জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্মরণে

আইভি সাহা | সোমবার , ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ১০:৫৪ পূর্বাহ্ণ

বাংলা সাহিত্যের সাম্যের কবি, মানবতার কবি, দ্রোহের কবি, প্রেমের কবি, বিদ্রোহী কবি, সংগীত ভুবনের সুমহান অধিপতি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। দারিদ্রতাকে নিত্য সঙ্গী করে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বেশি দূর হয়তো এগোতে পারেনি। জীবনের ছন্দ পতন হয়েছে বার বার। কিন্তু ব্যক্তি জীবনে তিনি পড়াশোনা করেছেন প্রচুর। সাহিত্যের সব ভান্ডারে তাঁর অবাধ বিচরণ ছিল। নিজেকে সমৃদ্ধ করেছেন সকল খানে, সকল কাজে সাহিত্যের রস আস্বাদন করেছেন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে। নানান প্রতিকূলতা সত্বেও তাঁর মেধা মনন ও দক্ষতা দিয়ে অবিনশ্বর লেখনীর মাধ্যমেসব্যসাচী নজরুলহিসেবে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন তিনি নিজেকে। জীবিকার প্রয়োজনে বহু বিচিত্র পেশায় কাজ করে করে তাঁর চিন্তা চেতনা ও অভিজ্ঞতার জগৎকে করেছেন আরও বেশী সমৃদ্ধ। কবির জীবন ছিল ভীষণ ভাবে টানাপোড়েন নিয়ে এবং বহুবিধ অভিজ্ঞতার বৈচিত্র্যে ভরা। সুখদুঃখ, প্রেমবিরহ,অভাবঅনটন, হাসিকান্না সব কিছু মিলেমিশে একাকার ছিল কবির জীবনে। প্রকৃতি প্রেমিক কবি বৃষ্টি, কদমকেয়া, বেলী, জুই, চামেলি, পিউকাঁহা, কোকিল, নদনদী, সমুদ্র সবকিছু যেন নিজের আপন বলয়ে রেখে কাব্য রচনা করেছিলেন আপন মনের মাধুরি মিশিয়ে।

বাংলা সাহিত্যে কবি নজরুল এর আগমন ছিল উল্কার মতো। অন্যায়, অসত্য, অবিচার, অসাম্যের বিরুদ্ধে চরম বিদ্রোহ নিয়ে। তাই তো কবির লেখনিতে শুনতে পাই, ‘বল বীর চির উন্নত মম শির’ বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংগীত ও সমাজ সাংস্কৃতির উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন তিনি। বাঙালী জাতির হৃদয়ে নিজস্ব ইতিহাসঐতিহ্যকে ভালোবাসার প্রেরণায় সঞ্চালিত করেছেন। তাই কবি লিখেছেন, ‘গাহি সাম্যের গানমানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান’। কবি বাঙালী জাতিকে শেকল ভাঙতে গান শুনিয়ে ছিলেন, ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত, আমরা আনিব রাঙা প্রভাত। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় কবির গান, কবিতা মুক্তি যোদ্ধাদের জন্য ছিল শক্তি ও অনুপ্রেরণা। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রচারিত হয়েছে তখন, দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার, লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথি যাত্রীরা হুঁশিয়ার। কিংবা রণ সংগীত ‘চল চল চল ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল’ ‘কারার ঐ লৌহকপাট ভেঙে ফেল কর রে লোপাট’ আরো অনেক গান ছিল তখন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য উজ্জীবনী শক্তি ও সাহস হিসেবে। কবি একাধারে গজল, শ্যামা সংগীত, দেশাত্মবোধক, আধুনিক, ইসলামীক সংগীতসহ সব ধরনের গান রচনা করেছেন। যা তিনি নিজেই সুর দিতেন ও গাইতেন। তিনি আধুনিক বাংলা গানের রস তত্ত্বে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন।

যা কিছু গানের মধ্যে আছে তার সব কিছুই নজরুল ভান্ডারে আছে। যা কিছু নজরুলে নেই,তা গানেও নেই। কী বাণী কী সুর! তার গানে ও কাব্যে আছে বিপুল প্রাণাবেগ, আছে সাম্য, মৈত্রী ও মানবতার জয়গান। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে লেখার কোন শেষ নেই। আমার এই লেখাটির মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে এবং আমার সন্তানকে জানাতে চাই, জাতীয় কবির চিরন্তনী বাণী ও সুর এবং লেখাগুলোকে যেন চর্চা করে সঠিক ভাবে। কবির প্রতি রইল আমার বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশরতের অদৃশ্য আয়না
পরবর্তী নিবন্ধশরৎ বন্দনা