নগরীর ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল) পোর্ট শাখা থেকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার স্ত্রী রুকমীলা জামানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি চেয়ে আদালতে আবেদন করেছে দুদক। গতকাল চট্টগ্রামের সিনিয়র মহানগর স্পেশাল জজ (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবদুর রহমানের আদালতে আবেদনটি করা হয়। আদালত আগামী রোববার এ বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য্য করেছেন। এদিকে একইদিন মামলার আসামিদের মধ্যে আরামিট পিএলসির এজিএম মো. আব্দুল আজিজ এবং তদন্তে উঠে আসা আরামিট পিএলসির এজিএম (একাউন্টস) উৎপল পালের ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইব্রাহীম খলিল। এর আগে গত বুধবার ডবলমুরিং থানা পুলিশ এ দুজনকে গ্রেপ্তার করে দুদকের কাছে হস্তান্তর করেন। এরই ধারাবাহিকতায় দুদকের পক্ষ থেকে আদালতে উপস্থাপনপূর্বক তাদের দু’জনের ৭ দিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়। দুদক পিপি মোকাররম হোসেন দৈনিক আজাদীকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম–১ এর উপপরিচালক সুবেল আহমেদ জানান, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিদেশের সম্পদ অর্জন ও দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন উৎপল পাল। তার কাছ থেকে জব্দ করা ২টি ল্যাপটপ ও ২টি মোবাইল ফোন থেকে অসংখ্য তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি দেশ থেকে দুবাই ও দুবাই থেকে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর অর্থ পাচার প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ তথা মাস্টার মাইন্ড। অন্যদিকে আব্দুল আজিজ সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পত্তি ক্রয় ও রক্ষণাবেক্ষণকারী।
আদালতসূত্র জানায়, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল) থেকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে গত ২৪ জুলাই সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী রুকমীলা জামানসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মশিউর রহমান। আসামিদের মধ্যে ব্যাংকের পরিচালক আসিফুজ্জামান চৌধুরী, বোন রোকসানা জামান চৌধুরী ছাড়াও ইউসিবিএল ব্যাংক ও আরামিট গ্রুপের কর্মকর্তারা রয়েছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের মালিকানাধীন আরামিট গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠানের এক কর্মচারীকে মালিক সাজিয়ে নাম সর্বস্ব ভিশন ট্রেডিং নামে একটি কোম্পানির কাগজ তৈরি করে গম, মটর, হলুদ, ছোলা আমদানির নামে ২৫ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করা হয় ইউসিবিএল ব্যাংক চট্টগ্রামের পোর্ট শাখা থেকে। সেই টাকা আরামিট গ্রুপের কর্মচারীদের নামে তৈরি করা আলফা ট্রেডার্স, ক্ল্যাসিক ট্রেডিং, মডেল ট্রেডিং ও ইম্পেরিয়াল ট্রেডিং নামে আলাদা চারটি কোম্পানির ব্যাংক হিসেবে স্থানান্তর করা হয়। পরে ওই টাকা পাচার করা হয়। দুদক সূত্র জানায়, গত বছর আওয়ামী সরকার পতনের পর সাইফুজ্জামানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুদক। অনুসন্ধানে তার ও তার স্ত্রীর নামে যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৮টি এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৯টি স্থাবর সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। যা ইতিমধ্যে আদালত কর্তৃক জব্দের আদেশ হয়েছে। এছাড়া গত ৫ মার্চ তাদের নামে থাকা ৩৯টি ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশসহ গত বছরের ৭ অক্টোবর এ দম্পত্তির বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।