জিনাত আপা স্মরণে

সৈয়দা সেলিমা আক্তার | বুধবার , ২৫ জুন, ২০২৫ at ৭:৩০ পূর্বাহ্ণ

মিলনায়তনে ঢোকামাত্র মানিপ্ল্যান্টের টবে পানি দিয়ে তারপর সবার সাথে কুশল বিনিময় করে সিটে বসতেন তিনি। সব গোছানো, পরিপাটি, হাতে থাকতো ফাইল, লেখিকা সংঘের খাতা এসব। সম্পাদক হিসেবে আমি আমার খাতাটা মেইনটেইন করে যেতাম। তিনি পুরনো অভ্যাসবশত নিজেও খাতা মেইনটেন করতেন। দীর্ঘদিন যাবত সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকায় তার কাজেকথায় এর ছাপ থাকতো। আমার ওপর সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়ে তিনি আস্থাশীল ছিলেন। মাঝে মাঝে বলতেন, তোমাদের ওপর দায়িত্ব দিয়ে আমি নির্ভার হতে চাই। এই তো কিছুদিন আগে প্রকাশনা উৎসব হয়ে গেলো চারজন লেখিকার। পূর্বিতা ম্যাগাজিনে কবিতার বিভাগ আমাকে দেখতে দিয়েছিলেন। আপা গল্পের সাইড দেখছিলেন। তখন দেশের ক্রান্তিকাল। ২০২৪ এর ডামাঢোলের ভেতর আলোর মুখ দেখে পূর্বিতা। সবচে বেশি সম্পাদনা করার রেকর্ড ছিলে আপার। যেসব সংগঠনে ছিলেন হোক সামাজিক কিংবা সাহিত্য সংগঠন আপা সিরিয়াসলি কাজ করতেন। একবার হুইলচেয়ার দিতে গিয়ে হাত ভেঙে ফেলেছিলেন। অনেকদিন সক্রিয় থাকতে পারেন নি। ভেতরে ভেতরে সবসময় দান সাদকাহ্‌ করতেন। যত কাজ থাক নামাজ ঠিক রাখতেন। তখনও দায়িত্ব পাইনি। মাঝে মাঝে আমাকে খাতাটা দিতেন। অনেকসময় একা অনুষ্ঠান পরিচালনার কথা বলতেন। বলা চলে হাতেকলমে সাংগঠনিক শিক্ষা পেয়েছি। আমার নির্বাচিত ছড়াবইটা পাঁচজনকে উৎসর্গ করেছি তন্মধ্যে প্রথম নামটা ছিলো আপার। সে গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব ও আমাদের যুগল জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আপা উপস্থিত ছিলেন। টিটুর জন্মস্মারকবইয়েও আপা লেখা দিয়েছিলেন।

আমার আম্মাকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন খালেদা আউয়াল ভাবীর সাথে। সেবার লেখিকা সংঘের মিটিংয়ে আম্মার জন্য দোয়াও করেছিলেন আপা। মুহাম্মাদ আলীশাহ্‌ গ্রন্থাগারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আপা এসেছিলেন। রাশেদ ভাই আর জিনাত আপা ঘুরে গিয়েছিলেন এ বাড়ি। এটি সেরা স্মৃতির একটা। আপা আমাদের রাদিয়া প্রকাশন থেকে রম্য গল্প নজরআলীর সাতকাহনবইমেলায় প্রকাশ করেছিলেন ।

আপা আমাকে যেমন নির্ভর করতেন আমিও আপাকে ছায়াবৃক্ষ হিসেবে জানতাম। ফাহমিদা আপার পর জিনাত আপা যাকে আমি বড় আপা ডাকতাম। লেখিকা সংঘের আয়েশা আপার ফোন পেলাম, রোজি ভাবী (আপার ছোটবোন) বললেন ধোয়ানোর পর যেতে। ভাবীও কাঁদছেন ওপাশে এদিকে আমিও। আমার হাত পা চলে না। কাজে মন দিতে পারছিলাম না। এ্যাম্বুলেন্সে আপা বাক্সবন্দি একপাশে তাকিয়ে আছেন। ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে চশমার গ্লাস, ঝাপসা আমার দুচোখ। ভালোবাসার মানুষ পার্থিব জগৎ ছেড়ে অপার্থিব জগতে চলে যাচ্ছেন। হাত ধরে পাশাপাশি বসা হবে না লেখিকা সংঘে। আপা আর বলবে না, অনুষ্ঠান শুরু করে দাও সেলিমা। শোক জানানোর ভাষা নেই শুধু চাইবো স্বজন পরিবারকে আল্লাহ্‌ ধৈর্য দিন। আপাকে আল্লাহ্‌ জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করুন। আমিন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতমাতুঙ্গীর সৌন্দর্যে মুগ্ধ আমি
পরবর্তী নিবন্ধদূরের টানে বাহির পানে