জাহাজের বাড়তি ভাড়ার চাপে পোশাক খাত আমেরিকা

ইউরোপের ভাড়া বেড়েছে চার পাঁচগুণ, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে প্রভাব

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২২ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:২০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম থেকে এক কন্টেনার তৈরি পোশাক সিঙ্গাপুর হয়ে আমেরিকা পাঠাতে জাহাজ ভাড়া পরিশোধ করতে হতো আড়াই থেকে তিন হাজার ডলার। কিন্তু গত কিছুদিন ধরে চট্টগ্রাম থেকে আমেরিকায় একটি কন্টেনার পাঠাতে খরচ পড়ছে কমপক্ষে দশ হাজার ডলার। অপরদিকে চট্টগ্রাম থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে একটি কন্টেনার পাঠাতে খরচ হতো আঠারশ’ থেকে দুই হাজার ডলার। যা এখন গিয়ে ঠেকেছে কমপক্ষে সাত হাজার ডলারে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপ এবং আমেরিকার জাহাজ ভাড়া হু হু করে বেড়ে যাওয়ায় বিপুল অর্ডার পেয়েও চাপে রয়েছে দেশের তৈরি পোশাক খাত। শুধু ইউরোপ আমেরিকাই নয়, পুরো পৃথিবীতেই জাহাজ ভাড়া বাড়ছে। এতে শুধু তৈরি পোশাক খাতই নয়, দেশের সার্বিক আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। অপরদিকে ভাড়া ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ায় স্ক্র্যাপ হিসেবে ঘোষণা দিতে যাওয়া জাহাজও বিভিন্ন দেশের পতাকা নিয়ে চলাচল শুরু করেছে।
সূত্র জানিয়েছে, তৈরি পোশাক খাতই দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত। বাংলাদেশ বছরে পঞ্চাশ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি বাণিজ্যের যে আশা করছে তার প্রধান অবলম্বনই গার্মেন্টস সেক্টর। এই খাত থেকে যত বেশি পণ্য রপ্তানি হবে বাংলাদেশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন তত সহজ হবে। করোনার শুরুতে দেশের তৈরি পোশাক খাত চরম সংকটে পড়ে। কিন্তু পরবর্তীতে সরকারের কিছু সাহসী পদক্ষেপ এবং দূরদর্শী সিদ্ধান্তে দেশের গার্মেন্টস সেক্টর ঘুরে দাঁড়ায়। বর্তমানে চীন, ভিয়েতনামসহ নানাদেশের বহু অর্ডার বাংলাদেশে আসছে। এতে করে দেশের গার্মেন্টস কারখানাগুলো ধারণার চেয়ে বেশি অর্ডার পেয়েছে। বহু কারখানারই আর অর্ডার নেয়ার মতো সুযোগ নেই। বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতির উন্নতিতে আসন্ন শীত মৌসুম এবং বড়দিনকে ঘিরে অর্ডারের হিড়িক পড়েছে। উপচে পড়া অর্ডারের মাঝেও দেশের গার্মেন্টস কারখানাগুলো জাহাজ ভাড়া নিয়ে চাপে পড়েছে। বিশেষ করে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে চার-পাঁচগুণ বেশি ভাড়ার ধকল সামলাতে ক্রেতা বিক্রেতা হিমশিম খাচ্ছে। স্বাভাবিক অবস্থায় জাহাজ ভাড়া বিদেশী ক্রেতারা পরিশোধ করলেও বর্তমানে এই ভাড়ার একটি অংশ বিক্রেতাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। যা দেশীয় গার্মেন্টস মালিকদের পরিশোধ করতে হচ্ছে বলেও বিজিএমইএ সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সিঙ্গাপুর, কলম্বো এবং পেনাং বন্দরে যায় তৈরি পোশাকের চালান। সেখান থেকে মাদারভ্যাসেলে বোঝাই করে চালান পাঠানো হয় ইউরোপ আমেরিকাসহ বিশ্বের নানা দেশে। একইভাবে ব্যাক টু ব্যাক এলসির আওতায় আনা হয় কাঁচামাল। কাঁচামাল আনা এবং তৈরি পোশাক রপ্তানি উভয়ক্ষেত্রেই জাহাজ ভাড়া অতীতের তুলনায় চার থেকে পাঁচগুণ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। যা শুধু তৈরি পোশাকই নয়, দেশের সার্বিক আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে মারাত্মক রকমের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ সূত্রগুলো বলেছে, দীর্ঘ প্রায় দুই বছর ধরে পুরো পৃথিবী মুখ থুবড়ে পড়েছিল। করোনাকালে সবকিছু বন্ধ থাকায় পণ্য পরিবহনও হয়নি। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির উন্নতির সাথে সাথে পুরো পৃথিবী একই সাথে খুলে গেছে। পৃথিবীর দেশে দেশে শুরু হয়েছে মুভমেন্ট। এতে করে জাহাজের চাহিদা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। স্বাভাবিক অবস্থায় যেখানে একটি জাহাজের প্রয়োজন ছিল সেখানে এখন চার পাঁচটি পর্যন্ত জাহাজ যাতায়াত করছে। বেড়ে যাচ্ছে বন্দরের ব্যস্ততা। খালি কন্টেনারের ডিমান্ডও বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিশ্বের শিপিং সেক্টরে অপ্রত্যাশিত এবং অস্বাভাবিক একটি পরিস্থিতি শুরু হয়েছে। যার ধাক্কা সামলাতে হচ্ছে পুরো পৃথিবীকে।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জের একাধিক আমদানিকারক জাহাজ ভাড়া বেড়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, আমাদের আমদানি খরচ বহু বেড়ে গেছে। কস্ট অব বিজনেস বেড়ে যাচ্ছে হু হু করে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ার এটি অনেক বড় একটি কারণ বলেও তারা মন্তব্য করেন।
তৈরি পোশাক খাত চাপে থাকার কথা স্বীকার করে বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহ সভাপতি এসএম আবু তৈয়ব বলেন, জাহাজ ভাড়া অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। আমরা ভীষণ চাপে পড়েছি। অর্ডার প্রচুর আছে। কিন্তু জাহাজ ভাড়া বেড়ে যাওয়ার ধকল সামলাতে গিয়ে সংকটে পড়তে হচ্ছে। তিনি জাহাজ ভাড়া কোন দিকে যাচ্ছে তার উপর শুধু তৈরি পোশাকই নয়, দেশের সার্বিক আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য নির্ভর করবে বলেও মন্তব্য করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনবম শ্রেণীর ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধরেকর্ড গড়া জয়ে সুপার টুয়েলভে বাংলাদেশ