এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ করতে পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারী জাতীয়করণ প্রত্যাশী মহাজোট। গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে বৈষম্য নিরসনে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জোটের নেতারা এসব দাবি জানান। খবর বাংলানিউজের।
দাবিগুলো হলো– ১. আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীদের উৎসবভাতা, বাড়িভাড়া ও চিকিৎসাভাতা জাতীয় বেতন স্কেলের আওতায় শতভাগে উন্নীত করতে হবে। ২. এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীদের সব নিয়োগ সরকারের হাতে নিয়ে বদলি ও প্রমোশন অনতিবিলম্বে চালু করতে হবে। বিশেষ করে এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীদের ১ জানুয়ারি, ২০২৪ থেকে ইএফটি–এর মাধ্যমে বেতন–ভাতা দিতে হবে। ৩. মাধ্যমিক ডিজি আলাদাকরণসহ এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের শিক্ষা প্রশাসনে আনুপাতিক হারে প্রেষণে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া এমপিওভুক্ত শিক্ষায় উচ্চতর গ্রেডে কর্মরতদের তদারকির জন্য কোনো নিম্নতর গ্রেডের সরকারি কর্মকর্তা নিয়োগ/দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। ৪. নতুন কারিকুলামে বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে প্রথম ও দ্বিতীয়পত্রের সমন্বিত সিলেবাস ও নম্বরপত্র (৫০+৫০) নির্ধারণ করা হয়। গণিতের প্রতিটি অধ্যায়ে শিক্ষার্থীদের অনুশীলনের জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক গণিত প্রশ্নাকারে সন্নিবেশকরণ। এসএসসি পরীক্ষার সিলেবাসের আদলে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির প্রত্যেকটি বিষয়ে মানবণ্টন দেওয়া পূর্বক বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার জন্য সিলেবাস ও মানবণ্টনের নির্দেশনা দিতে হবে। ৫. এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সরকারি স্কুলের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের মতো বেতন স্কেল ৬ নম্বর গ্রেডে উন্নীতকরণসহ দুটি উচ্চতর গ্রেড দেওয়ার ব্যবস্থাকরণ ও সহকারী প্রধান শিক্ষকদের দুটি উচ্চতর গ্রেড দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জোটের সদস্য সচিব ও বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির মহাসচিব জসিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, বৈষম্য নিরসনসহ এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ এখন সময়ের দাবি। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক–কর্মচারীরা বর্তমানে সরকারি কোষাগার থেকে শতভাগ বেতন, বার্ষিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ও বার্ষিক ২০ শতাংশ বৈশাখী ভাতা পায়। তবে তারা (এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীরা) বাড়ি ভাড়া পায় মাসিক ১০০০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা পায় মাসিক ৫০০ টাকা, উৎসব ভাতা পায় ২৫ শতাংশ, যা অমানবিক। উৎসব ভাতা ও বাড়িভাড়া স্কেলভিত্তিক দেওয়াসহ চিকিৎসা ভাতা ১৫০০ টাকায় উন্নীত করলেই এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণের কাজ অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে সরকার এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো আয় সরকারি কোষাগারে জমা নেয় না। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয় যদি সরকারের কোষাগারে জমা নেওয়া হয় তাহলে সরকারের পক্ষে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ সহজতর হবে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কোনো প্রতিনিধি সরকারের কোনো দপ্তরে ডেপুটিশনে না থাকায় তাদের অধিকারের কথা সরকারের কোনো মহলে উপস্থাপন ও আলোচনা করা হয় না। তাই এমপিওভুক্ত শিক্ষক সমাজ মনে করে মাধ্যমিক ডিজি আলাদা করা হোক এবং এটি মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের মাধ্যমে পরিচালনাসহ এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রতিনিধি আনুপাতিক হারে সেখানে প্রেষণে নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। তাহলেই শিক্ষার গুণগতমানের উন্নয়নসহ বর্তমানে চালুকৃত নতুন কারিকুলামের সফল বাস্তবায়ন হবে। বিশেষ করে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ হলে এদেশের সব শ্রেণি–পেশার মানুষের সন্তানরা শহর ও গ্রামে একই মানের সরকারি স্কুলে কম বেতনে পড়ালেখা করতে পারবে, অভিভাবকদের শিক্ষা ব্যয় কমবে।
জোটের আহ্বায়ক ও বেসরকারি শিক্ষক–কর্মচারী ফোরামের সভাপতি অধ্যক্ষ মো. মাইন উদ্দীনের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অধ্যক্ষ মওলানা দেলোয়ার হোসেন আজিজী, প্রফেসর ড. হানিফ খান, উপাধ্যক্ষ মো. আবদুর রহমান, ড. মো. ইদ্রিস আলী প্রমুখ।