জিওবি ফান্ডের ২৫ শতাংশ ব্যয় কমছে সাত প্রকল্পে

সিটি কর্পোরেশন ও ওয়াসা

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৪ জুলাই, ২০২২ at ৫:২০ পূর্বাহ্ণ

চলতি অর্থবছরে (২০২২-২০২৩) চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ও চট্টগ্রাম ওয়াসার পৃথক সাতটি প্রকল্পে সরকারি সহায়তা বা জিওবি ফান্ডের ২৫ শতাংশ ব্যয় কমানো হচ্ছে। ‘বি’ ক্যাটাগরির এসব প্রকল্প বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত (এডিপি)। চলতি অর্থবছরে প্রকল্পগুলোর জন্য এডিপিতে বরাদ্দ প্রস্তাব আছে ১ হাজার ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ব্যয় কমলে প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ব্যয় কমলেও প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে (২০২২-২০২৩) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত প্রকল্পে ব্যয় কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে প্রকল্পসমূহের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে তালিকাও প্রস্তুত করা হয়। তালিকায় প্রকল্পগুলোকে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়। বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের লক্ষ্যে এবং সীমিত সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে ক্যাটাগরি নির্ধারণ করা হয়েছে উল্লেখ করে গত ৩ জুলাই একটি পরিপত্রও জারি করেছে অর্থ বিভাগ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ‘এ’ ক্যাটাগরি চিহ্নিত প্রকল্পসমূহ যথানিয়মে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন অব্যাহত থাকবে। ‘বি’ ক্যাটাগরির প্রকল্পসমূহের ক্ষেত্রে জিওবি অংশের ২৫ শতাংশ সংরক্ষিত রেখে অনূর্ধ্ব ৭৫ শতাংশ ব্যয় করা যাবে। এছাড়া সিদ্ধান্ত হয়েছে ‘সি’ ক্যাটাগরি প্রকল্পসমূহের অর্থ ছাড় আপাতত স্থগিত থাকবে। তবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন অনুসারে ‘সি’ ক্যাটাগরি প্রকল্পসমূহে বরাদ্দকৃত অর্থ পুনঃউপযোজনের মাধ্যমে (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশন ও অর্থ বিভাগের পূর্বানুমতি গ্রহণপূর্বক) ‘এ’ ক্যাটাগরি চিহ্নিত প্রকল্পসমূহে ব্যয় করতে পারবে। এদিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতায় চট্টগ্রামসহ সারা দেশে বিভিন্ন সংস্থার বাস্তবায়নাধীন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত প্রকল্পগুলোর একটি তালিকা করা হয়েছে। ওই তালিকায় ‘এ’ ক্যাটাগরির প্রকল্প আছে ৬৭টি। এর মধ্যে চসিকের প্রকল্প আছে মাত্র একটি। এছাড়া তালিকায় ‘বি’ ক্যাটাগরির প্রকল্প রয়েছে ১৪৪টি। এর মধ্যে চসিকের চারটি এবং ওয়াসার প্রকল্প আছে তিনটি। অর্থাৎ চসিক ও ওয়াসার ‘বি’ ক্যাটাগরির সাতটি প্রকল্পে জিওবি ফান্ডের অংশের ২৫ শতাংশ সংরক্ষিত রেখে অনুর্ধ্ব ৭৫ শতাংশ ব্যয় করা যাবে।
এ বিষয়ে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার ব্যয় সংকোচন নীতিমালা বাস্তবায়ন করছে। এর অংশ হিসেবে সম্পূর্ণ জিওবি ফান্ডের প্রকল্পে আপাতত ২৫ শতাংশ ছাড় হবে না। এতে প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা হবে না। প্রকল্পেও কোনো জটিলতা তৈরি হবে না। কারণ একেবারে ফান্ড বন্ধ থাকবে, বিষয়টি তেমন না। ফান্ড দিবে। হয়তো পরে দিবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওয়াসার এক প্রকৌশলী বলেন, যথাসময়ে বরাদ্দ না পেলে কাজে গতি কমবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হবে। তবে দেরিতে হলেও প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
চসিকের চার প্রকল্প : স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তালিকা অনুযায়ী ‘বি’ ক্যাটাগরিতে থাকা চসিকের চার প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ২৩১ কোটি ৪২ লাখ ৬৮ হাজার টাকার পরিচ্ছন্নকর্মী নিবাস নির্মাণ প্রকল্প। প্রকল্পের জিওবি ফান্ড হচ্ছে ১৮৫ কোটি ১৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরে এডিপি বরাদ্দ প্রস্তাব রয়েছে ৬০ কোটি টাকা।
রয়েছে ২৬০ কোটি ৮৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকার ‘মর্ডানাইজেশন অব সিটি স্ট্রিট লাইট সিস্টেম অ্যাট ডিফারেন্স এরিয়া আন্ডার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন’ শীর্ষক এলইডি বাতি স্থাপন প্রকল্প। প্রকল্পের জিওবি ফান্ড হচ্ছে ৪৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। প্রকল্পটিতে ঠিকাদার নিয়োগ পর্যায়ে আছে। তৃতীয় প্রকল্প হচ্ছে ১ হাজার ৩২৬ কোটি ৬২ লাখ টাকার বহদ্দারহাট থেকে বারইপাড়া পর্যন্ত নতুন খাল খনন প্রকল্প, যার পুরোটাই জিওবি ফান্ডের। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরে এডিপি বরাদ্দ প্রস্তাব রয়েছে ১৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
চসিকের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রকল্পখ্যাত ২ হাজার ৪৯০ কোটি ৯৬ লাখ ৬৯ হাজার টাকার ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়কসমূহ উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটিও রয়েছে তালিকায়। প্রকল্পের পুরোটাই জিওবি ফান্ডের। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরে এডিপি বরাদ্দ প্রস্তাব রয়েছে ৫০২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
ওয়াসার তিন প্রকল্প : তালিকায় থাকা ওয়াসার তিন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ১ হাজার ৯৯৪ কোটি ১৪ লাখ টাকার ভাণ্ডালজুড়ি পাানি সরবরাহ প্রকল্প। প্রকল্পের জিওবি ফান্ড হচ্ছে ৭৫০ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরে এডিপি বরাদ্দ প্রস্তাব রয়েছে ১২০ কোটি।
এছাড়া ৪ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা ১৬ লাখ টাকার কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পও (২য় পর্যায়) রয়েছে তালিকায়। প্রকল্পের জিওবি ফান্ড হচ্ছে ১ হাজার ৬৬৫ কোটি ১৬ লাখ ১০ হাজার টাকা। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরে এডিপি বরাদ্দ প্রস্তাব রয়েছে ১০৪ কোটি ৬ লাখ টাকা। তালিকায় ৩ হাজার ৮০৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকার চট্টগ্রাম মহানগরীর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন প্রকল্পও (১ম পর্যায়) রয়েছে। প্রকল্পের জিওবি ফান্ড হচ্ছে ৩ হাজার ৭৫৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরে এডিপি বরাদ্দ প্রস্তাব রয়েছে ৫০০ কোটি টাকা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমুক্তিযুদ্ধের ৬ প্রামাণ্যচিত্রের
পরবর্তী নিবন্ধমূল হোতাসহ গ্রেপ্তার ৫ স্থায়ী বহিষ্কার ২