জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি। গতকাল রোববার রাতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক থেকে বেরিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ অবস্থানের কথা তুলে ধরেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব। তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের এক বছর হয়ে যাওয়ার পরও আমরা এখনো দেখতে পাচ্ছি, যারা আহত হয়েছেন, তাদের পুনর্বাসন, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা এখনো নিশ্চিত হয়নি। কিছুদিন আগে দেখেছি, শহিদ পরিবার তাদের দাবিতে মাঠে নামলে পুলিশ লাঠিপেটা করে এবং বেশ কিছু শহিদ পরিবারের সদস্যরা আহত হন। আমরা সরকারের কাছে শহিদ পরিবার এবং আহত সহযোদ্ধা যারা আছেন, তাদের পুনর্বাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য আহ্বান জানিয়েছি। এনসিপির প্রতিনিধিদলে ছিলেন দলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব ও তাসনিম জারা এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ। ব্রিফিংয়ে আদীব বলেন, আমরা যে বিষয়টি আশঙ্কা করছি, বাংলাদেশে গত ১৫ বছরে যেসব নির্বাচন হয়েছে, সেই নির্বাচনগুলোতে আমরা দেখেছিলাম রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করত। দেশের দীর্ঘ ৫৫ বা ৫৪ বছরের যে রাজনৈতিক সংকট, একক ব্যক্তিকেন্দ্রিক যে স্বৈরাচারী মনোভাব কিংবা যে কাঠামো গড়ে উঠছে, গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে সেটার স্থায়ী সমাধান হবে বলে আমরা মনে করি। এজন্য আমরা গণপরিষদ নির্বাচন এবং নতুন সংবিধান প্রণয়ন করার কথা বলেছি।
তিনি বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়া হয়েছে। সেই ঘোষণাপত্রে সরকার উল্লেখ করেছে, গত তিনটি নির্বাচনে ফ্যাসিস্ট সরকার এখানে চেপে বসেছিল। ফলে সেই তিনটি অবৈধ নির্বাচনে সরাসরি ফ্যাসিস্টের সহযোগী হিসেবে এবং অবৈধ নির্বাচনকে বৈধতা দিতে জাতীয় পার্টি সরাসরি অংশগ্রহণ করেছে। শুধু তাই নয়, গত নির্বাচনে আপনারা দেখেছেন, জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে যে নির্বাচনী পোস্টারগুলা করা হয়েছে, সেখানে তারা বর্তমান যে জাতীয় পার্টির দুই গ্রুপের যে মহাসচিব, মজিবুল হক চুন্নু ও শামীম হায়দার পাটোয়ারী, তাদের পোস্টারের সুস্পষ্ট লেখা, ‘আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী’। তার মানে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো পার্থক্য নাই। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম যেন স্থগিত করার বিষয়ে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেয়, সে বিষয়টি আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে আমলে নেওয়ার জন্য বলেছি।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে যাদের বয়স ১৮ হবে, ভোটার তালিকায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্তির দাবিও জানিয়েছে এনসিপি। আদীব বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তরুণদের সক্রিয় যে অংশগ্রহণ ছিল, সেই জায়গা থেকে আমরা মনে করি, এটা আরেকটু নমনীয় করে ফেব্রুয়ারিতে যাদের ১৮ বছর পূর্ণ হবে, তারাও যেন সরাসরি নির্বাচন অংশগ্রহণ করতে পারেন।
তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানে আমাদের প্রবাসী ভাইয়েরা অংশগ্রহণ করেছেন। সেক্ষেত্রে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বেশ কিছু লোক আটক হয়েছিল। তাদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিয়ে মুক্ত করা হয়েছে। এখনো সেখানে ২৫ জন আইনি জটিলতায় আছেন। সে বিষয়ে যেন সরকার উদ্যোগ নেয়, সে বিষয়টিও আমরা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।
তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে একটি গুম কমিশন করা হয়েছে। গতকাল আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস ছিল এবং গুম কমিশন স্পষ্টভাবে বলেছে, গত ১৫ বছরে দেশে যে বিচারবহির্ভূত গুম–খুন হয়েছে, সেখানে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থার দায় আছে। ফলে আমরা সরকারের কাছে স্পষ্টভাবে দাবি করেছি, গুম কমিশনের প্রতিবেদন আমলে নিয়ে রাষ্ট্রীয় যেসব সংস্থার যেসব সদস্য এ ধরনের অভিযোগে অভিযুক্ত, তাদের বিষয়ে যেন সুস্পষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া হয়।