সীতাকুণ্ডের শিপইয়ার্ডে জাহাজ কাটার শ্রমিক মো. রাসেলের বিকৃত অর্ধগলিত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় আদালতে মামলা করেছেন তার বাবা মো. ইউনুস মিয়া। রাসেলকে হত্যার অভিযোগ করে গতকাল চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হকের আদালতে দায়ের করা মামলায় সাউদার্ন সালভেজ ও এমভি হানিমধু স্ক্র্যাপ জাহাজের মালিক আসাদুজ্জামান স্বপন, তার ভাই মোছাদ্দেক মিয়া, কন্টাক্ট্রর ফারুক আহমদ, সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ, এসআই মুকিব হাসান ও এনামুল নামের অজ্ঞাত এক যুবককে আসামি করা হয়েছে। বাদীর আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে থানায় এ সংক্রান্ত কোনো মামলা হয়ে থাকলে তার রিপোর্ট তলব করেছেন।
আদালতে মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ২৬ আগস্ট সকাল ৮ টায় সীতাকুণ্ডের মাদামবিবির হাট নেভি গেট দিদারের কলোনি থেকে ভিকটিম রাসেল কাজে বের হয়। কন্টাক্ট্রর ফারুক, হেলপার মহিউদ্দিন, এনামুল জাহাজ কাটার কাজে নিয়ে যায়। কিন্তু পরেরদিন রাত পর্যন্ত রাসেল বাসায় ফিরে আসেনি। যোগাযোগ করা হলে আসামি স্বপন ও তার ভাই মোছাদ্দেক জানান, তাদের স্পিড বোট নষ্ট থাকায় কর্মরত সকল শ্রমিককে পানিতে নেমে সাঁতার কেটে যে ফেরিতে খাবারের ব্যবস্থা আছে ওই জাহাজে যেতে বলা হয়। কিন্তু ভিকটিম যেতে অস্বীকৃতি জানালে বাকবিতণ্ডা হয়। জাহাজের সাথে থাকা অন্যান্য শ্রমিকদের কাছ থেকে জানা যায়, তখন অন্যান্য শ্রমিকরা সাঁতরে খাবারের ফেরিতে চলে গেলেও রাসেল যায়নি। কিছুক্ষণ পর কয়েকজন চিৎকার শুরু করে রাসেল পানিতে পরেছে। আসামিরা জানায়, অনেক খোঁজাখুজির পরও রাসেলকে পাওয়া যায়নি।
এজাহারে বলা হয়, পরদিন ২৭ আগস্ট রাসেলের কোনো সন্ধান না পাওয়ায় থানায় জিডি করতে গেলে সীতাকুণ্ড থানার ওসি ও এসআই রাত ৪ টা পর্যন্ত বসিয়ে রেখে বলেন জিডি কিংবা অভিযোগ নেয়া যাবে না। পরের দিন ২৮ আগস্ট বিষয়টি ডিআইজিকে মৌখিকভাবে জানানো হয়। একই দিন রাত ১০টার দিকে বাদী পুনরায় থানায় গেলে সেকেন্ড অফিসার এসআই মুকিব হাসান হুমকি দিয়ে অশালীন ভাষায় কথাবার্তা বলেন এবং বেশি বাড়াবাড়ি করলে ‘মিথ্যা’ মামলায় ফাঁসিয়ে দিবে বলে হুমকি দেন। ওসি বলেন, এসব নিয়ে মামলা করিও না, সমস্যা হবে। মালিককে ডেকে কিছু টাকা নিয়ে দিব। আসামি আসাদুজ্জামান স্বপন এসে আবার হুমকি দেন এবং পাঁচ হাজার টাকা রাখার কথা জানিয়ে বলেন লাশ পেলে আরও টাকা দিবেন। এজাহারে আরো বলা হয়, ২ সেপ্টেম্বর ভোলাইয়া পাড়া বেড়িবাঁধ এলাকায় রাসেলের লাশ উদ্ধার হয়। বাদী লাশ শনাক্ত করার পরও এসআই মুকিব হাসান লাশ না দিয়ে বলেন, ডিএনএ টেস্ট করা ছাড়া লাশ দেওয়া যাবে না। পরে আনজুমান মফিদুুল ইসলামকে দিয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে লাশ দাফন করানো হয়।