জাতীয় সরকার ও দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠা করতে চায় বিএনপি

মিডিয়া সেলের মতবিনিময়ে রূপরেখা উপস্থাপন

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৯ অক্টোবর, ২০২২ at ১০:১৮ পূর্বাহ্ণ

ক্ষমতায় গেলে জাতীয় সরকার গঠনের পাশাপাশি ‘দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট’ গঠন করবে বিএনপি। এছাড়া রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনয়নে সংস্কার করবে দলটি। এ জন্য সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধন এবং ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার’ ব্যবস্থা স্থায়ীভাবে প্রবর্তনসহ ২০ দফা প্রতিশ্রুতিও রয়েছে বিএনপির।

দলটির হাই-কমান্ড মনে করে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠন হলে দেশের রাজনীতিতে একটি গুণগত পরিবর্তন আসবে এবং সংসদীয় রাজনীতিতে ভারসাম্যমূলক পরিস্থিতি তৈরি হবে। একইসঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার রাজনীতি সচেতন মেধাবী মানুষগুলোর চিন্তা ও কর্মকে রাষ্ট্র ও জনগণের কল্যাণে কাজে লাগানো যাবে। এছাড়া প্রস্তাবিত জাতীয় সরকারে তৃণমূলে দুর্বল ছোট ছোট দলগুলোর প্রাজ্ঞ ও অভিজ্ঞদেরও স্থান দেয়া হবে।

বিএনপি’র মিডিয়া সেলের উদ্যোগে আয়োজিত ‘জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র গঠনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরবর্তীতে জাতীয় সরকার এবং দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ অপরিহার্য’ র্শীষক মতবিনিময় সভায় ‘রাষ্ট্র-সংস্কার’ এর এ রূপরেখা উপস্থাপন করা হয়। গতকাল বিকেলে চট্টগ্রাম ক্লাবে অনুষ্ঠিত সভায় চট্টগ্রামের বিএনপি নেতা এবং বিএনপিপন্থী পেশাজীবী ও সুধিজনরা এ রূপরেখার সঙ্গে একমত পোষণ করেন। মিডিয়া সেলের আহবায়ক সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপনের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সদস্য সচিব সাবেক এমপি শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। মিডিয়া সেলের সদস্য ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের সঞ্চালনায় দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠনের গুরুত্ব তুলে ধরেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। জানা গেছে, গত ২৮ মার্চ লন্ডন থেকে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জাতীয় সরকার গঠনের ঘোষণা দেন। এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা তৈরি করতে কাজ করছে দলটির নেতাকর্মীরা। এ লক্ষ্যে বিভাগীয় পর্যায়ে সভা করে তৃণমূলের মতামত নেয়া হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে গতকালকের সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
এ বিষয়ে মিডিয়া সেলের আহবায়ক জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, বিএনপি আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটিয়ে দল নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দিকে যাচ্ছে। আমরা মনে করি দল নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। আমরা চাই, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে সরকার গঠন হবে সে সরকার হবে ফ্যাসিবাদ বিরোধী একটি জাতীয় সরকার। সে জাতীয় সরকার জনগণের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে একটি জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবে। সে রাষ্ট্রের পার্লামেন্ট, বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ থেকে শুরু করে সকল ধরনের প্রতিষ্ঠানকে জনগণের কল্যাণ এবং গণতন্ত্রের কাজে ব্যবহার হবে তা নিশ্চিত করতে চাই।

ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, মানুষের ভোট নিয়ে যদি বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় যায় তাহলে জাতীয় সরকার গঠন করবে। এটা হবে জয়ী-বিজিতের সম্মেলন। দেশে অনেক ছোট ছোট রাজনৈতিক দল আছে যাদের প্রাজ্ঞ এবং অভিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতা আছে। এসব দল হয়তো ছোট এবং সারা দেশের তৃণমূলেও শাখা-প্রশাখা নাই। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এদের সাথে নিয়ে, একেবারে হাতে হাত ধরে জাতীয় সরকার গঠন করব। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের গুরুত্ব তুলে ধরে রুমিন ফারহানা বলেন, মানুষ ও দেশের কল্যাণে বিএনপি নিজের ক্ষমতাও খর্ব করতে পারে। নির্বাচনে যদি কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্টতা পায় তাহলে তাদের মধ্যে এক ধরনের স্বৈরতন্ত্রী মনোভাব গড়ে উঠে। সেটা না হওয়ার জন্য দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের ধারণা দিয়েছেন তারেক রহমান। এতে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স প্রতিষ্ঠা হবে। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টের দুটো ধাপ ‘উচ্চ কক্ষ’ এবং ‘নিম্ন কক্ষ’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিম্ন কক্ষে অনেক সময় জনগণ এ মুহূর্তে চাচ্ছে কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী হিসেবে রাষ্ট্রের জন্য ভালো না এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যা উচ্চ কক্ষে গিয়ে নাকচ হয়ে যায়। এখন উচ্চ কক্ষ কীভাবে গঠিত হবে, জনগণের সরাসরি ভোটে, জনপ্রতিনিধির ভোটে নাকি সিলেক্টেড পার্সন দিয়ে হবে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

মূল প্রবন্ধে শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বিএনপি’র ২০ দফা প্রতিশ্রতি তুলে ধরেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাষ্ট্র-রূপান্তরমূলক কর্মসূচির অংশ হিসেবে বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকার কর্তৃক ধ্বংসপ্রাপ্ত রাষ্ট্র ও প্রশাসনিক কাঠামোর সংস্কারের লক্ষ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে জয়লাভের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিএনপি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কার্যকরি উদ্যোগ গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি উচ্চারণ করেছে।

২০ দফা প্রতিশ্রুতিগুলো হচ্ছে- সাংবিধানিক সংস্কার কমিশন, প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন, জুডিশিয়াল কমিশন, মিডিয়া কমিশন, অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন, ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার’ ব্যবস্থা স্থায়ীভাবে প্রবর্তন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ সকল প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়ন, স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্দেশ্যে ‘নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন’ সংশোধন, আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধন, সংসদীয় কমিটির ভেটিং সাপেক্ষে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহে নিয়োগ, বিচারবিভাগের জন্য সুপ্রীম কোর্টের নিয়ন্ত্রণে একটি পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা ও যোগ্যতমদের বিচারপতি নিয়োগের লক্ষ্যে সংবিধানের ৯৫ (গ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘বিচারপতি নিয়োগ আইন’ প্রবর্তন, দুর্নীতি প্রতিরোধে সংবিধান অনুযায়ী ‘ন্যায়পাল’ নিয়োগ, নবায়নযোগ্য জ্বালানী নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং এই খাতের দায়মুক্তি আইনসহ সকল কালাকানুন বাতিল, বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশ ফার্স্ট’ নীতি গ্রহণ, সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সুসংগঠিত ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা, ক্ষমতার ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে অধিকতর স্বাধীন ও শক্তিশালী রূপে গড়ে তোলা এবং জাতীয় সংসদে নারী আসন বৃদ্ধি করা। আলোচনায় অংশ নেন মিডিয়া সেলের সদস্য কাদের গণি চৌধুরী, বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, নগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, চবি রসায়ন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক হায়াত হোসেন, চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. জসিম উদ্দিন, এড. এ এস এম বদরুল আনোয়ার, অধ্যাপক ডা. আবদুল আলিম, ড. ছিদ্দিক আহমেদ চৌধুরী, এড. আবদুস সাত্তার, ডা. তমিজ উদ্দিন আহমেদ মানিক, জাহিদুল করিম কচি, ডা. খুরশিদ জামিল চৌধুরী, এড. মফিজুল হক ভুঁইয়া, অধ্যাপক এস এম নসরুল কদির, এড. এনামুল হক, মো. শাহনওয়াজ, ইঞ্জি. সেলিম মোহাম্মদ জানে আলম, ডা. কামরুন্নাহার দস্তগীর, এড. নাজিম উদ্দীন চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন নগর বিএনপি’র সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপরিবহনে বিএনপির লোকজনও আছে, তারাও ধর্মঘট ডাকছে : তথ্যমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধসরকার খুব কঠিন অবস্থায় পড়েছে : ফখরুল