নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকায় খুন হওয়া কোরআনে হাফেজ জোনায়েদ হোসেন জিসান (২১) হত্যার মূল আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ৫ এপ্রিল রাতে কোতোয়ালী থানাধীন ডিসি হিল এলাকা থেকে খুনি মেশকাতুর রহমান মেশকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। মেশকাত আনোয়ারা উপজেলার পীরখাইন পূর্বপাড়া ৯ নম্বর ওয়ার্ড নাগু মাস্টারের বাড়ির মিজানুর রহমানের সন্তান।
বায়েজিদ থানার ওসি সঞ্জয় সিনহা বলেন, মেশকাত ভবঘুরে প্রকৃতির যুবক। এক বন্ধুর মাধ্যমে জিসানের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে জিসান তার পারিবারিক সচ্ছলতাসহ বিভিন্ন বিষয় মেশকাতের সঙ্গে আলাপ করতেন। যার কারণে মেশকাত তার কাছ থেকে টাকা আদায় করার ফন্দি আঁটে। তিনি বলেন, যে বাসা থেকে জুনায়েদ হোসেন জিসানের লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল, সেটি তার বন্ধুদের ভাড়া করা বাসা ছিল। সে বাসায় মেশকাত না থাকলেও সেখানে তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। গত ১ এপ্রিল জিসান বাসাটিতে যাবার পর মেশকাত তাকে ঘুমের ওষুধ মেশানো পানীয় খেতে দিয়েছিল। সেটি খাওয়ার পর জিসান দুর্বল হয়ে গেলে তাকে বাথরুমের ভেতর ঢুকিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। পরে শ্বাসরোধ করে তাকে খুন করে রাত ৯টার দিকে বের হয়ে যায়। পরবর্তীতে আবার এসে জিসানের গলা চেপে ধরে। পরে তার মোবাইল নিয়ে ঘরে তালা দিয়ে চলে যায়। ওসি সঞ্জয় জানান, মেশকাত পরে জিসানের নম্বর থেকে তার মাকে ফোন করে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। সেই কল রেকর্ডটি ওই বাসার অন্য একজনকে শোনালে তিনি কণ্ঠটিকে মেশকাতের বলে শনাক্ত করেন। গ্রেপ্তার মেশকাতকে আদালতে পাঠানো হয়েছে এবং তার কাছ থেকে আরও তথ্য জানতে রিমান্ডের আবেদন করা হবে বলে জানান ওসি সঞ্জয়।
ভিডিও ফুটেজে যা ধরা পড়ল : গত ১ এপ্রিল জোনায়েদ হোসেন জিসান হাজিরপুল ইলিয়াছ কলোনীর সওদাগর কলোনীর আবদুল করিমের ভাড়া ঘরের ১৪ নম্বরের কক্ষে খুন হন। এ ঘটনায় তার মা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর ঘটনাস্থলে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে পুলিশ। ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় অভিযুক্ত মেশকাতুর রহমান মেশকাত আগে থেকেই আবদুল করিমের ভাড়া ঘরের ১৪ নম্বর কক্ষে অবস্থান করছিল। জিসান ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বাসায় আসলে মেশকাত ভেতর থেকে দরজা খুলে দেয়। সন্ধ্যা ৭টা ৫৭ মিনিটে তারা দুইজন একই সাথে রুম থেকে বের হয়। পুনরায় ৮ টা ১ মিনিটে ওই রুমে প্রবেশ করে। রাত ৯টা ৭ মিনিটের সময় অভিযুক্ত মেশকাত রুম থেকে বের হয় এবং দরজা বন্ধ করে চলে যায়। রাত ৯টা ১০ মিনিটের সময় মেশকাত দৌঁড়ে এসে রুমের তালা খুলে রুমে প্রবেশ করে। প্রায় ১ ঘণ্টা পর রুম থেকে সে বের হয় এবং দরজা তালাবন্ধ করে চলে যায়।
যেভাবে খুন : স্থানীয় একটি দোকান থেকে ঘুমের ওষুধ কিনে ও হাজীরপুল মাবিয়া স্টোর থেকে পানীয় (মাঠা) কিনে মেশকাত বাসায় এসে জোনায়েদকে খেতে দেয়। ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত পানীয় পান করার পর শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়লে তাকে ধাক্কা দিয়ে বাথরুমে ফেলে দেয়। এরপর পিঠের উপর বসে দুই হাত দিয়ে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে জোনায়েদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে তার মাকে কল করে জোনায়েদকে ফেরত পেতে হলে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
বায়েজিদ বোস্তামী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার বেলায়েত হোসেন বলেন, আমরা মূলত মোবাইল ফোন এবং মুক্তিপণের অডিও রেকর্ডের সূত্র ধরে খুনির কাছাকাছি পৌঁছাই। এছাড়া তাদের আরেক রুমমেটের তথ্য যাছাই করে মেশকাতুর রহমান মেশকাতকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হই। পরে প্রযুক্তির সহযোগিতায় তার অবস্থান শনাক্ত করে ধরা হয়।