একই সম্পত্তি জামানত হিসেবে দেখিয়ে একাধিক ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ বন্ধ হচ্ছে; অনিয়মের এমন ঋণে রাশ টানতে বাংলাদেশে ব্যাংক চালু করছে ঋণগ্রহীতার জমি বন্ধক রাখার একটি তথ্য ব্যাংক। এ তথ্য ভাণ্ডারে ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের কাছে রাখা ঋণগ্রহীতার জামানত বা বন্ধকের যাবতীয় তথ্য থাকবে। যে কোনো ব্যাংক নতুন ঋণ অনুমোদনের আগে তা যাচাই করে দেখতে পারবে। এতে একই সম্পত্তি বা সহায়ক জামানত হিসেবে রেখে অন্য কোনো ব্যাংকের কাছ থেকে ইতোমধ্যে ঋণ নেওয়া হয়েছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া যাবে। শুধু নিজেদের জমি একাধিক ব্যাংকের কাছে জামানত রেখে নয়, সরকারি জমি বন্ধক দেওয়ার মাধ্যমেও ঋণ নেওয়ার ঘটনা ঘটছে। খবর বিডিনিউজের।
এমন অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কেন্দ্রীয়ভাবে তথ্য সংরক্ষণের এ উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক, যেটি কাজ শেষে আজ সোমবার উদ্বোধন হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকে থাকা গ্রাহকের ‘মর্টগেজ’ বা জামানতের তথ্যের এ ভাণ্ডারের নাম দিয়েছে ‘মর্টগেজ ডেটা ব্যাংক’। এর মাধ্যমে একই সম্পত্তি দেখিয়ে বারবার ঋণ অনুমোদন প্রক্রিয়ায় জালিয়াতির সুযোগ কমে যাবে বলে মনে করছেন এমটিবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ ডিজিটাল এ ডেটা ব্যাংক তৈরির কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
আজ ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ‘মর্টগেজ ডেটা ব্যাংক’ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের কথা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে এ ভাণ্ডার তৈরি করা হচ্ছে। এতে ভূমি রেজিস্ট্রি, নাম-জারি ও বন্ধক রাখা হয়েছে কি না সেই তথ্যও থাকবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান।
এ ডেটা ব্যাংকে ভূমির বিবরণ থাকবে, যা ভূমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও যুক্ত থাকবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ব্যাংক বন্ধক দিতে চাওয়া সম্পত্তির মালিকানা কার তা জানতে পারবে।
বর্তমানে ঋণের তথ্য যাচাইয়ে ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) ছাড়াও ‘এন্টারপ্রাইজ ডেটা ওয়্যারহাউস’ নামে ঋণগ্রহীতা বা উদ্যোক্তাদের তথ্য নিয়ে আরও একটি কেন্দ্রীয় তথ্য ভাণ্ডার রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। ওই সফটওয়্যারের ৩১টি ‘টেমপ্লেট’ রয়েছে, যেখানে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নিয়মিত তথ্য জমা করে। এসব তথ্যের মধ্যে রয়েছে গ্রহীতার ঋণের পরিমাণ, ব্যবসার ধরন, ঋণের সর্বশেষ অবস্থা, কিস্তির পরিমাণ, বকেয়া কিস্তি, মর্টগেজ করা সম্পত্তির পরিমাণ, অবস্থান, সম্পদের প্রকৃতি ও টিআইএনসহ কোম্পানির তথ্যাদি।
এছাড়া খেলাপি হলে তার তথ্য, কতবার ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে, ঝুঁকি ও আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত তথ্য ও বিদেশি উৎসের ঋণ তথ্যও রয়েছে। এবার এর সঙ্গে জামানতের তথ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে যাচাইয়ের সুযোগ না থাকায় জালিয়াতির মাধ্যমে একই সম্পত্তি একাধিক ব্যাংকে জামানত রেখে ঋণ নেওয়ার অনেক ঘটনা ঘটছে। অনিয়মের এসব ঋণ পরে খেলাপি হলেও সম্পত্তি বা জামানত বিক্রি করে দায় আদায় করতে পারে না ব্যাংক।
এমন ঘটনার কথা ব্যাংকাররা বলছেন, যাতে দেখা যায় যে সম্পত্তি ব্যাংকের কাছে জামানত রাখা হয়েছে, তার পুরো অংশ বা সম্পূর্ণ জমির মালিকানাতে গ্রাহকের কোনো অংশ নেই। এতে বিপাকে পড়ে ব্যাংক। রয়েছে জাল দলিল জমা দিয়ে ব্যাংক ঋণ নেওয়ার ঘটনাও।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে ‘মর্টগেজ ডেটা ব্যাংকের’ মাধ্যমে এসব জালিয়াতি বন্ধের সুযোগ তৈরি হবে। ঋণ নিতে ও ঋণ দিতে সুবিধা হবে। আর সব প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তির ব্যবহার থাকায় সম্পত্তির মূল্যও অতি মূল্যায়িত করার সুযোগও সীমিত হয়ে আসবে।
এজন্য ব্যাংকগুলোকে নিয়মিত তথ্য দেওয়াকে একটি বাধ্যবাধকতার মধ্যে নিয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছেন এমটিবির এমডি ও ব্যাংকের নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) এর সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।
এখন গাড়ির বিপরীতে ঋণ দিতে বিআরটিএর নিবন্ধন যাচাইয়ের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এতে জালিয়াতির সুযোগ কমে যাবে।