জাতীয় পর্যায়ে ক্রমশ তলানিতে যাচ্ছে চট্টগ্রামের ক্রিকেট

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শনিবার , ৬ এপ্রিল, ২০২৪ at ১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ

গত রোববার কঙবাজারে অনুষ্ঠিত হয়েছে ৪২তম জাতীয় ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলা। এবারের জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্বের আসরে সবার সেরা হয়েছে বরগুনা জেলা দল। এই খবরটি চাওর হওয়ার পর থেকেই দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে যেন একরকম তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এখন বরগুনার মত জেলা জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে। অথচ চট্টগ্রামের মত জেলা দল কোথায় সে প্রশ্ন যেন ঘুরে ফিরে আসছে। দেশের অন্য জেলা দলগুলোকেও টপকে বরগুনার মত জেলা যখন চ্যাম্পিয়ন হয় তখন বুঝতে বাকি থাকেনা দেশের ক্রিকেট এখন আর আগের মত কয়েক জেলায় সীমাবদ্ধ নেই। অন্য জেলাগুলো এগিয়ে যাচ্ছে। যারা এতকাল নিজেদের ঐতিহ্যবাহি হিসেবে দাবি করতো তারা ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রামের কথাই ধরুন না। একটা সময় ছিল যখন জাতীয় দলে চট্টগ্রামের ছয় জন ক্রিকেটার খেলতো, জাতীয় পর্যায়ে চট্টগ্রামের দাপট ছিল সে সব এখন যেন রূপকথায় পরিণত হয়েছে। বাস্তবে চট্টগ্রামের ক্রিকেট এখন একেবারে তলানিতে। যেন নিচের দিকে নামতে আর কোন জায়গা নেই।

এবারের ৪২তম জাতীয় ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপের কথাই ভাবুন না। প্রাথমিক রাউন্ডে চট্টগ্রামের প্রতিপক্ষ ছিল মৌলভী বাজার জেলা, রংপুর জেলা এবং নাটোর জেলা। এই তিন দলের কাছেই হেরে চট্টগ্রাম জেলা দল বিদায় নেয় একেবারে প্রাথমিক পর্ব থেকে। শুধু যে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছে তা কিন্তু নয়, চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম স্তর থেকে একেবারে দ্বিতীয় স্তরে নেমে গেছে দেশের সবচাইতে ধনী ক্রীড়া সংস্থা দলটি। যা সংস্থাটির কর্মকর্তাদের কতটা স্বস্তি দেবে সেটা তারাই বলতে পারবেন। অথচ নিয়মিতই ক্রিকেট লিগ হচ্ছে, তাও একেবারে প্রিমিয়ার, প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ এমনকি তৃতীয় বিভাগও। কিন্তু জাতীয় পর্যায়ে ফল জিরো। মাঝে মধ্যে বয়স ভিত্তিক দু’একটি দল জেলা কিংবা বিভাগীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন কিংবা রানার্স আপ হয়ে আসলেও পরের মৌসুম থেকে তাদের আর খুজে পাওয়া যায় না।

গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে জাতীয় পর্যায়ে চট্টগ্রাম জেলা দল কোন সফলতার মুখ দেখেনি। বরং দিন দিন নিচের দিকে নেমেছে। কেমন এমন হচ্ছে? সে প্রশ্নের উত্তর খোজার চেষ্টা করা হয়েছিল। চট্টগ্রামের সাবেক ক্রিকেটারদের মতে এই অবস্থার পেছনে জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্রিকেট কমিটি এবং জেলার ক্রিকেট কর্মকর্তাদের উদাসিনতা সবচাইতে বেশি দায়ি। অন্য জেলা গুলো বছরের শুরু থেকে জাতীয় পর্যায়ে কোন কোন টুর্নামেন্ট খেলতে হবে সে সব নিয়ে চিন্তা করে দলের কার্যক্রম পরিচালনা করে। কিন্তু চট্টগ্রামে টুর্নামেন্ট শুরু একদিন আগে যেনতেনভাবে একটি দল গঠন করে রাতের বাসে তুলে দেওয়া হয়, যারা পরদিন গিয়ে মাঠে নামে। এই যদি হয় একটি দলের অবস্থা তাহলে ফল আশা করা বোকামিই হবে। অথচ চট্টগ্রামে ক্রিকেটারের অভাব নেই। শুধু ক্রিকেটার নয়, মানসম্মত ক্রিকেটারের অভাব নেই। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে খেলতে যাবে একটি দল, অথচ বাজেট প্রণীত হয় না। ক্রিকেট সম্পাদক কিংবা অন্য কোন কর্মকর্তার পকেট থেকে টাকা দিয়ে দল পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে নাকি বাজেট সমন্বয় করা হয়। ঠিক যেন কোন পকেট ক্লাব। যেমন ক্লাব জেলা ক্রীড়া সংস্থায় রয়েছে অসংখ্য।

