চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজজট পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও সংকটে রয়েছে গিয়ারলেস ভ্যাসেল (ক্রেনহীন জাহাজ)। বন্দরের গ্র্যান্ট্রি ক্রেন নেই এমন জেটিগুলোতে এসব জাহাজ ভিড়ানো সম্ভব না হওয়ায় দিনের পর দিন জাহাজগুলোকে সিসিটি এবং এনসিটির জেটি খালি পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। অপরদিকে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেশি কন্টেনার ইয়ার্ডে আটকা থাকায় বন্দরের সার্বিক কর্মকাণ্ডে সংকট বিরাজ করছে। জট পরিস্থিতি সামাল দিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ হিমশিম খাচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং পরবর্তীতে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানসহ সার্বিক পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। কারফিউ এবং সাধারণ ছুটিসহ নানা কারণে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কন্টেনার ডেলিভারিসহ বন্দরের অপারেশনাল কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়। এতে বন্দরে দেখা দেয় কন্টেনারজট। পরে জাহাজজটও চরম আকার ধারণ করে। সাধারণত বিদেশি বন্দর থেকে কন্টেনার নিয়ে আসা জাহাজগুলো সরাসরি কিংবা একদিনের মধ্যে বন্দরের জেটিতে নোঙর ফেলতে পারত। সেখানে এক সপ্তাহের বেশি সময় অপেক্ষা করেও বার্থিং না পাওয়ার ঘটনা ঘটতে থাকে। বহির্নোঙরে বাড়তে থাকে অপেক্ষমাণ জাহাজের সংখ্যা। ১৬টি কন্টেনার জাহাজ অলস বসে থাকার মতো ঘটনাও ঘটেছে।
জট সামলানোর জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ নানাভাবে চেষ্টা করে। কিন্তু কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে জট পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। গতকাল বহির্নোঙরে ১১টি কন্টেনার জাহাজ ছিল। এর মধ্যে ৮টি গিয়ারলেস ভ্যাসেল। এসব জাহাজের নিজস্ব ক্রেন না থাকায় এগুলোকে গ্যান্ট্রি ক্রেন আছে এমন জেটিতে নোঙর করতে হয়। চট্টগ্রাম বন্দরে শুধুমাত্র সিসিটি এবং এনসিটির জেটিগুলোতে গ্যান্ট্রি ক্রেন রয়েছে। জেনারেল কার্গো বার্থের তিনটি কন্টেনার বার্থ এবং পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনালে গ্যান্ট্রি ক্রেন নেই। এসব জেটিতে জাহাজের ক্রেন দিয়ে কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা হয়। বহির্নোঙরে গতকাল থাকা ৮টি গিয়ারলেস ভ্যাসেলের মধ্যে ২২ আগস্ট বন্দরে এসেছে এমন জাহাজও রয়েছে।
অপরদিকে অপেক্ষমাণ তিনটি গিয়ারড ভ্যাসেলের মধ্যে ২৬ আগস্ট এসেছে এমন জাহাজ রয়েছে। গিয়ারড ভ্যাসেলের জট কিছুটা সামলে ওঠা সম্ভব হলেও গিয়ারলেস ভ্যাসেলের ভোগান্তি চলছে বলে একটি শিপিং এজেন্সির শীর্ষ একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ভাড়া তুলনামূলক কম হওয়ায় অনেক আমদানিকারক গিয়ারলেস ভ্যাসেলে পণ্য আনতে পছন্দ করেন। একটি জাহাজ একদিন অলস বসে থাকলে অন্তত ১৫ হাজার ডলার এফওসি (ফিক্সড অপারেটিং কস্ট) বাবদ গচ্ছা দিতে হয়। যার যোগান দিতে হয় সাধারণ ভোক্তাকে।
অপরদিকে বন্দরের ইয়ার্ডে স্বাভাবিক সময়ে গড়ে ৩০/৩১ হাজার টিইইউএস কন্টেনার থাকলেও পরিস্থিতির কারণে তা ৪৪ হাজারে গিয়ে ঠেকে। গতকাল জট পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ইয়ার্ড থেকে কন্টেনার ডেলিভারি বৃদ্ধি এবং পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক হওয়ায় আটকে থাকা কন্টেনারের সংখ্যা কিছুটা কমে এসেছে। গতকাল বন্দরের ইয়ার্ডে ৩৮ হাজার ৯৯৭ টিইইউএস কন্টেনার ছিল। এর মধ্যে ভয়াবহ অবস্থা দেখা দিয়েছে ঢাকা কমলাপুর আইসিডিমুখী কন্টেনারের ক্ষেত্রে। ইয়ার্ডে ৮৭৬ টিইইউএস আইসিডিমুখী কন্টেনার রাখার জায়গা রয়েছে। অথচ গতকাল ওখানে কন্টেনার ছিল ২ হাজার ৩৬৮ টিইইউএস।
চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, বন্দর পরিস্থিতির উন্নয়নে রাতে–দিনে কাজ চলছে। এর সুফলও দেখা দিয়েছে। অপেক্ষমাণ জাহাজের সংখ্যা কমে এসেছে।