জুনের মধ্যে চলবে এক জোড়া কমিউটার ট্রেন

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুট ।। ঢাকা-কক্সবাজার আরো তিন জোড়া আন্তঃনগর

শুকলাল দাশ | শনিবার , ১৬ মার্চ, ২০২৪ at ৪:২৬ পূর্বাহ্ণ

প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ শেষে গত ১ ডিসেম্বর পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সাথে সারা দেশের ট্রেন যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। কক্সবাজারের সাথে ট্রেন যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ার পর থেকে যাত্রীদের কাছে ট্রেনের টিকিটের চাহিদা সীমাহীনভাবে বেড়ে যায়। বর্তমানে ঢাকাকক্সবাজার পথে দুই জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করছে। তবে এসব ট্রেনের টিকিট পাওয়া নিয়ে হাহাকার হচ্ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের সবচেয়ে লাভজনক রুট হয়ে উঠেছে ঢাকাচট্টগ্রামকক্সবাজার। এই রুটে বর্তমানে দুটি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করছে। ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ও ‘পর্যটন এক্সপ্রেস’। এই দুটি আন্তনগর ট্রেনে সিট সংখ্যা ৮০০ করে ১৬০০ এর ওপরে। রেলওয়ের পরিবহন এবং বাণিজ্যিক বিভাগের কর্মকর্তারা জানান এই রুটে প্রতিদিন যাত্রীদের চাহিদা থাকে এক লাখেরও বেশি।

কক্সবাজার রুটের একাধিক যাত্রী এবং রেলওয়ের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে কথা হলে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকায় চট্টগ্রামদোহাজারী কক্সবাজার রেল লাইন নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। রেল কর্তৃপক্ষ এতো বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় এই রেল লাইন নির্মাণের পর এখন অর্থ আয় করার সময়। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই এ নিয়ে কোনো পরিকল্পনা নেয়নি। যার কারণে পর্যটন নগরী কক্সবাজারগামী ট্রেনে প্রতিদিন যে পরিমাণ যাত্রীদের চাহিদা রয়েছে তার সিকি ভাগও পূরণ করতে পারছে না তারা। ৫৬ বছর ধরে রেললাইন নির্মাণ কাজে ব্যস্ত থাকলেও রেললাইন নির্মাণের পর যাত্রীদের চাহিদা মত ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষ ছিল একেবারেই উদাসীন। ইঞ্জিন সংকটের কারণে ঢাকাকক্সবাজার এবং চট্টগ্রামকক্সবাজার রুটে এখন যাত্রীদের চাহিদা মোতাবেক ট্রেন চালাতে পারছে না রেল কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রামকক্সবাজার রুটে এক জোড়া আন্ত:নগর ট্রেন চালুর দাবি শুরু থেকেই চট্টগ্রামবাসী করে আসলেও রেল কর্তৃপক্ষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। চট্টগ্রামকক্সবাজার দুই জোড়া কমিউটার ট্রেন চালুর ঘোষণা দেয়ার পরও দুই দফা সময় পিছিয়েছে।

অবশেষে আগামী জুনের মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত চলবে এক জোড়া কমিউটার ট্রেন চালুর কথা জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। একই সাথে আগামী জুনে ঢাকাকক্সবাজার পথে আরও তিন জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা হবে বলে জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। এই ট্রেনগুলোর কোনটি কবে চালু হবে, সেই তারিখ এখনো ঠিক হয়নি।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পরিবহন এবং বাণিজ্যিক বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে কথা হলে তারা আজাদীকে জানান, ঢাকাচট্টগ্রামকক্সবাজার রুটে ট্রেন চালুর পর প্রথম দুই মাসে রেকর্ড পরিমাণ পরিমাণ যাত্রী পরিবহন করেছে এই রুটে চলাচলরত দুটি আন্ত:নগর ট্রেন। রাজস্ব আয়ও হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ, রীতিমত তাক লাগানো। ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ট্রেনে ডিসেম্বর (২০২৩) এবং জানুয়ারি (২০২৪) মাসে যাত্রী পরিবহন করেছে ৮৪ হাজার ৭২২জন। রাজস্ব আয় করেছে ৭ কোটি ৩০ লাখ ৭৫ হাজার। অপরদিকে ‘পর্যটন এক্সপ্রেস’ গত জানুয়ারি মাসে যাত্রী পরিবহন করেছে ১৪ হাজার ৫৪৫ জন। রাজস্ব আয় করেছে ২ কোটি ২৭ লাখ।

