জিআই স্বীকৃতি কি পাবে না মহেশখালীর মিষ্টি পান

রাজশাহীর মিষ্টি পানের জিআই স্বীকৃতির আবেদনে চলছে যাচাই-বাছাই

ফরিদুল আলম দেওয়ান, মহেশখালী | শনিবার , ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৮:৪২ পূর্বাহ্ণ

জগত বিখ্যাত মিষ্টি পানের চাষ হয় দেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালীতে। এ দ্বীপে উৎপাদিত মিষ্টি পানের সুখ্যাতি রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। মহেশখালীকে মিষ্টিপানের ভূস্বর্গ বলা হয়। এই দ্বীপে উৎপাদিত মিষ্টিপান নিয়ে রচিত হয়েছে অনেক গান, কবিতা, গল্প, উপন্যাস এমনকি নির্মিত হয়েছে সিনেমাও। শত শত বছর পূর্বে বিশ্ব পরিব্রাজকদের ভ্রমণকাহিনীতেও রচিত হয়েছে মহেশখালী দ্বীপের মিষ্টি পানের সুখ্যাতির কথা। এমন একটি পণ্য সামান্য অবহেলার কারণে হারাতে বসেছে জিআই স্বীকৃতি।

জিআই হলো ভৌগোলিক নির্দেশক চিহ্নযা কোনো পণ্যের একটি নির্দিষ্ট উৎপত্তিস্থলের কারণে এর খ্যাতি বা গুণাবলী নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত জিআইতে উৎপত্তিস্থলের নাম (শহর, অঞ্চল বা দেশ) অন্তর্ভুক্ত থাকে। জিআই (এও) এর পূর্ণরূপ হলো (Geographical indication) ভৌগোলিক নির্দেশক।

জানা গেছে, মহেশখালীর মিষ্টিপানের শতবছরের খ্যাতিকে আড়াল করে মিষ্টিপানের জিআই স্বত্ব পেতে যাচ্ছে রাজশাহীর মিষ্টিপান। ২০২৩ সালের ৩০ আগস্ট তৎকালীন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক (বর্তমান) শামীম আহমেদ রাজশাহীর কৃষকদের প্রধান অর্থকরী ফসল মিষ্টিপান হিসেবে উল্লেখ করে, পানের জিআই নিবন্ধন চেয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্পনকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরে (ডিপিডিটি) আবেদন করেছিলেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের শাড়ি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়। এছাড়া জিআই পণ্যের স্বীকৃতির জন্য গোপালগঞ্জের রসগোল্লা, যশোরের খেজুর গুড় ও নরসিংদীর কলা ও লটকন এবং রাজশাহীর মিষ্টি পানের আবেদন যাচাইবাছাই চলছে বলে জানা গেছে।

এই খবরে মহেশখালী কক্সবাজারের নানামহলে ক্ষোভের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, শত বছরের সুখ্যাতি থাকলেও অবহেলায় হয়নি আবেদন। এজন্য পিছিয়ে পড়তে যাচ্ছে মহেশখালীর মিষ্টি পান।

বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ২১ টি পণ্য জিআই সনদ পেয়েছে। আরো ১৪টি জিআই সনদ পাওয়ার জন্য আবেদন করেছে। তার মধ্যে রয়েছে রাজশাহীর মিষ্টি পান। জিআই পণ্যের আবেদন প্রক্রিয়া ও সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে ডিপিডিটি মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান গত ৬ ফেব্রুয়ারি বলেন ‘গত চার মাসে ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসক ও কমিশনারের কাছে চিঠি দিয়েছি আমরা। তাদেরকে আমরা বলেছি যে আপনার এলাকায় কী কী জিআই পণ্য আছে, সেটা নিয়ে আমাদের কাছে অ্যাপ্লাই করেন। আমরা আপনাদের সহায়তা করব।

উল্লেখ করা যেতে পারে, গেল ২০২৩ সালের ২৮ এপ্রিল মহেশখালীর গোরকঘাটার জেটিঘাট সংলগ্ন দর্শনীয় স্থানে মহেশখালীর মিষ্টিপানের স্মৃতিস্বরূপ কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে পান ভাস্কর্য নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কক্সবাজার(কুতুবদিয়ামহেশখালী) আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক। এতে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর মোহাম্মদ নুরুল আবছার বলেছিলেন, ‘কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব নেয়ার পর ‘পানের ভাস্কর্য’ দিয়ে উন্নয়নের যাত্রা শুরু হল। এই ভাস্কর্য সম্পূর্ণ নির্মাণ কাজ শেষ হলে পর্যটন শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ করবে। এই ভাস্কর্য দেশের একটি প্রধান অর্থকরী ফসলের গৌরব ও গুরুত্ব বহন করে।

মহেশখালীর পানচাষি মোহাম্মদ ফোরকান বলেন, ‘মিষ্টিপানের চাষ করি আমরা, আর এখন শুনছি রাজশাহীর মিষ্টিপান স্বীকৃতি পাচ্ছে। এটি তো আমাদের মতো চাষিদের কাছে অসম্মানের।’ পান ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক বলে, মহেশখালীর মিষ্টি পানকে আড়াল করে রাজশাহীর মিষ্টি পানের জিআই স্বত্ব মিললে মহেশখালীর মিষ্টি পানের কদর এবং বাজার দর কমতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে। এর ফলে মহেশখালীর চাষিরা পানচাষে উৎসাহ হারানোর আশংকাও রয়েছে। এতে মহেশখালীর চাষিরা বেকার হয়ে পড়বেন, দেশের বৈদেশিক আয়ের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। মহেশখালী দ্বীপের পানচাষিদের দাবি, এখনো সময় আছে, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মহেশখালীর মিষ্টি পানের স্বপক্ষে আবেদন করে জোরালো অবস্থান নিলে আমাদের মহেশখালীর মিষ্টিপানের জিআই স্বীকৃতি আদায় করা যাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসংশয় কাটিয়ে প্রথম দিনেই জমে উঠল বইমেলা
পরবর্তী নিবন্ধসরকারি কালভার্ট বন্ধ করে দেয়াল নির্মাণের অভিযোগ