জাতিসংঘ পার্ককে সবুজ উদ্যানে পরিণত করার উদ্যোগ প্রশংসনীয়

| শনিবার , ২৩ জুলাই, ২০২২ at ৫:১৬ পূর্বাহ্ণ

নগরের পাঁচলাইশ জাতিসংঘ পার্ক সবুজ উদ্যানে পরিণত হচ্ছে। এ জন্য ১১ কোটি ৭০ লাখ ১২ হাজার টাকার একটি প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। গত ২১ জুলাই দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, ‘পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন জাতিসংঘ সবুজ উদ্যান উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে গণপূর্ত অধিদপ্তর। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। বর্তমানে পার্কটির একপাশে ২০১৫ সালের জুনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) অর্থায়নে তিন কোটি ৯৪ লাখ টাকায় নির্মিত দুইটি সুইমিং পুল ও জিমনেশিয়াম রয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের সুবিধার্থে সুইমিং পুল দুটি এবং জিমেনেশিয়াম অপসারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চসিককে চিঠি দিয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ দৈনিক আজাদীকে বলেন, নকশা চূড়ান্তকরণের কাজ চলছে। নকশা পেলেই আমরা তিন-চার মাসের মধ্যে দরপত্র আহ্বান করে কাজ শুরু করতে পারব।
বিদ্যমান সুইমিং পুল ও জিমনেশিয়াম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। তাদের বিষয়টি আগেও জানিয়েছিলাম। প্রকল্প অনুমোদনের পর আনুষ্ঠানিক চিঠিও দিয়েছি। এ বিষয়ে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম মানিক দৈনিক আজাদীকে বলেন, গণপূর্ত বিভাগ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তর করবে। সুইমিং পুল ও জিমনিশয়াম উচ্ছেদের বিষয়টি প্রকল্পে ধরা আছে।
জাতিসংঘ পার্ক সংস্কার ও পুনর্নিমাণের মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশন ও গণপূর্ত বিভাগ সমম্বয়ের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চান বলে জানিয়েছেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। নানামুখী দূষণে বিপর্যস্ত নগর জীবনে মানুষের মানসিক ও দৈহিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার বিষয়টি বিশ্বস্বাস্থ্য খাত সংশ্লিষ্টদের চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গাছপালায় ঘেরা তথা সবুজ এলাকাই এই সমস্যার কার্যকর সমাধান হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। আর শহরাঞ্চলে সবুজ এলাকার উপস্থিতি নাগরিকদের আয়ু বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে। এ বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করেছেন বলে আমরা সিটি মেয়রকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। জাতিসংঘ পার্ক পরিদর্শনকালে মেয়র বলেন, নগরে দিন দিন খোলা জায়গা কমে আসছে। সংকুচিত হয়ে আসছে বিনোদন ও খেলার মাঠ। নগরের মানুষের যান্ত্রিক জীবনধারার অবসরে একটু বিনোদন ও স্বস্তি দিতে গণপূর্ত বিভাগ জাতিসংঘ পার্কটি নির্মাণ করে সঠিক কাজটিই করেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই পার্কের আর কোনো উন্নয়ন হয়নি। তিনি বলেন, নানান জটিলতা ও সঠিক পরিচর্যার অভাবে পার্কটি চরম অবহেলার শিকার। সুন্দর মনোরম পরিবেশে পার্কটি নির্মাণ করা হলেও এখন আর সে পরিবেশটি নেই। ফলে মানুষের আকর্ষণ হারিয়ে পার্কটি অনেকটা পরিত্যক্ত স্থানে পরিণত হয়েছে। এ পার্কটির যথাযথ সংস্কার ও আশপাশকে পরিচ্ছন্ন করে তুলে আধুনিকতার পরশে নতুন করে সাজাতে পারলে মানুষ চিত্ত বিনোদন ও অবসর সময় কাটাতে আবারো পার্কটিকে বেছে নিবে, এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলেন, নগর পরিবেশ ও নাগরিক সুযোগ-সুবিধার প্রতি যত্নবান হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমাদের সবার গন্তব্য এখন নগর। আমরা সবাই চাই নগরে বসবাস করতে। নগরের আধুনিক নান্দনিকতার জন্যই হোক অথবা গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থানের অভাবেই হোক- সবাই ধরে নিয়েছে নগরই একমাত্র কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য। এ জন্য প্রতিনিয়ত বাড়ছে নগরের জনসংখ্যা, বাড়ছে সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যা। ২০০৮ সাল থেকে পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশি মানুষ নগরে বসবাস করে। এই হারে বাড়তে থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ নগর জনসংখ্যার পরিমাণ হয়তো ৭০ শতাংশে পৌঁছবে। এই অধিক নগর জনসংখ্যার সিংহভাগ বসবাস করবে উন্নয়নশীল বিশ্বের নগরগুলোয়, যেগুলো এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশে অবস্থিত। অর্থাৎ নগরে আগুয়ান সমস্যাগুলো উন্নত বিশ্বের চেয়ে উন্নয়নশীল বিশ্বেই প্রসার ঘটবে বেশি। এশিয়ার মধ্যে যে নগরগুলো লক্ষণীয়ভাবে সমস্যার মুখোমুখি হবে সেগুলো হলো- ঢাকা, কলকাতা, মুম্বাই, করাচি, ব্যাংকক, সাংহাই ও জাকার্তা।
এ কথা বলা বাহুল্য যে, ইট-পাথরের শহরের ঘিঞ্জি পরিবেশে মানুষ হাঁপিয়ে উঠছে। ঘর থেকে বের হলেও সরু গলির দু’পাশে সারি সারি অট্টালিকার জন্য দিনেও মনে হয় রাতের আঁধার নামে। আকাশছোঁয়া বিল্ডিংয়ের কারণে সূর্যের আলো, রাতের মায়াবী চাঁদের স্নিগ্ধতা উপভোগ করার উপায় নেই। এ অবস্থায় জাতিসংঘ পার্ককে সবুজ উদ্যানে পরিণত করার উদ্যোগ প্রশংসনীয় ও অভিনন্দনযোগ্য।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমিশরের জাতীয় দিবস
পরবর্তী নিবন্ধযতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত : স্বাধীনতা আন্দোলনের সশস্ত্র বিপ্লবী