকবে। ৩২ একর জমিতে তৈরি হচ্ছে ১ লাখ ১২ হাজার বর্গমিটার আরসিসি পেভমেন্টের অভ্যন্তরীণ ইয়ার্ড ও রাস্তা। একই সাথে ২ হাজার ১২৮ বর্গ মিটারের কন্টেনার ফ্রেইট স্টেশন শেড, প্রায় বিশ ফুট উচ্চতার ১৭৫০ মিটার কাস্টমস বন্ডেড এরিয়া, ৫৫৮০ বর্গমিটারের বন্দর কর্তৃপক্ষের অফিস, ১২০০ বর্গমিটারের যান্ত্রিক ও মেরামত কারখানা, ২৫০০মিটার রেলওয়ে ট্রেক নির্মাণ, ৪২০ মিটার ফ্লাইওভার নির্মাণ, ৪ লেন বিশিষ্ট শূন্য দশমিক ৭৫ কিমি. এবং ৬ লেন বিশিষ্ট ১ কিমি রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া বন্দরের সিকউরিটি পোস্ট, গেস্টহাউস, ফুয়েল স্টেশন এবং লেবার শেডও নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পিসিটির জন্য সোজা করা রাস্তা চালু করে দেয়া হয়েছে।
পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনালের জেটিসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ চলছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। গত ডিসেম্বরে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্প মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়েছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে এই টার্মিনাল পুরোদমে চালু হওয়ার কথা। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট জুন মাসের মধ্যেই অন্তত একটি জেটিতে জাহাজ ভেড়ানোর আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। একটি জেটি চালু করে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে ব্যাপকভাবে কাজও চলছিল। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ প্রকল্পটিকে পিছিয়ে দিয়েছে। এতে করে আগামী জুনে জাহাজ ভিড়ছে না পিসিটিতে। নানাভাবে চেষ্টা করেও জুনের মধ্যে পিসিটি আংশিক চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে টার্মিনালটি চালু করে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে কার্যক্রম চলছে।
এই ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মিজানুর রহমান সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, করোনাকালে আমরা কিছু সমস্যা মোকাবেলা করেছি। এতে করে ইচ্ছে থাকলেও আমাদেরকে কিছুটা পিছিয়ে যেতে হয়েছে। তিনি সর্বোচ্চ গতিতে প্রকল্পের কাজ পরিচালনার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই পিসিটি চালু হবে।
পিসিটি বিদেশী অপারেটর দিয়ে পরিচালনার ব্যাপারে সরকারি সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত। তবে এই অপারেটর নিয়োগের প্রক্রিয়া এখনো একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে। কবে নাগাদ বিদেশী অপারেটর নিয়োগ হবে তা এখনো অনিশ্চিত। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ টার্মিনালটি নিয়ে এই ধরনের অনিশ্চয়তায় বসে থাকবে না। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে টার্মিনালটি চালু করে দেয়ার ব্যাপারে বন্দর কর্তৃপক্ষ নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিদেশী অপারেটর নিয়োগের আগে টার্মিনালটি অলস বসিয়ে না রেখে বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু করে দেবে।
এই ব্যাপারে গতকাল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (এডমিন এন্ড প্ল্যানিং) মোহাম্মদ জাফর আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে টার্মিনালটি চালু করার ব্যাপারে তৎপর। দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিদেশী অপারেটর নিয়োগের আগে আমরা নিজেরাই টার্মিনালটি চালু করে দেবো। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে বিদেশী অপারেটর নিয়োগ হলে আমরা তাদের মাধ্যমে টার্মিনালটি পরিচালনা করব। তিনি আগামী ডিসেম্বরে এই টার্মিনাল চালু হলে বন্দর কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমে যথেষ্ট গতিশীলতা তৈরি হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এই টার্মিনালে বছরে অন্তত চার লাখ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা যাবে বলেও মোহাম্মদ জাফর আলম উল্লেখ করেন।