গাঁয়ের নাম শান্তিপুর। দূর পাহাড়ের পাশ ঘ্েঁষে এই গ্রাম গড়ে উঠেছে। গাঁয়ের শক্ত সমর্থ লোকেরা প্রতিদিন পাহাড়ে উঠে ঘুরে বেড়ায়। আসার সময় পাকা আম, পাকা জাম, পেঁপে আনারস ঝুড়ি ভরে নিয়ে আসে। জানা গেছে, পাহাড়ে আসা লোকদের মানসিক শান্তির জন্য এই গ্রাম গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে ছিল না কোনো ঝগড়া-ঝাটি। সকাল হলেই শিশুরা ছড়া কেটে মায়ের সাথে পড়াশোনা করতো। দূরের বাঁশিতে দুপুর বেলা সুরের পরিবেশ জাগাতো। রাতের বেলায় পূর্ণিমা চাঁদের আলোয় মাদুর বিছিয়ে ঠাকুরমারা রাজা-রাণীর গল্প শোনাতো।
ধীরে ধীরে এমন আনন্দের ঘাটতি দেখা যায়। কেউ কারো সাথে মিশতে আসে না। কারো মুখে মন জুড়ানো গান শোনা যায় না। সময়ে অসময়ে কলহ বেঁধে যায়। অতি বেসুরো মনে হয় সব। কারো মনে শান্তি নেই, সুখ নেই।
বছরের শেষের দিকে গায়ের মাঝে মেলা বসে। এ বছরও বসলো। এখানের পরিবেশটা ভিন্ন রকমের। গায়ের লোকেরা নিজেদের তৈরি শীতল পাটি, মাটির পুতুল, বাঁশের বাঁশি সাজিয়ে রাখে। দূরের গ্রাম হতেও লোকেরা আসে দলে-দলে, ওরা ভাজাবুট, জিলাপী, ডালের বড়া থালায় ভরে রাখে। একপাশে নাগরদোলার শব্দ। সব কিছু মিলে মিশে সুরেলা হয়ে উঠে। একজন লোক মেলাময় ঘুরে ঘুরে সুরে সুরে বলতে থাকে-
“আমার আছে জাদুর পুতুল, দুঃখ করে দূর,
ব্যথার কালি মুছে দেবে, ছড়িয়ে যাবে সুর,
বিনিময়ে চাইনা টাকা, চাইতো ভালোবাসা,
কে পেতে চাও দুখীর ঘরে খানিক আলোআশা।
লোকটির কথা কেউ বুঝতে পারলো না। তিনদিন ধরে মেলা চললো। মেলা শেষের শেষ বেলাতে একটি শিশু আলের পাশে বসে কাঁদছিল। লোকটি তার কাছে এসে থামলো। কোমল পরশে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।
: তুমি কাঁদছো কেনো খোকা-তোমার নাম কী-
: আমার নাম মিহির, আমি সারা বছর পয়সা জমিয়ে রেখেছিলাম, মাটির হাঁড়ি, মাটির পুতুল কেনার জন্য। কিনেছিলামও। কিন্তু হাত থেকে পড়ে সব ভেঙে গেলো, বন্ধুদের উপহার দেওয়া হলোনা-কেঁদে কেঁদে বলছিল।
: তুমি বন্ধুদের ভালোবাসো, মিহির; গাঁয়ের দুখীদের ভালবাস না?
: বাসিতো, খুব ভালোবাসি, কিন্তু আমিতো কিছু করতে পারি না। ওরা অনাহারে থাকে, ওরা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করে।
লোকটি তার কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ হতে একটি পুতুল বের করে দিলো। এটির সারা শরীর সোনালী আলোয় চিকচিক করছে। পুতুলটি মিহিরের দিকে এগিয়ে দিলো। এই নাও, এই পুতুল সবকিছু দিতে পারে।
বলতে না বলতে পুতুলটি মানুষের মতো করে বললো, “হাই মিহির, তোমার ভেঙে যাওয়া খেলনাপাতি এখন জোড়া লাগবে”, ওমা একী মূহুর্তেই মাটির পুতুল, মাটির হাঁড়ি জোড়া লেগে গেলো, লোকটি আবার বললো এটি জাদুর পুতুল, তাকে বলা মাত্র সে যেকোনো সমস্যা দূর করে দিবে।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো, মিহির গ্রামের ভেতর দিয়ে হেঁটে চললো, শোনা গেলো, কাছে কতেক লোকের ঝগড়া স্বর, মিহির পুতুলকে বললো-বন্ধু এদের ঝগড়া থামিয়ে দাও। পুতুল কিছু মন্ত্র পড়লো, অমনি সবাই ঝগড়া থামালো। স্বপ্ন সুখের গান গেয়ে উঠলো।