জাতীয় নির্বাচনের দিন বা আগে গণভোট

সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন । ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ, হস্তান্তর প্রধান উপদেষ্টার কাছে । সংবিধান সংস্কারে বিকল্প দুই প্রস্তাব । গণভোটে ‘না’ জিতলে কী হবে, যা বললেন আলী রীয়াজ

আজাদী ডেস্ক | বুধবার , ২৯ অক্টোবর, ২০২৫ at ৭:৫০ পূর্বাহ্ণ

সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন এবং ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন বা আগে জুলাই সনদ নিয়ে গণভোট আয়োজনের সুপারিশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গতকাল মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশমালা হস্তান্তরের পর এক ব্রিফিংয়ে সুপারিশের কিছু বিষয় সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ।

তিনি বলেন, সাংবিধানিক আদেশ দেওয়ার পর এবং জাতীয় সংসদে সাধারণ নির্বাচনের আগে সরকার যেন গণভোট অনুষ্ঠান করে, আমরা এটা লিখিতভাবে বলেছি। এর বাইরে আমরা সরকারকে আজ বলেছি, অবিলম্বে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সাথে আলাপআলোচনা করে একটি তফসিল, (গণভোট) নির্বাচনের তফসিল তৈরি করে ফেলে।

পরে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পাঠানো এক স্পষ্টীকরণ বার্তায় বলা হয়, ঐকমত্য কমিশনের সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক আলী রীয়াজের একটি বক্তব্য থেকে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। পরবর্তীতে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, নির্বাচনের দিনসহ তার আগে যেকোনো দিন সরকার জুলাই জাতীয় সনদের ওপর গণভোটের আয়োজন করতে পারেএই মর্মে ঐকমত্য কমিশন সুপারিশ দিয়েছে। খবর বিডিনিউজের।

ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিবর্তনের জন্য জনগণের ক্ষমতা যেন ব্যবহৃত হয়, সেই প্রস্তাব করেছেন তারা। গণভোটের ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এখনো আছে। এ প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গণভোটের প্রয়োজন এবং গণভোট অনুষ্ঠান সকলেই মনে করেছে সবার অংশগ্রহণের জন্য এটা নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যকীয়। সে বিবেচনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গণভোটের প্রস্তাব বা সুপারিশ করেছে। তবে ওই আদেশ জারির পর কোন দিন গণভোট হবে, সে সিদ্ধান্ত সরকার নেবে। সরকারকে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য বলেছি।

রোজার আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে। তার আগে আরেকটি নির্বাচন করতে গেলে বিপুল অর্থের অপচয় হবে বলে মন্তব্য করেছিলেন একজন নির্বাচন কমিশনার।

এক বছরের আলোচনার ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কারের যেসব উদ্যোগ নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার সম্বলিত জুলাই জাতীয় সনদ ১৭ অক্টোবর স্বাক্ষরিত হয়। সংস্কার উদ্যোগগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে সে বিষয়ে জুলাই সনদে কিছু বলা হয়নি। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতা থাকায় আলাদাভাবে আলোচনা করে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে ঐকমত্য কমিশন তাদের সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে। সেই সুপারিশমালা গতকাল প্রধান উপদেষ্টার হাতে তুলে দেয় ঐকমত্য কমিশন। জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দল সাংবিধানিক আদেশ জারি করে গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছিল। আর বিএনপিসহ কয়েকটি দল এর বিরোধিতা করে আসছিল। শেষ পর্যন্ত গণভোটের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে বলে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হলেও সেই গণভোট কবে, কীভাবে হবে তা নিয়ে দলগুলোর মতভিন্নতা ছিল। জামায়াতসহ কয়েকটি দল ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে আগামী নভেম্বরেই গণভোট চায়। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতেও তারা আন্দোলন করছে। অন্যদিকে এ দুই বিষয়ে প্রবল আপত্তি আছে বিএনপির। নভেম্বরে গণভোটের দাবির মধ্যে অন্য কোনো মাস্টার প্ল্যান আছে কিনা সে প্রশ্নও তুলেছেন বিএনপির নেতারা।

গণভোট কীভাবে হবে সেই বিবরণ দিয়ে ব্রিফিংয়ে আলী রীয়াজ বলেন, সরকার একটি আদেশ করবেন। সেই আদেশের অধীনে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। গণভোটে একটি মাত্র প্রশ্ন থাকবে। তবে ওই আদেশের তফসিলে যে ৪৮টি বিষয় আছে, সেগুলো অন্তর্বর্তী সরকার বিল আকারে প্রস্তুত করেও জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে পারেন। যখন বিল হিসেবে উপস্থাপিত হবে এবং গণভোটের মধ্য দিয়ে জনগণের সম্মতি লাভ করা যায়, তাহলে ওই বিলটি সংবিধান সংস্কার পরিষদের কাজে সহযোগিতা করবে।

তিনি বলেন, সংবিধান সংস্কারের জন্য যে পরিষদ তৈরি হবে, সেই পরিষদ জুলাই জাতীয় সনদের স্পিরিটকে ধারণ করে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন সংযোজন পরিবর্জন পরিবর্তন করতে পারবেন। তবে এই বিল যেহেতু জনগণের দ্বারা অনুমোদিত হয়, তাহলে এটা তাদের সাহায্য করবে। সংবিধান সংশোধনের যে বিষয়গুলোতে জনগণ গণভোটের মাধ্যমে সম্মতি দেবে, সংবিধান সংস্কার পরিষদ যদি ২৭০ দিনের মধ্যে সেগুলো বাস্তবায়নের বিষয়ে তাদের দায়িত্ব সম্পাদন করতে না পারে, তাহলে গণভোটে পাস হওয়া বিলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদগুলোকে প্রতিস্থাপন করবে। ২৭০ দিন দায়িত্ব পালনের পর সংবিধান সংস্কার পরিষদ তার কার্যক্রম সমাপ্ত করবে। জাতীয় সংসদের সদস্যরাই সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্য হবেন। আমরা প্রস্তাব করেছি, জাতীয় সংসদের সদস্যরা একাদিক্রমে জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে এবং সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্য হিসেবে আলাদাভাবে শপথ গ্রহণ করবেন। সংবিধান সংস্কার পরিষদ তার নিজস্ব রুলস অফ প্রসিডিউর তৈরি করবে।

তিনি বলেন, জাতীয় সংসদের যিনি স্পিকার হবেন, তিনি সংবিধান পরিষদের সভাপতিত্ব করবেন। তার অনুপস্থিতিতে ডেপুটি স্পিকার ওই পরিষদের সভায় সভাপতিত্ব করবেন। তাদের উভয়ের অনুপস্থিতিতে সংস্কার পরিষদে গঠিত সভাপতি প্যানেল থেকে সভাপতিত্ব করবেন। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস যে সংবিধান সংস্কার পরিষদ তাদের দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবেন এবং কোনো অবস্থাতেই এমন পরিস্থিতির সূচনা হবে না যে সরকারের দেওয়া বিলগুলোকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাস্তবায়িত করতে হবে। আমরা এটা আস্থা রাখতে চাই।

সংবিধান সংস্কারে বিকল্প দুই প্রস্তাব

জুলাই সনদে সংবিধান সংস্কারে যেসব সুপারিশ এসেছে তার বাস্তবায়ন ও আইনি ভিত্তি দিতে দুটি বিকল্প পদ্ধতি বাতলে দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গতকাল কমিশনের তরফে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে দেওয়া চিঠিতে জুলাই সনদের বাস্তবায়নের সুপারিশে পদ্ধতিগুলো তুলে ধরা হয়েছে। কমিশনের ভাষ্য, জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫এ সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে সরকার দুটি বিকল্প পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন ও আইনগত ভিত্তি দিতে পারে।

বিকল্প প্রস্তাব: . জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫এ সন্নিবেশিত সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত বিষয়গুলো কার্যকর করার উদ্দেশ্যে সরকার ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫’ শিরোনামে একটি আদেশ জারি করবে। খ. জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগের উদ্দেশ্যে ওই আদেশ এবং তার তফসিলএ সন্নিবেশিত জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার প্রণীত একটি পূর্ণাঙ্গ খসড়া বিল গণভোটে উপস্থাপন করা হবে। গ. বাস্তবায়ন আদেশ জারির পর জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জাতীয় সংসদ গঠিত হওয়ার পাশাপাশি একইসঙ্গে একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে, যা সংবিধান সংস্কার বিষয়ে গাঠনিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে। ঘ. বাস্তবায়ন আদেশ অনুসারে অনুষ্ঠিত গণভোটে যদি ইতিবাচক সম্মতি পাওয়া যায় তাহলে সংবিধান সংস্কার বিলটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ তার দায়িত্ব পালনে সহায়ক হিসেবে বিবেচনা করবে। তবে সংবিধান সংস্কার পরিষদ প্রথম অধিবেশন শুরুর তারিখ হতে ২৭০ পঞ্জিকা দিবসের মধ্যে যদি সংস্কার সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে গণভোটে অনুমোদিত সংবিধান সংস্কার বিলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে।