দলের সাথে যাদের কোচ কিংবা ম্যানেজার মনোনীত করা হয় তারাও যান না। চট্টগ্রামে বসে টেলিফোনে খবর নেন দল কেমন করেছে। আর ক্রিকেটারদেরতো অভিযোগের অন্ত নেই। ক্রিকেটারদের সাথে খারাপ ব্যবহারের অভিযোগ করা হয়ে থাকে বারবার। দেওয়া হয়না সময় উপযোগী কোন টিএ বা ডিএ। ক্রিকেট বোর্ড থেকে যা পাওয়া যায় তা দিয়ে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এভাবেতো আর যাই হোক একটি ইভেন্টে সফলকতা আশা করা যায় না। গত দশ বছরে ক্রিকেটে কোন প্রশিক্ষণ হয়নি। বয়স ভিত্তিক কোন টুর্নামেন্ট এলে তড়িগড়ি করে একটি দল বানিয়ে তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যেন কাজ সারা হয়ে গেছে। আর তাতে ফল যা হওয়ার তাই হয়।

ক্রিকেট কিংবা ফুটবল সফলতা যেন সোনার হরিণ চট্টগ্রাম জেলার জন্য। অন্য ইভেন্টগুলো কথা বাদই দিলাম। অথচ যেকোন লিগ বা টুর্নামেন্ট আয়োজনের সময় সিজেকেএস কর্মকর্তারা বলেন, দীর্ঘমেয়াদী অনুশীলনের মাধ্যমে খেলোয়াড় সৃষ্টি করা হবে। সে প্রশিক্ষণ আর আলোর মুখ দেখে না। যার পরিনতি জাতীয় পর্যায়ে বারবার অবনমিত হচ্ছে চট্টগ্রাম জেলা দল। যখন কোন একটি দল জেলা, বিভাগ বা জাতীয় পর্যায়ে খেলতে যায় তখন যে বাজেট দেওয়া হয় সে বাজেট পাশ করতে নাকি ঘাম ছুটে যায়। অথচ কর্মকর্তাদের কক্ষ বানাতে লক্ষ টাকার বাজেট হলেও নাকি সেটা এক মুহূর্তে পাশ হয়ে যায়। তেমনই অভিযোগ করেছেন গতকাল একাধিক ইভেন্ট সম্পাদক। তাদের অভিযোগ জেলা ক্রীড়া সংস্থায় খেলাধুলার জন্য খরচ করার চাইতে অবকাঠামোগত উন্নয়নে খরচ করতেই যেন কর্মকর্তারা বেশি আগ্রহী। তাতে স্টেডিয়ামে কর্মকর্তাদের বসার ঘর ঝকঝকে তকতকে হচ্ছে কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে চলে যাচ্ছে অন্ধকারে। আর সে অন্ধকার থেকে কবে নাগাদ মুক্তি মিলবে বা আলোর পথে আসতে পারবে কে জানে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদলের টেস্ট পারফরম্যান্স নিয়ে হতাশ প্রধান নির্বাচক
পরবর্তী নিবন্ধ৪ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল নিউইয়র্ক