জামায়াতের আমির নতুন জঙ্গি সংগঠনের পৃষ্ঠপোষক : পুলিশ

৭ দিনের রিমান্ডে

আজাদী ডেস্ক | বুধবার , ১৪ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৭:১২ পূর্বাহ্ণ

জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেপ্তার জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. মো. শফিকুর রহমানকে যাত্রাবাড়ী থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের এক মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। শফিকুর রহমানের জামিন আবেদন নাকচ করে ঢাকার মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী গতকাল মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।

এক মাস আগে জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার শফিকুর রহমানের ছেলে রাফাত সাদিক সাইফুল্লাহকে এ মামলাতেই রিমান্ডে নিয়েছিল পুলিশ। সোমবার রাত ১টার দিকে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসা থেকে জামায়াত আমিরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট-সিটিটিসি। পরে তাকে যাত্রাবাড়ী থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অন্যদিকে শফিকুর রহমানের পক্ষে জামিন আবেদনের ওপর শুনানি করেন আাইনজীবী মো. আব্দুর রাজ্জাক এবং এস এম কামাল উদ্দিন।

এদিকে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে জঙ্গিদের মদদ দেওয়ার অভিযোগ এনেছে পুলিশ। তাকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে শফিকুরের এবং তিনি জঙ্গি কর্মকাণ্ডে ছেলেকে সহযোগিতা করে আসছিলেন। খবর বিডিনিউজের।

রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি আবদুল্লাহ আবু রিমান্ড শুনানিতে বলেন, জঙ্গিবাদে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া যাচ্ছে। সেজন্য তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। এর বিরোধিতা করে জামায়াতের আমিরের পক্ষে জামিন চেয়ে আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, জামায়াত নিষিদ্ধ সংগঠন নয়, জঙ্গিবাদেও সম্পৃক্ত না। জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত দলগুলোকে নিষিদ্ধ করেছে সরকার। জামায়াত সংসদেও ছিল। তিনি জামায়াতের প্রধান, এটাই তার অপরাধ।

শুনানি শেষে বিচারক জামিন নাকচ করে শফিকুর রহমানকে সাত দিনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন বলে প্রসিকিউশন পুলিশের উপকমিশনার জসিমউদদীন জানান। জামায়াত আমিরের শুনানি ঘিরে এদিন আদালতে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। প্রায় ৫০ জন আইনজীবী শফিকুরের শুনানির সময় তার পক্ষে এজলাসে উপস্থিত ছিলেন।

গত ৯ নভেম্বর শফিকুর রহমানের ছেলে রাফাত সাদিক সাইফুল্লাহকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি।

জামায়াত আমির নতুন জঙ্গি সংগঠনের পৃষ্ঠপোষক : গতকাল দুপুরে ঢাকার মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে আসেন সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, জামায়াত আমির তার ছেলে রাফাত নতুন জঙ্গি সংগঠনে জড়িয়েছেন, এটা জেনেও সমর্থন দিয়ে গেছেন। পরে রাফাত সিলেট অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন।

জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ায় জড়ানো অনেকেই রাফাতের মতো জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা ও কর্মী ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের হিজরতের খরচও দিয়েছেন জামায়াত আমির। তিনি বলেন, যাদের আমরা গ্রেপ্তার করেছি তারা সবাই জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ট্রেনিং ক্যাম্পে যাওয়ার জন্য হিজরত করেছিলেন। তারা প্রত্যেকেই শিবিরের সাথী ছিলেন। সহযোগী আরিফও শিবিরের সাথী ছিলেন। জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ায় যোগ দেওয়ার আগে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সিলেট অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেছেন। এরপর নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার দাওয়াত পেয়ে দলসহ যুক্ত হন তিনি।

আসাদুজ্জামান বলেন, ডা. রাফাতের নেতৃত্বেই প্রথম সিলেট থেকে ১১ জন বান্দরবানে হিজরত করেন। সেখানে ‘কুকিচিন’ (বম পার্টি নামে পরিচিত পাহাড়ি দল) নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন। রাফাতের মতো বড় সহযোগী ও সংগঠক তাহহিয়াত। তাহহিয়াতের নেতৃত্বে অনেকে হিজরত করে। তিনি কুকিচিনে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, রাফাতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছি, তার বাবা জামায়াত আমির শফিকুর রহমানের সম্মতিক্রমেই ২০২১ সালের জুন মাসে বান্দরবান থেকে ফিরে আসেন তিনি। ডাক্তার শফিকুর রহমানের সিলেটের বাসায় বিভিন্ন সময় জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করতেন রাফাত। ১১ ছেলেসহ রাফাত যে হিজরত করেছেন এর সবই জানতেন জামায়াত আমির। ক্ষেত্র-বিশেষে তিনি সহযোগিতাও করেছেন। কুকিচিনে হিজরতের যাবতীয় ব্যয়ভারও তিনি বহন করেছিলেন।

ডা. শাকের নামে আরেকজনকে কয়েকদিন আগে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়ে সিটিটিসি প্রধান বলেন, তিনি জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার দাওয়াতি শাখার প্রধান ছিলেন। এই সংগঠন থেকে আনুষ্ঠানিক, অনানুষ্ঠানিকভাবে অনেক সহযোগিতাই তারা পেতেন। যারা রাফাতের সঙ্গে হিজরত করেছেন তারাও জামায়াতের ছাত্র সংগঠন শিবিরের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সঙ্গে জামায়াতের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা ও সমর্থন ছিল কিনা তা জানতে এবং এই মামলায় জামায়াত আমিরের সরাসরি সম্পৃক্ততার কারণেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান সিটিটিসি প্রধান।

এক প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, গ্রেপ্তার এড়াতে ছেলেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা করেছেন জামায়াত আমির। আরও কয়েকজনকে তিনি সহযোগিতা করেছেন। জামায়াত ও শিবিরের সঙ্গে নতুন জঙ্গি সংগঠনের আন্ডারস্ট্যান্ডিং থাকতে পারে। অথবা সম্পূর্ণ সহযোগিতা করে থাকতে পারে। নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার জড়িত শীর্ষ পর্যায়ের যাদের গ্রেপ্তার করেছি, তারা জামায়াতে ইসলামী থেকে সহযোগিতা পাচ্ছে বলে তথ্য পেয়েছি।

কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট থেকে জঙ্গিদের কোনো ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন, কুকিচিনের কাউকে আমরা এখনও গ্রেপ্তার করতে পারিনি। কুকিচিনের সঙ্গে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সমর্থন এবং সহযোগিতা পেয়ে আসছে বলে আমরা জানতে পারছি।
আমির ছাড়া নতুন জঙ্গি সংগঠনে জামায়াতের অন্য কোনো নেতার সংশ্লিষ্টতা পেয়েছেন কিনা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জামায়াত আমিরের ছেলেই প্রথম হিজরতকারী। তার নেতৃত্বেই একটি বড় অংশ হিজরত করেছে। যে সংগঠনের আমিরের ছেলে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে হিজরত করে সেই সংগঠনের অন্য আঞ্চলিক পর্যায়ের নেতাদের সমর্থন সহযোগিতা ছিল বলে জেনেছি, তথ্যও পেয়েছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবর্জ্য ব্যবস্থাপনাকর্মী নিয়োগে চলে ঘুষ স্বজনপ্রীতি : টিআইবি
পরবর্তী নিবন্ধউড়ুক্কু মরক্কো নাকি ডিপেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স?