স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত দোকানপাট ও বিপণিবিতান খোলা রাখার প্রয়াস পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন না করা হলে সরকার আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বলা হয়েছে, শুক্রবার থেকে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত সকাল নয়টা থেকে ৫টা পর্যন্ত আট ঘণ্টা দোকানপাট ও বিপণিবিতান খোলা রাখা যাবে। এছাড়া করোনার টিকা কার্যক্রমও যথারীতি চলবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়। আগামী ১৪ এপ্রিল বুধবার বাংলা নববর্ষ। তাই পহেলা বৈশাখের জন্য ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত বিপণিবিতান ও দোকানপাট খোলা রাখার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর পরে খোলা থাকবে কি না সে বিষয়ে এই প্রজ্ঞাপনে কিছু বলা হয়নি। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ৫ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সাতদিনের বিধিনিষেধ আরোপ করে। এ সময়ে শিল্পকারখানা, সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যাংক স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও দোকানপাট, গণপরিবহন বন্ধ রাখার কথা বলা হয়। যদিও বুধবার থেকে ঢাকাসহ অন্যান্য সিটি করপোরেশনে গণপরিবহন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চালু রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় পয়লা বৈশাখ উদযাপনের আমেজ অনেকটা নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে দোকানপাট ও বিপণিবিতান খুললেও ব্যবসা কতটা হবে, সেটি নিয়ে সন্দেহ আছে। তবে সরকারের সিদ্ধান্তে আপাতত স্বস্তি পেয়েছেন তাঁরা। বৈশাখের চেয়েও ঈদের ব্যবসা নিয়ে বেশি চিন্তিত ব্যবসায়ীরা। এক জরিপের তথ্যানুযায়ী, দেশের ফ্যাশন হাউসে সারা বছরে যে পরিমাণ বিক্রি হয়, তার মধ্যে ৫০ শতাংশই হয় রোজার ঈদে। ২৫ শতাংশ হয় পয়লা বৈশাখে। বাকিটা সারা বছর। সেই হিসাবে রোজায় দোকানপাট খোলা না গেলে অনেকেই বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়বেন। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে জীবন ও জীবিকা দুটোই বাঁচাতে হবে। তাঁরা বলেন, ‘আশা করছি, পবিত্র রমজান মাসেও দোকানপাট ও বিপণিবিতান খোলা থাকবে। আমরা সরকারকে কথা দিচ্ছি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা পরিচালনা করব। কেউ কথা না রাখলে মার্কেট কমিটি ব্যবস্থা নেবে।’
বর্ষবরণ উৎসবটি সর্বজনীন। সব ধর্মের মানুষই উৎসবটি উদযাপনে কেনাকাটা করে। এছাড়া গ্রামগঞ্জ ও শহরে অনেক জায়গায় বৈশাখী মেলা হয়। এতে দেশের আনাচকানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অনেক অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের পণ্যসামগ্রী বিক্রি হয়। দোকানপাট ও বিপণিবিতান খোলার সিদ্ধান্ত হলেও মেলার বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়ার কথা জানায়নি সরকার। ফলে গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা গতবারের মতো এবারও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা গত বছর মার খেয়েছেন। তাঁরা সরকারের কাছ থেকে কোনো ধরনের আর্থিক সহায়তা পাননি। যতটুকু প্রণোদনা দেওয়া হয়েছিল, তা থেকে অল্পই পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গতবারের মতো এবারও যদি তৈরি পোশাকের ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে না পারেন, তাহলে তাঁদের অনেকটা সঞ্চয় শূন্য অবস্থায় এগোতে হবে। সেটি ব্যবসায়ীদের জন্য বড় দুর্যোগের কারণ হবে।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম পত্রিকান্তরে বলেছেন, সরকারের আর্থিক সীমাবদ্ধতার কথা আমরা কমবেশি সবাই জানি। তাই এই মুহূর্তে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দোকানপাট খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে দোকানের কর্মচারী ও ক্রেতাদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে হবে। কেউ যদি সেটি না মানেন, তাহলে অর্থদণ্ডের মতো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি পালন হচ্ছে কি না, সেটি সরকারকে প্রতিনিয়ত তদারকির মধ্যেও রাখতে হবে। যেভাবে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে সরকার যদি বড় ধরনের কোনো পদক্ষেপে যায় তাহলে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখতে হবে। তাঁদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা থাকতে হবে। তবে গতবারের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখেছি, ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের বড় অংশ কোনো ধরনের সহযোগিতা পায়নি। যেহেতু সরকারের পক্ষে পূর্ণাঙ্গ লকডাউন করা সম্ভব নয়, সেহেতু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু রেখেই বিকল্প ভাবতে হবে।