বিকল্প প্রস্তাব: . জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫এ সন্নিবেশিত সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত বিষয়গুলো কার্যকর করার উদ্দেশ্যে সরকার ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫’ শিরোনামে একটি আদেশ জারি করবে। আদেশের একটি খসড়া প্রস্তাবে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। খ. জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগের উদ্দেশ্যে এই আদেশ এবং তার তফসিলএ সন্নিবেশিত জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো গণভোটে উপস্থাপন করা হবে। গ. বাস্তবায়ন আদেশ জারির পর জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে, যা সংবিধান সংস্কার বিষয়ে গাঠনিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে। ঘ. পরিষদ প্রথম অধিবেশন শুরুর তারিখ থেকে ২৭০ পঞ্জিকা দিবসের মধ্যে জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে ওই আদেশের তফসিলএ বর্ণিত জুলাই জাতীয় সনদ অনুসারে সংবিধান সংস্কার সম্পন্ন করবে এবং তা সম্পন্ন করার পর পরিষদের কার্যক্রম সমাপ্ত হবে।

বিকল্প প্রস্তাবের পক্ষে গণভোটে কী প্রশ্ন উপস্থাপন করা হবে তাও তুলে ধরে কমিশন। তাদের তৈরি করা প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং উহার তফসিল১ এ সন্নিবেশিত সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবসমূহের প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করিতেছেন?

গণভোটে ‘না’ জিতলে কী হবে?

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের যে প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে ইতিবাচক ফল না এলে কী হবে, এমন প্রশ্নে জনগণের ওপর আস্থা রাখার কথা বলেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। গতকাল এই প্রশ্নে তিনি বলেন, গণভোটে পাস না হলে গণভোট পাস হবে না। তার মানে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে।

লাতিন আমেরিকার দেশ চিলিতে সংবিধান নিয়ে দুইবার গণভোট ব্যর্থ হওয়ার উদাহরণ টেনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই অধ্যাপক বলেন, প্রথমবার চিলিতে একটা সংবিধান তৈরি করে দেওয়া হলো গণভোটে, সেটা হারল। কেউ কেউ বললেন, এটা অনেক বেশি দক্ষিণপন্থি হয়ে উঠেছিল অথবা বামপন্থি হয়ে উঠেছিল। তারপর আবার এটা সংশোধনসংযোজন করা হয়, করে আবার গণভোটে দেয়া হয়েছিল। আবারও ফেল করেছে। পাস না করলে তার মানে হচ্ছে যে, জনগণ তাহলে গ্রহণ করছেন না। এইজন্য আমি বলছি আবার, জনগণের ওপর আস্থা রাখুন।

সবারই পক্ষপাত থাকতে পারে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আপনার অবস্থান ভিন্ন হতে পারে। আপনি দেবেন ‘না’ ভোট। আমি দেব বা আপনি দেবেন না। ফলে এটা হলে কি হবে এই বিবেচনা না করা ভালো।

