জাহাজে বিমান বিধ্বংসী অস্ত্র আনল জলদস্যুরা

এমভি আবদুল্লাহতে সুপেয় পানির সংকট নাবিকদের বেশিরভাগ সময় রাখা হচ্ছে ব্রিজে, ফোন ব্যবহারে কড়াকড়ি

হাসান আকবর | রবিবার , ২৪ মার্চ, ২০২৪ at ৫:৫৪ পূর্বাহ্ণ

ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়া এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে বিমান বিধ্বংসী অস্ত্র বসিয়েছে সোমালি জলদস্যুরা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজের নজরদারির মাঝে আবদুল্লাহর চারদিকে বিভিন্ন পয়েন্টে বিমান বিধ্বংসী অস্ত্র স্থাপন করা হয়। একইসাথে দস্যুরা জিম্মি নাবিকদের বেশিরভাগ সময়ই জাহাজটির ব্রিজের ওপর অবস্থান করতে বাধ্য করছে, যাতে বাইরের কোনো উদ্ধারকারী জাহাজ অভিযান বা গুলি চালাতে না পারে। জলদস্যুরা জাহাজ থেকে ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতংক সৃষ্টি করছে। জাহাজে সুপেয় পানির অভাব দেখা দিয়েছে। নাবিকদের ফোন ব্যবহারেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে বলে নাবিকদের উদ্ধৃতি দিয়ে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে।

জিম্মি এক নাবিকের উদ্ধৃতি দিয়ে সূত্র জানায়, গতকাল পর্যন্ত জাহাজটিতে ৩০/৩৫ জন করে জলদস্যু অবস্থান করছে। তারা বিভিন্ন সময় জাহাজ থেকে নামছে, নতুন দস্যু দলে যোগ দিচ্ছে। আবার পুরনোগুলোও ফিরে আসছে। এসব দস্যু সবসময় যাতায়াত না করলেও বাইরের সাথে তাদের ঘনিষ্ঠ এবং কার্যকর যোগাযোগ রয়েছে। শুরু থেকে তাদের কাছে একে ৪৭ সহ ভারী অস্ত্রশস্ত্র ছিল। গত শুক্রবার তারা বিমান বিধ্বংসী ভারী অস্ত্র এনে জাহাজের নানা পয়েন্টে স্থাপন করেছে। ইতোমধ্যে তারা গোলা ছুড়ে নিজেদের শক্তি জানান দেওয়ার চেষ্টা করছে। জাহাজে ভারী অস্ত্র স্থাপনের পর ফাঁকা গুলি ছোড়ার ঘটনায় নাবিকদের মাঝে শঙ্কা বাড়ছে। জাহাজটিতে খাবারের মজুদ ফুরিয়ে আসছে। ইতোমধ্যে সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। জিম্মি ২৩ জন নাবিকের সাথে গড়ে ৩০/৩৫ জন জলদস্যু অবস্থান করে। এতে করে ২৩ জনের জন্য রাখা পানির ব্যবহার চলছে অন্তত ৫০ জনের। ফলে দ্রুত ফুরাচ্ছে পানি। সুপেয় পানির অভাব দেখা দিলে পানির সংস্থান কীভাবে করা হবে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

জাহাজের এক নাবিকের উদ্ধৃতি দিয়ে চট্টগ্রামে বসবাসকারী সিনিয়র ক্যাপ্টেন আতিক খান আজাদীকে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ভারতীয় যুদ্ধ জাহাজের উপস্থিতিতে নাবিকেরা সতর্ক। এমভি রুয়েন নামে ছিনতাই করা একটি জাহাজ হাতছাড়া হওয়ার পর এখন তারা আর কোনো ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না বলে মনে হয়। এজন্য তারা সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করছে। নাবিকদের ব্রিজের উপর রাখছে। তাদের কেবিনে যেতে দিচ্ছে না। সেখানে একটি মাত্র ওয়াশরুম, যা ব্যবহার করতে হচ্ছে সকলকে। নাবিকদের সাথে দস্যুরা খারাপ ব্যবহার এখন পর্যন্ত না করলেও ভোগান্তিতে পড়েছে।

এমভি আবদুল্লাহর মালিক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএমের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, ঈদের আগে নাবিকদের সুস্থভাবে ফিরিয়ে আনার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করছি আমরা। জলদস্যুদের সাথে যোগাযোগ যেটা শুরু হয়েছে সেটা এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। আমরা তৃতীয় পক্ষের সাহায্য নিয়ে আলোচনার মাধ্যমেই নাবিক এবং জাহাজ উদ্ধার করতে চাই। আমরা কোনোভাবেই সশস্ত্র অভিযানের পক্ষে নই। নাবিকদের জীবন সংশয়ে পড়বে এমন কোনো পদক্ষেপের প্রতি আমাদের কিংবা আমাদের সরকারের সমর্থন নেই। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও এই মেসেজ সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে গত ৪ মার্চ যাত্রা শুরু করেছিল এমভি আবদুল্লাহ। ১৯ মার্চ জাহাজটির সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু ১২ মার্চ দুপুরে ভারত মহাসাগরের গভীর অঞ্চল থেকে জাহাজটিকে সোমালিয়ার জলদস্যুরা ২৩ জন নাবিকসহ জিম্মি করে। শিল্প গ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি প্রায় ৫০০ নটিক্যাল মাইল দূর থেকে জিম্মি করে সোমালিয়ান দস্যুরা তাদের উপকুলে নিয়ে যায়। বর্তমানে জাহাজটি সোমালিয়ার গদভজিরান উপকূল থেকে দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করা রয়েছে। জাহাজটির অদূরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ভারতীয় নৌ বাহিনীর জাহাজ অবস্থান করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের জাহাজে হেলিকপ্টারও রয়েছে। কয়েকদিন ধরে হেলিকপ্টার চক্কর দেয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজিম্মি নাবিকদের স্বজনরা পেলেন আশ্বাস
পরবর্তী নিবন্ধনাবিক এবং জাহাজের ক্ষতি না করেই উদ্ধারের চেষ্টা চলছে : হাছান মাহমুদ