কোচ, ইঞ্জিন ও লোকবলের অভাবে যাত্রীদের প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, রেলে এ রুট সবচেয়ে লাভবান। যাত্রীদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে ভবিষ্যতে এই রুটে আরো ট্রেন বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। ঢাকা থেকে কক্সবাজার আন্ত:নগরের পাশাপাশি চট্টগ্রাম থেকে কমিউটার ট্রেনও চলবে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে নতুন ট্রেন চালু এবং চলাচলরত আন্ত:নগর ট্রেনগুলোতে নতুন বগি সংযোজনের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া থেকে নতুন ১৫০ বগি আমদানি করা হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানিকৃত নতুন মিটারগেজ বগির বেশির ভাগই পাহাড়তলী কারখানায় অলস পড়ে আছে। ইঞ্জিন সংকটে হিমশিম খাচ্ছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। ইঞ্জিন সংকটের কারনে নতুন কোন ট্রেন চালু করতে পারছে না রেল কর্তৃপক্ষ। ঢাকাচট্টগ্রাম রুটে রাত্রিকালীন একটি নতুন আন্ত:নগর ট্রেন চালুর প্রস্ততি নিলেও শেষ পর্যন্ত ইঞ্জিন সংকটের কারণে এই উদ্যোগ গত ৫ মাসেও বাস্তবায়ন হয়নি। অপরদিকে চট্টগ্রামসিলেট রুটে এবং চট্টগ্রামচাঁদপুর রুটে দুটি নতুন ট্রেন চালুর সকল প্রস্তুতি নেয়ার পরও ইঞ্জিন সংকটের কারণে গত ৫ মাসেও ট্রেন দুটো চালু করতে পারেনি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল।

এদিকে চট্টগ্রামকক্সবাজার রুটে দুইজোড়া কমিউটার ট্রেন চালুর সকল প্রস্তুতি নেয়ার পরও ইঞ্জিন সংকটে সেটা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত আগামী জুনে চট্টগ্রামকক্সবাজার রুটে এক জোড়া কমিউটার ট্রেন চালু হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা এস এম সলিমুল্লাহ বাহার আজাদীকে জানান, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে নতুন ১৫০টি মিটারগেজ কোচ আমদানি করা হয়েছে। সবগুলো কোচ চলে এসেছে। কোচের তেমন সংকট নেই। ইঞ্জিনের কিছুটা সংকট রয়েছে। নতুন ইঞ্জিনও আমদানির প্রক্রিয়া চলছে। ইঞ্জিনের ব্যবস্থা হলে ঢাকাকক্সবাজার আন্ত:নগর এবং চট্টগ্রামকক্সবাজার কমিউটার ট্রেন চালু হবে।

এই ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রামকক্সবাজার রুটে কমিউটার ট্রেন চালুর ব্যাপারে আমাদের প্রস্তুতি আছে। তবে সেই ব্যাপারে এখনো নির্দেশনা আসেনি। ইঞ্জিনের একটু সংকট আছে। তবে কোচের কোনো সংকট নেই। অনেক নতুন বগি আছে। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে যেগুলো দেশে এসেছেঅনেকগুলো রয়ে গেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রস্তুত শপিংমল ও মার্কেট অপেক্ষা ক্রেতার
পরবর্তী নিবন্ধপ্রতিটি সবজির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা