জীবন অমূল্য। প্রতিটি মানব জীবন সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে পাওয়া এক শ্রেষ্ঠ উপহার। এ ধরণীতে প্রতিটি প্রাণের আর্বিভাব হয় অপার সম্ভাবনা নিয়ে। তবে জীবন সর্ম্পকে সবার উপলব্ধি এক নয়, ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন হয়। জীবন সর্ম্পকে চমকপ্রদ সংজ্ঞা দিয়েছেন ইতিহাসের কুখ্যাত শাসক হিসেবে পরিচিত অ্যাডলফ হিটলার। তিনি বলেন,‘জীবন হলো আয়নার মতো। তুমি ভেংচি কাটলে এটা তোমাকে ভেঙ্গাবে, তুমি হাসলে এটি তোমাকে অভিবাদন জানাবে।’ জীবন সর্ম্পকে মানুষের উপলব্ধিতে ভিন্নতা থাকলেও একথা সত্যি যে, শুধুমাত্র দিন যাপন করার নাম জীবন হতে পারে না। জীবনকে উপভোগ করতে জানতে হয়, উদযাপন করতে জানতে হয়। রাতের আকাশে চাঁদ সবার কাছে দৃশ্যমান হলেও চাঁদের সৌন্দর্য সবাই উপলব্ধি করতে পারে না। অনেকে মনে করেন, কেবল অর্থ ও প্রাচুর্য থাকলেই জীবনকে উপভোগ করা যায়। জীবনে চলার পথে অর্থের প্রয়োজন আছে ঠিকই কিন্তু তা মানুষের জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি আনয়নে নিশ্চয়তা দিতে পারে না। যদি তাই হতো তাহলে পৃথিবীতে কেবল ধনীরা সুখী মানুষ হিসেবে গণ্য হতো! কিন্তু বাস্তবতা তা বলে না। প্রকৃতপক্ষে জীবনকে উদযাপন করতে হলে প্রয়োজন জীবনকে কর্মময় করে গড়ে তোলা। একজন কর্মবীর নিজেকে আলোকিত করার পাশাপাশি অন্যকেও আলোকিত করেন, সমাজে সমৃদ্ধি আনেন।
স্কাউট আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ব্যাডেন পাওয়েল বলেন, ‘পৃথিবীটাকে যেমন পেয়েছো তার চেয়ে আরো একটু ভালোভাবে রেখে যেতে চেষ্টা করো।’ একজন সমৃদ্ধ মানুষ অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপনের পাশাপাশি নিজের মৃত্যু সংবাদকেও অর্থবহ করে তোলেন অন্যের কাছে! তাই হয়তো কবি মানব জাতির উদ্দেশ্য বলে গেছেন, ‘এমন জীবন তুমি করিবে গঠন, মরণে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভুবন।’ মানব জীবন কুসুমাস্তীর্ণ নয়। জীবনে দুঃখ–দুর্দশা, জরা–ব্যাধি, হতাশা –ব্যর্থতা থাকবেই। প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। বাস্তবতা যেমন হোক তাকে মেনে নিতে পারলে জীবন সবসময় সুন্দর হয়। এ বিষয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপলব্ধি, ‘শত আঘাতের পরেও হাসিমুখে পথ চলার নামই জীবন।’ প্রতিটি মানুষের উচিত জীবনকে অর্থবহ করে তোলার চেষ্টা করা। স্বামী বিবেকানন্দ তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘হে বীর হৃদয় যুবক–যুবতীগণ তোমরা বিশ্বাস কর যে, মহৎ কিছু করার জন্যই তোমরা এ পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেছ।’ মানুষ মূলত মহৎ হয়ে ওঠে জন্ম বা বংশ থেকে নয়, কর্ম থেকে। তাই মানুষের ভেতর লুকিয়ে থাকা মেধা ও প্রতিভাকে কাজে লাগাতে হবে নিজেকে বিকশিত করার জন্য, অন্যের মঙ্গলের জন্য। এককথায় ভালো কাজের মধ্য দিয়েই জীবনকে অর্থবহ করে তুলতে হবে, ভালো কাজের মধ্য দিয়ে জীবনকে উপভোগ ও উদয়াপন করতে হবে। তাতেই হয়তো নিহিত থাকে জীবনের গৌরব।