স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদী সম্পাদক, একুশে পদকপ্রাপ্ত সংবাদ ব্যক্তিত্ব এম এ মালেক বলেছেন, শিশুদের মাঝে যে অগ্নিশিখা লুকিয়ে আছে, তাকে জাগরিত করার নামই শিক্ষা। আর শৈশবের নিষ্কলুষ চরিত্র পরিণত বয়সেও যদি ধরে রাখা যায় তাহলে একটি জাতি এগিয়ে যেতে পারে।
গতকাল সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ওরিয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন। আজাদী সম্পাদক বলেন, অনুষ্ঠানে বারবার আমার নামের আগে একুশে পদকপ্রাপ্তির কথা বলা হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এ পদক প্রাপ্তি আমার জীবনের সেরা স্বীকৃতি। আমি আজাদীকে এতদূর নিয়ে আসতে গিয়ে একটা বিষয় শিখেছি। তা হলো, আপনি যে কাজই করুন না কেন সাফল্যের সহজ কোনো পথ নাই। যদি লেগে থাকেন তবে একদিন না একদিন আপনি ঠিক সফল হবেন। আর একুশে পদকপ্রাপ্তি হচ্ছে ‘লেগে থাকার’ স্বীকৃতি। আমার বাবা চেয়েছিলেন আজাদী হবে চট্টগ্রামের মাটি ও মানুষের পত্রিকা। আমি বাবার কথা রাখতেই আজাদীকে ঢাকা থেকে প্রকাশ করতে ইচ্ছুক নই। আজ চট্টগ্রাম এবং দৈনিক আজাদী অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। চট্টগ্রামের মাটি ও মানুষের মুখপত্র হিসেবে আজাদী আজ অনন্য।
একুশের সাথে নিজের পরিবারের সম্পৃক্ততার বিষয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ১৯৫২ সালে যখন ভাষা আন্দোলন হলো, এ নিয়ে কবিতা লিখেছিলেন কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরী। তাঁর সেই বিখ্যাত কবিতা ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’। এই কবিতা কিন্তু সেই রাতেই আমার বাবার তত্ত্বাবধানে আমাদের প্রেস থেকেই ছাপা হয়েছিল। এটা আরেকটা ঐতিহাসিক ঘটনা। এই কাজের জন্য মূল্য দিতে হয় আমাদের। গ্রেপ্তার করা হয় প্রেসের ম্যানেজারকে। ছয় বছরের সাজা হয় তার। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পর মুক্তি পান তিনি। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন একটি লাল–সবুজ পতাকা। আমৃত্যু এ পতাকার মান যেন ধরে রাখতে পারি, সে দোয়াই করবেন।
শিশুদের উদ্দেশে তিনি বলেন, জীবনে ভবিষ্যৎ বলে কিছু নেই। সবটাই বর্তমান। জীবনের প্রত্যেকটা মুহূর্ত তাই উপভোগ করতে শেখো। আমরা নিজেকে বদলাতে চাই না, বিশ্বকে বদলে দিতে চাই। শিক্ষকের মর্যাদা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি শিশুদের উদ্দেশে বলেন, তোমার উন্নতি ছাড়া আর কিছুই চাইবে না এমন লোকের সংখ্যা পৃথিবীতে মাত্র তিনজন। এরা হচ্ছেন মা, বাবা ও শিক্ষক। যেদিন তুমি সফল হয়ে বা বড় কোনো অফিসার হয়ে তাদের কাছে যাবে তারা বুকে জড়িয়ে ধরে বলবে, আরও বড় হও। কোনোদিন শিক্ষককে অবহেলা করবে না। তোমাকে অ, আ এই শিক্ষকই শিখিয়েছেন। তোমার আরম্ভ সেখানে।
প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান কে এম মোস্তফা রেজাউল মনিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রফেসর (আনবিক শক্তি কমিশন) ডা. সাজ্জাদ হোসেন, চবি লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম, ঢাকা ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট কাজী জসিম উদ্দিন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তায়্যাব হোসেন এবং সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের সিনিয়র লেকচারার ডা. নাহিন চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) কাজী আশরাফ উদ্দিন আহমেদ। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ সুরাইয়া আক্তারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠান পরিচালিত হয়। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষিকা শারমিন আক্তার হিলারি ও শায়েরা জাহান।