নিজের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট–পিজিআরের সদস্যদের কর্মনিষ্ঠার মূল্যায়ন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তার জীবন যে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, সে কথা তিনি জানেন। আর তার নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনে যারা আসেন, তারাও ঝুঁকি নিয়েই আসেন। গতকাল রোববার ঢাকা সেনানিবাসে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট (পিজিআর) সদর দপ্তরে এর ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পিজিআরের সদস্যরা দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান, জাতির পিতার পরিবার, সকলের নিরাপত্তায় বিরাট অবদান রেখে যাচ্ছেন। তাছাড়া বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে তাদের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক সশস্ত্র বাহিনীকে আরও উন্নত ও বৈশ্বিক মানদণ্ডে গড়ে তোলার জন্য তার সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
বাসস লিখেছে, পিজিআরের সকল সদস্যের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী। পিজিআর সদস্যদের উন্নয়নে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, তাদের নিরাপদ জীবনের জন্য তিনি তার পরিবার পরিজনের জন্য যখন দোয়া করেন, তখন আশপাশে যারা দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন, তাদের জন্যও আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। আমি আমাদের প্রিয় গার্ডদের বলব, ‘নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাই গার্ডদের লক্ষ্য’ এই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অদ্যাবধি এই রেজিমেন্টের সদস্যরা সাহস, আন্তরিকতা, পেশাগত দক্ষতা, সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা এবং দেশপ্রেমের শপথে বলিয়ান হয়ে সর্বদা দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আপনাদের এই কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও পেশাগত অনুশীলনের মাধ্যমে এই গার্ড রেজিমেন্ট আগামীতে আরও দক্ষতা অর্জন করবে।
বাংলাদেশ শান্তিতে বিশ্বাস করে এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখে যাচ্ছে এবং কর্তব্য পালনের জায়গায় মানুষের হৃদয়ও তারা জয় করেছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সেজন্য তিনি গর্বিত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার কারণে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের ধারাটা সূচিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের আমলে দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, আজকে আমরা ৩৩তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। আজকে আমাদের বেকারত্বের হার কমে ৩ দশমিক ২ ভাগে দাঁড়িয়েছে। সেখানেও বহুমুখী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা আছে। দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালে থাকা ৪১ দশমিক ৬ ভাগ থেকে নামিয়ে ১৮ দশমিক ৭ ভাগে এনেছি।
তিনি বলেন, যদি করোনা মহামারী না হতো, ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ না হত, স্যাংশন–কাউন্টার স্যাংশন না হতো, আর মুদ্রাস্ফীতি না হতো, আমাদের লক্ষ্য ছিল এই দারিদ্র্যের হার আরও ২ শতাংশ কমানোর। কারণ, যে বড় দেশ বলেছিল, আমরা বাস্কেট কেস হব সেখানে দারিদ্র্যের হার ১৭ শতাংশ।
গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমি আন্তর্জাতিকভাবে যখন যেখানে গেছি এর প্রতিবাদ করেছি। এখনও করে যাচ্ছি। কারণ আমরা সবসময় ফিলিস্তিনিদের পক্ষে আছি। সবসময়ই আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করি এবং ন্যায়ের সঙ্গে থাকি।
সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সশস্ত্র বাহিনী আমাদের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। আমার বাবার হাতে গড়া সশস্ত্র বাহিনীকে আরও উন্নত ও আন্তর্জাতিক মানের করার জন্য আমরা ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছি।
দীর্ঘ একুশ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে সশস্ত্র বাহিনী আমার বাবার হাতে গড়া তাকে আরও উন্নত করা, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করার সেই পদক্ষেপ আমি নিয়েছিলাম পাশাপাশি বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নতি যাতে হয় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়ে পরিকল্পিতভাবে কাজ করা শুরু করি। জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা, স্বৈরশাসকদের সময়ে বারবার ক্যু এবং মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসার হত্যা, প্রবাসে ৬ বছর নির্বাসনে কাটাতে বাধ্য হওয়ার পর ৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দেশে ফেরার ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।
১৯৮১ সালের ৭ জুনের বক্তৃতার কথা মনে করিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সেদিন আমি বলেছিলাম যে, আমি সশস্ত্র বাহিনীতে আর কোনো বিধবার কান্না শুনতে চাই না। সন্ত্রানহারা পিতার বা পিতাহারা সন্তানের কান্না শুনতে চাই না। তখন থেকে আমার প্রচেষ্টা ছিল যারা আমাদের স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে সেখানে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং সেটাকে আরও উন্নত, সমৃদ্ধশালী করা। যেখানে সংঘাত নয়, শান্তি থাকবে। তখন থেকে একটাই চেষ্টা ছিল যে দেশ আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, সে দেশ কখনও ব্যর্থ হতে পারে না।
সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। দেশি–বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে পদ্মা সেতু করার কথা বলতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সেই অমর উক্তি ‘আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না’ স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সেটা আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি যে, কারো রক্তচক্ষুকে বাংলাদেশ ভয় পায় না। আমরা ইচ্ছা করলে নিজেরাও পারি। এ দেশকে কেউ আর পেছনে টানতে পারবে না। অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে। কারও কাছে মাথা নিচু করে নয়। ২০৪১ সাল নাগাদ জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ তথা আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব আমরা।