বঙ্গোপসাগরের একমাত্র জীবন্ত জীবাশ্ম হর্সশো ক্র্যাব বা রাজকাঁকড়াকে ঘিরে দেশের সুনীল অর্থনীতিতে জেগেছে নতুন স্বপ্ন ও সম্ভাবনা। ইতোমধ্যে এ প্রাণীর ওষুধি গুণাগুণ কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনৈতিক ও জৈবপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে দেশে প্রথমবারের মতো গবেষণা শুরু হয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট ও বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে মানুষের আচরণের কারণে দেশের এ মূল্যবান প্রাণীটি প্রকৃতিতে পড়েছে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে।প্রতি মাসে হাজার হাজার রাজকাঁকড়া মারা পড়ছে জেলেদের জালে। এ প্রাণী রক্ষায় গণসচেতনতা গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে আজ ২০ জুন প্রথমবারের মতো দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে পালন করা হচ্ছে তৃতীয় ইন্টারন্যাশনাল হর্সশো ক্র্যাব ডে বা বিশ্ব রাজকাঁকড়া দিবস।
চিকিৎসা শাস্ত্রে রাজ কাঁকড়ার নীল রক্ত এক যাদুকরী বৈপ্ল্লবিক পরিবর্তন এনেছে। এছাড়া এর শরীরের পেছনে থাকা ছোট্ট লেজটি দিয়ে তৈরি করা হয় ক্যান্সারের মহা ওষুধ। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে একেকটি রাজ কাঁকড়ার দাম পনের থেকে বিশ লাখ টাকা। এর এক গ্যালন রক্তের দাম অন্তত ৭০ হাজার মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় হয় প্রায় ৬৫ লাখ টাকা। সম্প্রতি করোনা ভ্যাকসিন তৈরিতেও রাজ কাঁকড়ার নীল রক্ত ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে বিশ্বব্যাপী প্রাণীটি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে পড়েছে। প্রাণীটিকে বাঁচাতে ২০২০ সালের ২০ জুন থেকে এই দিবসটি আন্তর্জাতিকভাবে পালন করা হচ্ছে।
এক সময় দেশের বঙ্গোপসাগর উপকূলে রাজকাঁকড়ার ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যেত। কিন্তু ধীরে ধীরে এর প্রাচুর্য কমে আসে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন উপকূলের নদী ও নদী মোহনায় অবৈধভাবে বসানো বিহিন্দি জালে প্রতিদিন হাজার হাজার রাজকাঁকড়া আটকা পড়ার পর মারা পড়ছে বলে জানান রাজকাঁকড়া রক্ষায় গঠিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘হর্সশো ক্র্যাব কনজার্ভেশন গ্রুপ, বাংলাদেশ’।
রাজকাঁকড়ার মূল্যবান ওষুধী গুণাগুণ কাজে লাগিয়ে দেশের সুনীল অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করার জন্য দেশে প্রথমবারের মতো গবেষণা শুরু করেছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট ও বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীরা। ইতোমধ্যে গবেষণা শুরুর পর এক বছরের কাছাকাছি সময় অতিবাহিত হয়েছে এবং এই গবেষণার ফলাফল সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীদেরকে অত্যন্ত আশাবাদী করে তুলেছে বলে জানান বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব), সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর।