জাহাজটি কাটছে কারা

স্ক্র্যাপের মূল্য বৃদ্ধির সুযোগে সিন্ডিকেটের তৎপরতা ভাটিয়ারী উপকূলে ৩০ বছর ধরে পরিত্যক্ত ছিল এটি

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২ মার্চ, ২০২২ at ৬:২০ পূর্বাহ্ণ

স্ক্র্যাপ লোহার দাম বাড়ছে। কয়েকদিনের ব্যবধানে টন প্রতি প্রায় তিন হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। লোহার দাম বাড়ার সাথে সাথে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে বেড়েছে স্বাভাবিক ব্যবসা-বাণিজ্য। একই সাথে লোহা চোর চক্রের অপতৎপরতাও অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় ত্রিশ বছর ধরে সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী উপকূলে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা একটি জাহাজ রাতের আঁধারে কেটে নিয়ে যাচ্ছে সিন্ডিকেট। নানা জালিয়াতির মাধ্যমে চক্রটি ‘জাহাজটি গিলে খাচ্ছে’ বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
জানা যায়, এমভি রয়েল বার্ড নামের একটি জাহাজ ১৯৯৩ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে আসার পথে যান্ত্রিক ত্রুটিতে পড়ে। সাগরে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে ক্যাপ্টেন দ্রুত জাহাজটিকে সন্দ্বীপ চ্যানেলের দিকে সরিয়ে নেন। ভাটিয়ারী উপকূলে নিয়ে গিয়ে চরে আটকে দেয়া হয়। সেই থেকে অরক্ষিত অবস্থায় জাহাজটি সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী উপকূলে পড়েছিল। পরবর্তীতে জাহাজটির মালিক সেটিকে ঢাকার কোনো একটি এতিমখানাকে দান করে দেন বলে প্রচারণা রয়েছে। তবে কোন এতিমখানাকে দেয়া হয়েছে তা কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি। কোনোদিন কেউ এই জাহাজটির দাবি নিয়েও আসেননি।
উপকূলীয় এলাকায় তৎপর থাকা লোহা চোর চক্র দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্নভাবে জাহাজটির নানা অংশ কেটে নিয়ে গেছে। তবুও কয়েক কোটি টাকা দামের লোহাসহ নানা সামগ্রী ছিল জাহাজটিতে। সরকারিভাবে জাহাজটি জব্দ করে বিক্রি করে টাকাগুলো সরকারি কোষাগার, কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা ভালো কোনো কাজে ব্যয় করার জন্য স্থানীয়দের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় বলা হলেও কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। পরিত্যক্ত জাহাজটি অরক্ষিত অবস্থায় থাকে। কিন্তু গত কিছুদিন ধরে সীতাকুণ্ডের শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে স্ক্র্যাপ লোহার দাম প্রতিদিন বাড়ছে। টাকা দিয়েও স্ক্র্যাপ কিনতে না পারার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কোনো ইয়ার্ডে স্ক্র্যাপ বিক্রির ঘোষণা দেয়া হলে ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। ইয়ার্ড মালিকেরা প্রতিদিন নিলামের মাধ্যমে স্ক্র্যাপ বিক্রি করছেন। যে ক্রেতা বেশি দাম দিচ্ছেন সেই ক্রেতাকে স্ক্র্যাপ দেয়া হচ্ছে। তীব্র প্রতিযোগিতার মাঝে বাড়ছে স্ক্র্যাপের দাম। আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপ জাহাজের সংকট দেখা দেয়ায় দাম বাড়ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
স্ক্র্যাপের মূল্য বৃদ্ধির সুযোগে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র পরিত্যক্ত এমভি রয়েল বার্ড জাহাজটি কাটছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিদিনই কাটা হচ্ছে জাহাজটি। শত শত টন লোহা নানা পন্থায় চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে চোরের দল।
ভাটিয়ারী শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের মালিক মো. নায়িম শাহ বলেন, শুনেছি স্থানীয় মেম্বার ও চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন জাহাজটি কাটছেন। শুনেছি তারা মালিকের কাছ থেকে জাহাজটি কিনে নিয়েছেন। তবে তার প্রতিষ্ঠানের সীমানার মধ্যে জাহাজ কাটা হলেও কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায়ভার তিনি নেবেন না বলে জানান। তার ইয়ার্ডে বেশ কিছুদিন কোনো জাহাজ না থাকায় লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি বলে স্বীকার করে তিনি বলেন, জাহাজ আমদানি করার আগে আমরা লাইসেন্স নবায়ন করে নেব।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একদল শ্রমিক জাহাজ কাটার কাজে ব্যস্ত। গিয়াস উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি জানান, তিনি জাহাজটি ক্রয় করেছেন। তবে ক্রয় সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।
ভাটিয়ারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন বলেন, গিয়াস উদ্দিন ও মাহবুব নামে দুই ব্যক্তি জাহাজটি ক্রয় করেছেন বলে আমাকে জানিয়েছেন। তারা যদি জাহাজ ক্রয় করে থাকেন তাহলে বৈধ কাগজপত্র ও ভ্যাট-ট্যাক্স পরিশোধ করে কাটার জন্য বলেছি। জাহাজটির বেশিরভাগ অংশ ইতোমধ্যে চুরি হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
এদিকে জাহাজটি অনেক পুরাতন হওয়ায় এটার বিষয়ে কোনো তথ্য নেই বলে জানান বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স এসোসিয়েশন বিএসবিআরএর সভাপতি মো. আবু তাহের।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, ভাটিয়ারী শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের সীমানায় জাহাজ কাটলে দুর্ঘটনার দায়ভারও তাদেরকে নিতে হবে। লাইসেন্স নবায়ন না থাকলে জাহাজ কাটা যাবে না। খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উড়েছিল
পরবর্তী নিবন্ধপ্রতিদিন বন্ধ থাকবে ৫ ঘণ্টা সিএনজি স্টেশন