জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য

৬ লাখ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন আজ ।। কোভিট নেগেটিভ সনদধারী সদস্যরাই অধিবেশনে

আজাদী ডেস্ক | বৃহস্পতিবার , ৩ জুন, ২০২১ at ৫:৫৫ পূর্বাহ্ণ

জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে গত বছরের মতো এবারও সংক্ষিপ্ত হবে এই অধিবেশন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল বুধবার বিকাল ৫টায় একাদশ সংসদের ত্রয়োদশ এই অধিবেশন শুরু হয়। এই অধিবেশনেই আজ বৃহস্পতিবার বিকালে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। করোনা সংকটে জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে তিনি এবার ছয় লাখ কোটি টাকার বাজেট পেশ করবেন। এটি হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা ১৩ তম বাজেট। সামপ্রতিক অন্য অধিবেশনগুলোর মতো এবারও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংসদ চলবে। এক্ষেত্রে কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ থাকা সংসদ সদস্যরাই অধিবেশনে যোগ দিতে পারছেন। প্রতিদিন ১০০-১২০ জন সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে বসবে সংসদের বৈঠক। অধিবেশনের শুরুতে সভাপতিমণ্ডলী মনোনয়ন করেন স্পিকার। এবার অধিবেশনে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা হলেন- শহীদুজ্জামান সরকার, এবি তাজুল ইসলাম, মাজহারুল হক প্রধান, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রুমানা আলী। স্পিকার-ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে এদের মধ্যে অগ্রবর্তীজন অধিবেশনে সভাপতিত্ব করবেন। সভপতিমণ্ডলী মনোনয়নের পর স্পিকার শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
সংসদ সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্য ও বিশিষ্টজনদের পাশাপাশি এবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশ-বিদেশে যারা মারা গেছেন তাদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়। এছাড়া নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে নৌ দুর্ঘটনা, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলায় নিহত, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে ভারত ও বাংলাদেশে হতাহতদের জন্যও শোক প্রকাশ করা হয়। গতকাল বুধবার অর্থমন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী বাজেটে প্রাধিকার পাবে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। ‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’ শিরোনামে এবারের বাজেট প্রস্তুত হয়েছে। সরকারের অতীতের অর্জন এবং উদ্ভূত বর্তমান পরিস্থিতির সমন্বয়ে এবারের বাজেটে সঙ্গত কারণেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য খাতে। পাশাপাশি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্রাকেজসমূহের বাস্তবায়ন, কৃষি খাত, খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনাকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অর্থবছরের পুরো সময়জুড়েই থাকবে সরকারের নানা ধরনের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, বাড়ানো হবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা।
বাজেটকে অধিকতর অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইট www.mof.gov.bd-এ বাজেটের সব তথ্যাদি ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পাঠ ও ডাউনলোড করতে পারবে এবং দেশ বা বিদেশ থেকে ওই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ফিডব্যাক ফরম পূরণ করে বাজেট সম্পর্কে মতামত ও সুপারিশ পাঠানো যাবে। প্রাপ্ত সব মতামত ও সুপারিশ বিবেচনা করা হবে। জাতীয় সংসদ কর্তৃক বাজেট অনুমোদনের সময়ে ও পরে তা কার্যকর করা হবে।
দেশের ইতিহাসে এটা বড় ঘাটতির বাজেট। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় ঘাটতি দাঁড়াচ্ছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মতো। ছয় লাখ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার। এই ব্যয় মেটানো তথা বাজেট বাস্তবায়নের জন্য দুই লাখ কোটি টাকার বেশি ধার নিতে হবে। করোনাভাইরাসের অভিঘাতে দেশে রাজস্ব আদায় কম হওয়ার কারণেই সরকারকে এ পথে যেতে হচ্ছে বলে জানান বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা।
২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকার এডিপি : এবারের বাজেটে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) রাখা হয়েছে। এছাড়াও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা কর্পোরেশনের প্রায় ১১ হাজার ৪৬৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকাও অনুমোদন পেয়েছে। অন্যান্য বছরের মতো এবারও দেশজ সম্পদ, বৈদেশিক অর্থায়ন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, দারিদ্র্য হ্রাস তথা জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে দীর্ঘ ও মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা কৌশল এবং লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জনের জন্য ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের এডিপি প্রণয়ন করা হয়েছে।
নতুন এডিপিতে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ৬১ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা যা মোট এডিপির ২৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এরপরেই বিদ্যুৎখাতে গুরুত্ব দিয়ে ৪৫ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ২৩ হাজার ৪২১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে গৃহায়ণ খাতে। নতুন এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে চতুর্থ স্থানে শিক্ষা ২৩ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা মোট এডিপির ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ। এছাড়া স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৭ হাজার ৩০২ কোটি টাকা, স্থানীয় সরকার বিভাগে ১৪ হাজার ২৭৪, পরিবেশ ও পানি উন্নয়নে ৮ হাজার ৪৭০, কৃষিতে ৭ হাজার ৬৪৬,শিল্পখাতে ৪ হাজার ৬৪৩, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে ৩ হাজার ২০৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। পাবলিক অর্ডার অ্যান্ড সেফটি খাতে ৩ হাজার ২০৪, সাধারণ সেবা খাতে ২ হাজার ৯২৩, সাংস্কৃতিক খাতে ২ হাজার ১৯০, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১ হাজার ৬৪৮ কোটি এবং ডিফেন্স খাতে ৮৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশেই উৎপাদন হবে করোনার টিকা : প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধহাটহাজারী তাণ্ডবের ১০ মামলার তদন্তে ৪ সংস্থা