জাতিসংঘের সমালোচনার পর ৯৩ শিশু সেনাকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা জানাল মিয়ানমার জান্তা

| শনিবার , ৫ জুলাই, ২০২৫ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

জাতিসংঘের গত মাসের এক প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন জান্তা জানিয়েছে, তারা ইতিমধ্যেই সেনাবাহিনী থেকে ৯৩ অপ্রাপ্তবয়স্ককে অব্যাহতি দিয়েছে। জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটির সামরিক বাহিনী ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে ৪০০র বেশি শিশুকে সামরিক বাহিনীতে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল। ওই অপ্রাপ্তবয়স্কদের অনেককে যুদ্ধে পাঠানো হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।

এর প্রতিক্রিয়ায় নিজেদের মুখপাত্র সংবাদপত্রে বিরল এক স্বীকারোক্তিতে জান্তা জানায়, তারা গত বছর একটি যাচাইবাছাই প্রক্রিয়া চালিয়েছিল, যার ফলশ্রুতিতে যাচাইকৃত ৯৩ অপ্রাপ্তবয়স্ককে সামরিক বাহিনী থেকে অব্যাহতি এবং তাদেরকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এখন কেবল সন্দেহভাজন ১৮ অপ্রাপ্তবয়স্কের মামলা যাচাইয়ের অপেক্ষায় রয়েছে, সরকারপরিচালিত একটি কমিটি সংবাদপত্র গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমারে প্রকাশিত বিবৃতিতে এমনটাই বলেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। জাতিসংঘ মহাসচিবের শিশু ও সশস্ত্র সংঘাত বিষয়ক ওই প্রতিবেদন বলছে, গত বছর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও তাদের সহযোগী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো প্রায় ৫০০ ছেলেমেয়েকে বাহিনীতে যুক্ত করেছে, যাদের মধ্যে ৩৭০ জনেরও বেশি অপ্রাপ্তবয়স্ককে সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয়েছে।

জান্তাবিরোধী গোষ্ঠীগুলোও শিশুদের রিক্রুট করছে তবে এই সংখ্যা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর চেয়ে অনেক কম, বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। ২০২১ সালে এক অভ্যুত্থানে নোবেল পুরস্কারজয়ী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে মিয়ানমার টালমাটাল সময় পার করছে। অভ্যুত্থানের পর দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা দেয়, যা দমাতে সেনাবাহিনীর বলপ্রয়োগ শেষ পর্যন্ত অনেককে সশস্ত্র বিদ্রোহের পথে ঠেলে দেয়।

আগে থেকে সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত জাতিগত বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে অভ্যুত্থানের পর জন্ম নেওয়া অনেক সশস্ত্র গোষ্ঠী মিয়ানমারের জান্তাকে এখন বেশ চেপে ধরেছে। দেশটির অনেকগুলো সীমান্ত এলাকা ইতিমধ্যেই জান্তার হাতছাড়া হয়ে গেছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় গত বছর জান্তা বাধ্যতামূলকভাবে সামরিক বাহিনীতে যুক্ত হওয়ার একটি আইন করে, যার অধীনে তরুণদের বাহিনীতে যুক্ত করে কয়েক বছর ধরে চলা যুদ্ধের ক্ষতি পোষানোর চেষ্টা চলছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির প্রায় ৩৫ লাখ এখন অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত এবং ২০২৪ সালে দেশটির মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশের বেশিই শিশু বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ।

সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিশু রিক্রুট হচ্ছে পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে, যেখানে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গা সমপ্রদায়ের বাস। এই রাজ্য থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও তাদের সশস্ত্র দুই মিত্র গোষ্ঠী ৩০০ অপ্রাপ্তবয়স্ককে সেনাদলে যুক্ত করেছে বলে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। জাতিসংঘের কর্মকর্তা ও দুই রোহিঙ্গা যোদ্ধার বরাত দিয়ে গত বছর রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে রাখাইনে লড়াইরতদের মধ্যে ১৩ বছরের শিশুও আছে বলে জানানো হয়েছিল। মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত লাখ লাখ রোহিঙ্গা এখনও প্রতিবেশী বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরগুলোতে আটকা পড়ে রয়েছেন। ওই শিবিরগুলোতেও গত বছর সশস্ত্র সদস্য সংগ্রহ ও সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে, বলছে রয়টার্স।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআফগান সীমান্তে ৩০ জঙ্গিকে হত্যার দাবি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর
পরবর্তী নিবন্ধপ্রথম দেশ হিসেবে তালিবানকে স্বীকৃতি দিল রাশিয়া