বহমান জীবন যেন রঙিন বেলোয়ারী চুড়ি। এই নিত্যদিনের আনন্দ যজ্ঞে টুং টাং মিষ্টি সুরে বাজে। বেসামাল হলেই ঝন ঝন শব্দে খান খান হয়। ছোটবেলায় নানার হাত ধরে গ্রামের মেলায় যেতাম। লাল বাতাসা আর সাদা কদমার মধুর স্বাদ মুখে দিতেই মিলিয়ে যেতো। আহা! কি স্বপ্নময় জীবন। কিন্তু সময়ের গ্রোতে জীবন পাল্টাতে থাকে। আশা নিরাশা, সুখ দুঃখ, আনন্দ বেদনা, প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি ইত্যাদি পজিটিভ নেগেটিভ বিশেষণগুলি একে একে ঘুড়ি লাটাইয়ের সূতোয় যোগ দেয়। বাতাসের টানে টানে ঘুড়ি আকাশে পতপত উড়ে অথবা উল্টো বাতাসে ধপাস পড়ে মাটিতে লুটোপুটি খায়। আবার নতুন করে ঘুড়ি বানাতে হয়, শক্ত করে সূতোয় মাঞ্জা দিতে হয়। এই তো জীবন! হিংসা, অহংকার, পরশ্রীকাতরতা, তিরষ্কার, গিবত.. পরগাছার মতো সহাস্য ভালোবাসায় জড়াতে চায়। তাদেরকে জোর করেই দূরে সরিয়ে দিতে হয়। বহু জ্ঞানী গুনী ব্যক্তি, মনীষীরা জীবন নিয়ে নানা কথা বলেন। কিন্ত যার যার জীবন তার তার। প্রত্যেকের আলাদা জীবনবোধ আছে। একবার জীবন চলে গেলে তা আর ফিরে পাওয়া যায় না। তাই এই এক জীবনেই ভালো মন্দ কাজের দায় নিজেকেই নিতে হবে। বাস্তব জীবন আনন্দ নিরানন্দেরই মিশ্রণ। বস্তু সম্পর্ক এবং ব্যক্তি সম্পর্ককে প্রাধান্য দিতে গিয়ে আমরা সাধারণ মানুষেরা একই বৃত্তে ঘুরতে থাকি। সেখানে ‘অহম’ বা আমিত্ববোধ স্বার্থপর করে তুলে। জীবনের শেষ লগ্নে এসে জরা, ব্যাধি, রোগ, শোক, অনিবার্য মৃত্যু লতাগুল্মের মতো জড়িয়ে ধরে। তখন পিছন ফিরে তাকালে দেখা যাবে, অপূর্ণতা, অতৃপ্তি আর হাহাকারের দীর্ঘশ্বাস। আধ্যাত্মিক কবি জালাল উদ্দীন রুমি বলেছেন,’অসময়ের আমি অভিশাপ,সময়ের আমি আশীর্বাদ’। মাটির গন্ধ নিতে হলে, ভালোবেসে মাটির একেবারে কাছে যেতে হবে। ‘আমি’র বাঁধন ছিঁড়ে মানুষের মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারলেই ঘটবে মোহ থেকে মুক্তি। তৃষ্ণার্ত হৃদয় হবে শান্ত। জগতের এই আনন্দ যজ্ঞ আলোর নিনাদে ভেসে যাবে। সত্যি জীবন যেন এক জলে ভাসা পদ্ম।