জীবনধর্মী ভাল চলচ্চিত্র নির্মাণ করুন : প্রধানমন্ত্রী

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২১ প্রদান

| শুক্রবার , ১০ মার্চ, ২০২৩ at ৫:০৯ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জীবনমুখী ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, একটি চলচ্চিত্র ব্যক্তির জীবন যেমন পরিবর্তন করতে পারে, তেমনি একটি সমাজকেও বদলে দিতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা লক্ষ্য করবেন জীবন ধর্মী চলচ্চিত্র যখন নির্মাণ করা হয় সেগুলো কিন্তু মানুষকে সবথেকে বেশি আকর্ষণ করে। কারণ মানুষ তার জীবনের প্রতিচ্ছবিটা সেখান থেকে পায়। আবার একটা সিনেমা পারে মানুষের জীবন পাল্টে দিতে বা সমাজের চিত্রটা পাল্টে দিতে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় আয়োজিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার২০২১ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। জীবনধর্মী সৃষ্টির গ্রহণযোগ্যতা সর্বত্র উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিনেমা, নাটক সবক্ষেত্রেই অবদান রাখে, মানুষের চিন্তা চেতনার আরো উৎকর্ষতা ঘটাতে পারে এবং মানুষকে অন্যায়অপরাধ থেকে দূরে রাখতে পারে। তিনি বলেন, যারা আমাদের শিল্পীসাহিত্যিক, যারা সাহিত্য রচনা করেন এবং যাদের রচনার ওপর ভিত্তি করেই সিনেমা হয় তারাও যদি এরকম জীবনধর্মী রচনা তৈরী করেন, নাটক তৈরী করেন বা সাহিত্য তৈরী করেন আর তার ওপর ভিত্তি করে যদি সিনেমাগুলো হয় সেটা আমাদের সমাজটাকে অরো এগিয়ে নিয়ে যাবে। খবর বাসসের।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৭টি ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার২০২১ বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের মাঝে তিনি পুরস্কার

প্রদান করেন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মো. হুমায়ুন কবির খন্দকার। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং পুরস্কার প্রাপ্তদের পক্ষে আজীবন সম্মাননা প্রাপ্ত অভিনেত্রী ডলি জহুর বক্তব্য রাখেন।

এর আগে এ বছর ২৯ জানুয়ারি এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ২৭ ক্যাটাগরিতে ৩৪টি পুরস্কার প্রদানের ঘোষণা দেয়। চলচ্চিত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখায় এ বছর যৌথভাবে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন অভিনেত্রী ডলি জহুর ও অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র যৌথভাবে ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ ও ‘নোনাজলের কাব্য’; শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ধর’, শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র কাওসার চৌধুরীর (বধ্যভূমিতে একদিন), শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত (নোনাজলের কাব্য) পুরস্কার লাভ করেছে।

জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশব ও কৈশোরের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য ঘটনা নিয়ে চিত্রায়িত ‘টুঙ্গিপাড়ার মিয়াভাই’ চলচ্চিত্রটি মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে বিশেষ সম্মাননা লাভ করে। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার লাভ করেছেন যৌথভাবে মো. সিয়াম আহমেদ (মৃধা বনাম মৃধা) ও মীর সাব্বির মাহমুদ (রাতজাগা ফুল)। এছাড়া পুরস্কার লাভ করেছেন, শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী যৌথভাবে আজমেরী হক বাঁধন (রেহানা মরিয়ম নূর) ও তাসনোভা তামান্না (নোনাজলের কাব্য); পার্শ্ব চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা এম ফজলুর রহমান বাবু (নোনাজলের কাব্য), শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পার্শ্ব চরিত্রে শম্পা রেজা (পদ্মপুরাণ); শ্রেষ্ঠ অভিনেতা খল চরিত্রে মো. আবদুল মান্নান জয়রাজ (লাল মোরগের ঝুঁটি)। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা কৌতুক চরিত্রে প্রভাষ কুমার ভট্টাচার্য মিলন (মৃধা বনাম মৃধা), শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী আফিয়া তাবাসসুম (রেহানা মরিয়ম নূর), শিশুশিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার জান্নাতুল মাওয়া ঝিলিক (যা হারিয়ে যায়)

গানের জগতে শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম (যৈবতী কন্যার মন), শ্রেষ্ঠ গায়ক কে. এম. আবদুল্লাহআলমুর্তজা মুহিন (শোনাতে এসেছি আজপদ্মপুরাণ), শ্রেষ্ঠ গায়িকা চন্দনা মজুমদার (দেখলে ছবি পাগল হবিপদ্মপুরাণ), শ্রেষ্ঠ গীতিকার প্রয়াত গাজী মাজহারুল আনোয়ার (অন্তরে অন্তর জ্বালাযৈবতী কন্যার মন), শ্রেষ্ঠ সুরকার সুজেয় শ্যাম (অন্তরে অন্তর জ্বালাযৈবতী কন্যার মন), শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত (নোনাজলের কাব্য), শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার নূরুল আলম আতিক (লাল মোরগের ঝুঁটি), শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা তৌকীর আহমেদ (স্ফুলিঙ্গ) পুরস্কার লাভ করেছেন।

আরো পুরস্কার পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ সম্পাদক সামির আহমেদ (লাল মোরগের ঝুঁটি), শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক শিহাব নূরুন নবী (নোনাজলের কাব্য), শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক দলগতসৈয়দ কাশেফ শাহবাজি, সুমন কুমার সরকার, মাজহারুল ইসলাম রাজু (লাল মোরগের ঝুঁটি), শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক শৈব তালুকদার (রেহানা মরিয়ম নূর), শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা ইদিলা কাছরিন ফরিদ (নোনাজলের কাব্য)। শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান দলগতমো. ফারুখ, মো. ফরহাদ রেজা মিলন (লাল মোরগের ঝুঁটি)

পুরস্কার হিসেবে নির্বাচিত সবাইকে দেয়া হয়েছে ১৮ ক্যারেট মানের ১৫ গ্রাম ওজনের স্বর্ণ দিয়ে তৈরি একটি পদক, পদকের একটি রেপ্লিকা ও এককালীন নির্ধারিত পরিমাণ সম্মানী ও সম্মাননাপত্র। আজীবন সম্মাননার জন্য ৩ লাখ, শ্রেষ্ঠ পূর্ণদের্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রযোজক, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালকের জন্য ২ লাখ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে দেয়া হয় ১ লাখ টাকা।

এবারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদানের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ১৩ সদস্যের জুরি বোর্ড গঠন করে। ২০২১ সালের মুক্তিপ্রাপ্ত ২১টি পূর্ণদের্ঘ্য, ১৭টি স্বল্পদৈর্ঘ্য ও ৭টি প্রামাণ্য চলচ্চিত্রসহ মোট ৪৫টি চলচ্চিত্র থেকে বাছাই করা হয় এবারের বিজয়ীদের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনগরীর কোনো সড়ক কাঁচা থাকবে না : মেয়র
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