সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিউ ইয়র্কের আদালতে হাজিরা দিয়ে ফৌজদারি মামলায় আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত হওয়ার পর ফ্লোরিডার বাসভবনে ফিরে তার মামলার বিচারক আর ম্যানহাটনের ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নিকে একহাত নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে ৭৬ বছর বয়সী এ রিপাবলিকান বলেন, বিরোধীরা যুক্তরাষ্ট্রকে ‘ধ্বংস করে দিতে চাইছে’।
‘জাহান্নামে যাচ্ছে আমাদের দেশ’, গত মঙ্গলবার রাতে মার–আ–লগো বাসভবনে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্যে দৃঢ়চেতা ট্রাম্প এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। বক্তব্যে তিনি ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে নামার পর থেকে তার ভাষায় তার ওপর যেভাবে নির্যাতন নেমে এসেছে, সেগুলোও একে একে উল্লেখ করেন। খবর বিডিনিউজের।
দুই বছর পর হতে যাওয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী এ রাজনীতিক বলেন, তার নির্বাচনী প্রচারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে ডেমোক্রেটরা যে ষড়যন্ত্র করেছে, তার শিকার তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ট্রাম্পই প্রথম কোনো সাবেক প্রেসিডেন্ট, যিনি আদালতে বিবাদীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছেন। গত ৩০ মার্চ নিউ ইয়র্কের ম্যানহ্যাটনের গ্র্যান্ড জুরি আদালত ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগের মূলে রয়েছেন স্টর্মি ড্যানিয়েলস নামে একজন সাবেক পর্নো তারকা। যিনি অভিযোগ করেছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে তার যৌন সম্পর্ক ছিল এবং ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ওই সম্পর্কের বিষয়ে মুখ বন্ধ রাখতে ট্রাম্প গোপনে তার আইনজীবীর মাধ্যমে তাকে মোটা অংকের অর্থ প্রদান করেন।
ড্যানিয়েলসের এই অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসকেই নাড়িয়ে দিয়েছে বলা যায়। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের আইনে সাবেক ওই পর্নো তারকার সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক থাকা নিয়ে কোনো বাধা নেই। কিন্তু গোল বেঁধেছে গোপনে অর্থ প্রদান নিয়ে। যদিও ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে আনা এ অভিযোগকে মিথ্যা বলেই দাবি করছেন। ড্যানিয়েলসকে গোপনে অর্থ দেওয়ার পাশাপাশি ব্যবসায়িক রেকর্ড নিয়ে মিথ্যাচারসহ ৩৪টি অভিযোগে গত মঙ্গলবার ম্যানহাটনের আদালতে হাজির হতে হয় যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্টকে। আদালত ও গোয়েন্দা সংস্থার ডজনের বেশি কর্মকর্তা পরিবেষ্টিত অবস্থায় ট্রাম্প সেখানে সব অভিযোগেই নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।
এদিন ম্যানহাটনের আদালতে ট্রাম্পের মামলায় ঘণ্টাখানেকের মতো শুনানি হয়। সেখানে কৌঁসুলিরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের ‘হুমকি দিয়ে পোস্ট’ দেওয়ার কথাও উল্লেখ করেন। বিচারক হুয়ান মারচেন পরে মামলা খারিজ বা মামলা সংক্রান্ত অন্য যে কোনো আবেদন করতে ট্রাম্পের আইনজীবীদেরকে ৮ অগাস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। আদালত থেকে বের হয়েই দ্রুত ফ্লোরিডায় ফিরে আসেন ট্রাম্প। এরপর মার–আ–লগোতে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি আদালতের বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্টতার অভিযোগ আনেন। আমার মামলায় এখন ট্রাম্পবিদ্বেষী এক বিচারক আছেন, যিনি ট্রাম্পবিদ্বেষী পরিবার থেকে এসেছেন, বলেছেন তিনি।
তবে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগই সর্বনিম্ন পর্যায়ের, ‘ই শ্রেণির’ অপরাধ। দোষী সাব্যস্ত হলে তার সর্বোচ্চ ৪ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।