সংবিধান সংশোধন বিষয়ক ৪৮টি প্রস্তাব ‘প্যাকেজ আকারে’ গণভোটের জন্য থাকবে বলে এক প্রশ্নের উত্তরে জানান তিনি। তিনি বলেন, যেকোনো গণভোটের ক্ষেত্রে এক অথবা দুইটা প্রশ্ন থাকে। কোথাও একটু বেশিও হয়েছে। আইসল্যান্ডের ক্ষেত্রে সম্ভবত উদাহরণ আছে যে ছয়টা প্রশ্ন ছিল। কিন্তু আমাদের সুপারিশ হচ্ছে একটা প্যাকেজ হিসেবে একটি প্রশ্ন যে, ‘আপনি এই আদেশ এবং এই আদেশের তফসিলে যে বিষয়গুলো সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত আছে তার প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করছেন কিনা’। প্যাকেজের কোনো অংশের ওপর একমত এবং অন্য অংশের ওপর ভিন্নমতের হিসাব কীভাবে হবে, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আপনি যে আশঙ্কার কথা বলছেন, এটার জন্য এটা হবে, ওটার জন্য ওটা হবে। যেকোনো রেফারেন্ডামের ক্ষেত্রে এই বিষয়টা থাকে। আমি তুরস্কের ২০১৬ সালের রেফারেন্ডামের উদাহরণ দিয়েছি, ওখানে ২১টি বিষয় ছিল এবং সেটি অত্যন্ত মার্জিনালি জিতেছিল, ৫১% মাত্র। সেক্ষেত্রে হতে পারে যে, ওই ২১টি বিষয়ের মধ্যে কেউ কেউ একটি বিষয়ে একমত, ১৯টি বিষয়ে, ২০টি বিষয়ে একমত। তারপর ভোট দিয়েছেন কীভাবে দিয়েছেন, আমি জানি না।

আলী রীয়াজ বলেন, বাংলাদেশে অতীতে এ রকম নির্বাচন হয়েছে, সেগুলোর উদাহরণ আমি দিচ্ছি না বিভিন্ন কারণে। কিন্তু পৃথিবীতে বাংলাদেশই প্রথম গণভোট করবে না যেখানে একটিমাত্র প্রশ্ন দিয়ে অনেক বিষয়কে ক্যাপচার করার চেষ্টা হচ্ছে। ৪৮টি বিষয় একই প্যাকেজে আনাটা গণভোটের প্রশ্ন হিসাবে জটিল হয়ে যাবে কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যেকোনো গণভোট সাধারণত এক বা দুটো প্রশ্ন হয়, ক্ষেত্রবিশেষে তার চেয়ে বেশি হয়েছে। দুয়েকটি, পাঁচটা বা ছয়টা প্রশ্ন ছিল। কিন্তু এযাবৎকালে ১৭৮৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যে তথ্য বা গবেষণার বিষয়গুলো আমার কাছে জানা আছে, তার ওপর ভিত্তি করে আমি বলতে পারি, অধিকাংশ প্রশ্ন আসলে একটা।

এক বা দুই প্রশ্ন হলেও এর পেছনে অনেক প্রশ্ন থাকে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমি একটু উদাহরণ দিলে আপনি বুঝতে পারবেন। ২০১৬ সালে তুরস্কে যে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেটা প্রশ্ন একটাই ছিল। কিন্তু সেই এক প্রশ্নে ২১টি বিষয়ে সংশোধনের কথা বলা হয়েছে। তাহলে এই যে, আপনি বা আমিআমরা যদি মনে করি জনগণ এগুলো বুঝতে পারবেন না। জনগণের ওপর আস্থা রাখুন। বাংলাদেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধ করেছে, বাংলাদেশের মানুষ নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ ফ্যাসিবাদী শাসনকে প্রতিরোধ করেছে এবং যখনই সুযোগ তৈরি হয়েছে তখন নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় তারা তাদের রায় দিতে পেরেছে।

জনগণ বুঝতে পারবে না, এমন কথা বললে নিজের অস্বস্তির কথা তুলে ধরে আলী রীয়াজ বলেন, বোঝাবার ক্ষেত্রে সরকারের একটা দায়িত্ব আছে। আমি বোঝাবার অর্থে বলছি না, আমি বলছি সরকারের দায়িত্ব হবে এগুলো (গণভোট বিষয়ক প্রশ্ন) যতটা দ্রুত সম্ভব, যতটা সহজলভ্য করে যেভাবে হোক প্রত্যেকের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেওয়া। আজকে আমরা যখন সুপারিশটা সরকারকে দিয়েছি, সেখানে এটা আমরা সুস্পষ্টভাবে, অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বলেছি, এটা আপনারা করবেন, এটা আপনাদের কাজ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলাদেশের আজ টিকে থাকার লড়াই
পরবর্তী নিবন্ধজুলাই সনদের বাস্তবায়ন নতুন বাংলাদেশের পথ দেখাবে : প্রধান উপদেষ্টা