জাপানের টয়োটা মোটরের সাথে প্রগতির যাত্রা

দুই প্রতিষ্ঠানের মাঝে বাণিজ্যিক চুক্তি টয়োটার হায়েস মাইক্রোবাস সংযোজন ও বাজারজাত শুরু

হাসান আকবর | সোমবার , ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ

রাষ্ট্রায়ত্ত গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (পিআইএল) জাপানের টয়োটা মোটর কর্পোরেশনের সাথে যাত্রা শুরু করেছে। ইতোমধ্যে দুই প্রতিষ্ঠানের মাঝে সম্পাদিত হয়েছে একটি বাণিজ্যিক চুক্তি। এই চুক্তির আওতায় প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ বাংলাদেশে টয়োটা মোটর্সের হায়েস মাইক্রোবাস সংযোজন এবং বাজারজাত শুরু করেছে। বিষয়টিকে প্রগতি ও টয়োটার অংশীদারিত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রগতি দীর্ঘদিন ধরে মিৎসুবিশি মোটর্সের সাথে কাজ করলেও নতুন এই চুক্তি টয়োটার মতো বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের সাথে তাদের বাণিজ্যিক কার্যক্রম সম্প্রসারণ দেশের অটোমোবাইল সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

সূত্রে জানা যায়, দেশের অটোমোবাইল সেক্টরের রাষ্ট্রায়ত্ত একমাত্র কারখানা প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৬৬ সালে। সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড এলাকায় ২৪ দশমিক ৭৫ একর ভূমিতে গাড়ি উৎপাদন এবং সংযোজনের বিশাল স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল প্রগতির। শুরুতে প্রতিষ্ঠানটির নাম ছিল গান্ধারা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালে দেশের অন্যান্য ব্যক্তি মালিকানাধীন কারখানাগুলোর সাথে গান্ধারাও জাতীয়করণ এবং নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশনের (বিএসইসি) অধীনস্থ কারখানাটি বছরের পর বছর বিদেশ থেকে গাড়ির যন্ত্রাংশ খোলা অবস্থায় (সিকেডি) এনে এখানে সংযোজন করে বাজারজাত করে। এছাড়া পুরো গাড়িও (সিবিইউ) প্রগতি আমদানি করে বিক্রি করেছে।

প্রগতির সামনে বড় সম্ভাবনা তৈরি হয় বছর কয়েক আগে। জাপানের বিশ্বখ্যাত মিৎসুবিশি মোটর্সের পাজেরো স্পোর্ট জিপ এবং এল২০০ পিকআপ সংযোজনের অনুমোদন দেয়া হয়। নানামুখী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মিৎসুবিশির এই গাড়ি সংযোজনের অনুমোদন পেয়েছিল প্রগতি। বর্তমানে প্রগতি মিৎসুবিশি মোটর্সের এই দুটি মডেলের গাড়ি সংযোজন এবং বাজারজাত করছে; যা দেশের সরকারিবেসরকারি খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া মাহিন্দ্রাসহ আরো কিছু গাড়ি প্রগতি সংযোজন করে।

দীর্ঘদিনের চেষ্টার ধারাবাহিকতায় প্রগতি যুক্ত হলো বিশ্বের সর্ববৃহৎ গাড়ি নির্মাতা, বিক্রেতা এবং জনপ্রিয় কোম্পানি জাপানের টয়োটা মোটর কর্পোরেশনের সাথে। টয়োটার সাথে দীর্ঘ আলাপআলোচনা এবং পরীক্ষানিরীক্ষার পর চুক্তিটি সম্পাদিত হয়। টয়োটা যেমন নিজেদের পণ্যের মান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চেয়েছে, তেমনি প্রগতিও সর্বোচ্চটা দিয়ে টয়োটার মানে গাড়ি সংযোজন করে দেখিয়েছে। সবকিছু ঠিকভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর সম্পাদিত হয় বহুল প্রত্যাশার বাণিজ্যিক চুক্তি। এই চুক্তির আওতায় প্রগতির প্রস্তুতকৃত গাড়ির যে সম্ভার তার পাশাপাশি বাজারও প্রসারিত হবে।

চুক্তির আওতায় প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড টয়োটার হায়েস মাইক্রোবাস সংযোজন এবং দেশে বাজারজাত করবে। প্রথম দফায় টয়োটা একশ ইউনিট হায়েস মাইক্রোবাস সিকেডি অবস্থায় আমদানি করেছে। এগুলো প্রগতিতে সংযোজন করে গাড়ি প্রস্তুত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৩৬ ইউনিট গাড়ি সংযোজন হয়েছে। বাকিগুলো সংযোজনের কাজ চলছে। খোলা অবস্থায় আনা গাড়িগুলো সংযোজনে প্রগতির দক্ষ কর্মীবাহিনী কাজ করছে।

এতে দেশের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে উল্লেখ করে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের একজন কর্মকর্তা গতকাল আজাদীকে বলেন, সিবিইউ অবস্থায় গাড়ি আমদানি করতে যে পরিমাণ টাকা লাগে খোলা অবস্থায় (সিকেডি) আমদানিতে খরচ অনেক কম পড়ে। এখানে শ্রমিক, কর্মকর্তাকর্মচারীদের বেতনভাতার পাশাপাশি অনেকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। খোলা অবস্থায় আনা যন্ত্রাংশগুলো জোড়া দিয়ে রং করা পর্যন্ত সব কাজ প্রগতিতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

টয়োটা হায়েসের প্রথম চালানের সংযোজিত গাড়িগুলো ইতোমধ্যে বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রথম গাড়িটি কিনেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। বাকি গাড়িগুলো ক্রমান্বয়ে বিক্রি হয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমাদের বছরে ১২শ ইউনিট হায়েস সংযোজন করার সক্ষমতা রয়েছে। তবে বাজারের চাহিদার ওপর নির্ভর করে আমরা গাড়ি সংযোজন করব। আমদানি করে এখানে ফেলে রাখলে প্রগতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ গত রাতে আজাদীকে বলেন, টয়োটা মোটর্সের সাথে আমাদের যে বাণিজ্যিক চুক্তি তা একটি নতুন দুয়ার খুলে দেবে। টয়োটার সাথে সামনের দিনগুলোতে প্রগতির বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো জোরদার এবং সম্প্রসারিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

প্রগতির বিপণন কর্মকর্তা আলাউদ্দিন মৃধা আজাদীকে জানান, টয়োটা হায়েস ১২ সিটের একটি গাড়ি। এতে রয়েছে উচ্চ ক্ষমতার অকটেন চালিত ২৬৯৪ সিসির ২.৭ লিটার ইঞ্জিন, ৫ স্পিড ম্যানুয়াল, হুইলবেস ২৫৭০, টর্ক২৪১/৩৮০০, ডাবল উইসবন লিফ স্প্রিং সাসপেনশন, ৫ মি. টার্নিং রেডিয়াস, ২ ডাব্লিউডি ড্রাইভিং সিস্টেম ও ৭০ লিটার ধারণ ক্ষমতার ফুয়েল ট্যাংক। টয়োটা হায়েস কমিউটার গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন বাদে মূল্য ৫০ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধছোট সাজ্জাদ ও তার স্ত্রীকে আরো দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন
পরবর্তী নিবন্ধসড়কে উল্টে গেল পিকআপ, দুই পান ব্যবসায়ীর মৃত্যু