জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস : রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধান কাম্য

| সোমবার , ১৭ জুলাই, ২০২৩ at ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ

আনন্দের সংবাদ হলো, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব পাশ করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের পক্ষে ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা নিশ্চিতের মাধ্যমে চলমান সংকট সমাধানে জোর দেওয়া হয়েছে। জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির অফিস থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের চলমান ৫৩তম অধিবেশনে এ প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধিবেশনে বাংলাদেশের উদ্যোগে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশনের (ওআইসি) সব সদস্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ‘রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হয়। মিয়ানমারের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা ঝুঁকির প্রেক্ষাপটে এ প্রস্তাব উত্থাপনের পর থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে স্পষ্ট মতভেদ দেখা দেয়। মিয়ানমারে চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধান না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব নয় বলে অনেক সদস্য রাষ্ট্র মতপ্রকাশ করে। সেই সঙ্গে দীর্ঘ সময় ঝুলে থাকার অনিশ্চয়তার পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরুর প্রয়োজনীয়তা নিয়েও মতামত দেওয়া হয়। অবশেষে, নিবিড় ও সুদীর্ঘ আপসআলোচনা শেষে প্রস্তাবটি জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।

জাতিসংঘের এ প্রস্তাবে নির্যাতিত ও বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের সাময়িক আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করা হয়। এছাড়াও এতে প্রত্যাবাসন নিয়ে চলমান দীর্ঘদিনের অনিশ্চয়তার ফলে রোহিঙ্গাদের মধ্যে সৃষ্ট হতাশা এবং এর নানারকম নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রাখাইনে দ্রুত সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে টেকসই এবং স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের ওপর জোর দেওয়া হয়। প্রস্তাবে, ক্রমহ্রাসমান ও অপর্যাপ্ত অনুদানসাহায্য বিবেচনায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানানো হয়। এতে রোহিঙ্গাদের ওপর যৌন অপরাধসহ সব ধরনের নির্যাতন, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ও দায়ীদের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিচারের আওতায় আনা ও তদন্ত প্রক্রিয়া জোরদারে গুরুত্বারোপ করা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে চলমান বিচার প্রক্রিয়াতেও সমর্থন জানানো হয়।

বলা বাহুল্য যে, রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে। তারা এখন বিশ্বের জন্যও হুমকি। রোহিঙ্গাদের যদি দ্রুত ফিরিয়ে নেওয়া না হয় এ সমস্যা আরও বাড়তে থাকবে। কেননা দিন দিন জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে রোহিঙ্গা সমস্যা। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, প্রতিবছর প্রায় ৩৫ হাজার নতুন শিশুর জন্ম হচ্ছে। এই নতুন শিশুর জন্মের কারণে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বছর বছর বেড়ে চলেছে।এছাড়া কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলো অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হওয়ার পাশাপাশি মাদক, মানব ও অস্ত্র পাচারের কারণে নানা ধরনের নিরাপত্তা হুমকির সৃষ্টি করছে। এ সমস্যা বাংলাদেশ সৃষ্টি করেনি, তবে এটা ক্রমেই আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হচ্ছে, যা নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে না।

অভিযোগ আছে, বিভিন্ন দেশ এই সমস্যা জিইয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এসব সত্ত্বেও মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের অধিকার ফিরিয়ে না দিয়ে তাদের ওপর মানসিক নির্যাতন করছে। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের জীবন বাঁচাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। অথচ বাংলাদেশের নিরাপত্তা আজ ঝুঁকিতে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিজস্ব জন্মভূমিতে ফিরে যাওয়ার অধিকার রক্ষা ও বাংলাদেশের পরিবেশগত দিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসন জরুরি। তাঁরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার মাধ্যমে যে মানবিকতা ও বদান্যতা দেখিয়েছেন তা বিশ্ববাসীর কাছে একটি উদাহরণ। বিশ্বদরবারে সব মহলে প্রশংসিত হয়ে তিনি ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা নিধন শুরু হলে দফায় দফায় বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী তাদের আশ্রয় দেন। আয়তনে ক্ষুদ্র ও ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ার পরেও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কক্সবাজারে আশ্রয় দেন প্রধানমন্ত্রী। এর পর থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব সহায়তায় তাদের খাদ্য, চিকিৎসা, স্বাস্থ্য নিরাপত্তাসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সরকার নিবিড়ভাবে সহযোগিতা করেছে। কিন্তু তাদের প্রত্যাবাসন জরুরি হয়ে পড়েছে। মিয়ানমারের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা ঝুঁকির প্রেক্ষাপটে এ প্রস্তাবের ব্যাপারে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে মতভেদ দেখা দিলেও শেষ পর্যন্ত পাস হয়েছে। এখন আমরা কেবল প্রত্যক্ষ করবো তাদের ভবিষ্যৎ ভূমিকা কী। তবে তাদের কাছ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক পদক্ষেপ আমরা প্রত্যাশা করবো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে