জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি

| সোমবার , ১৫ আগস্ট, ২০২২ at ৫:২২ পূর্বাহ্ণ

‘কত পথ আছে দেশে, আছে শত মত
তোমার জন্য করি নতুন শপথ
তোমার কণ্ঠে জাগে এই চরাচর
বঙ্গবন্ধু তুমি অজর অমর।’

আজ ১৫ আগস্ট। জাতীয় শোক দিবস। ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক দিন। আমাদের দুঃখ, কষ্ট আর বেদনার দিন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমরা হারিয়েছি বাঙালি জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সেনাবাহিনীর কিছু উচ্ছৃঙ্খল সদস্যের হাতে নির্মমভাবে সপরিবারে নিহত হন তিনি। সেই থেকে পনের আগস্ট বাংলা ও বাঙালির ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে পরিগণিত। তবে আমাদের দুঃখ কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে এ জন্যে যে, আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন করতে পেরেছি এবং জাতির কপালে কলঙ্কের যে কালিমা লেপ্টে ছিল, তা মোচন করতে সক্ষম হয়েছি। পনের আগস্ট হত্যাকাণ্ডের পর জাতির যে দায়বদ্ধতা ছিল, সেই দায়মুক্তি ঘটলো বিচার কাজের মাধ্যমে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি। তাঁকে বাদ দিয়ে দেশকে কল্পনা করা যায় না। যতদিন পদ্মা, মেঘনা, যমুনা প্রবাহিত হবে, এ ভূখণ্ডে জনপদে মানুষের বসবাস থাকবে, ততদিন পর্যন্ত অমর হয়ে থাকবেন এই মহান নেতা। তাঁর অবদান গগনচুম্বী। তাঁর সাফল্য প্রশ্নাতীত। তাঁর স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব, চরিত্র-বৈশিষ্ট্য ও নেতৃত্বগুণে তিনি কোটি মানুষের একচ্ছত্র নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন অতিমাত্রায় সাহসী, নির্লোভ, আপসহীন ও তেজস্বী নেতা। তিনি জীবনে কারো কাছে মাথা নত করেন নি। ভয়, সংশয় ও প্রতিহিংসার ঊর্ধ্বে ওঠে সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন পরিচালিত করেছেন। বাঙালির ন্যায়সঙ্গত দাবির প্রশ্নে তিনি সব সময়েই সোচ্চার ছিলেন। বলিষ্ঠ কণ্ঠে আদায় করে নিতেন সকল দাবি।

এমন এক অবিসংবাদিত নেতাকে হত্যা করা হলো সপরিবারে, যা শুধু নৃশংস নয়, নারকীয়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড স্বতঃস্ফূর্ত কোনো ব্যাপার ছিল না বা তাৎক্ষণিক অসন্তোষের কোনো কারণও নয়। তাহলে শুধু তাঁকে হত্যা করা হতো, পরিবার-পরিজনকে নয়। অনেক ভেবে-চিন্তে পরিকল্পনা করে তাঁকে হত্যা করা হয়। যারা খুন করেছিল আজ প্রশ্ন উঠতে পারে তারা কি প্লানটেড ছিল? সবচেয়ে বড় আশ্চর্য ও দুঃখের বিষয় যে, এ হত্যাকাণ্ডের যাতে কোনো বিচার না হয়, তার সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়। শুধু-তা নয়, যারা হত্যার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিদেশে পাঠিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে।

১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত ইতিহাসের একটি ধারা ছিল, যা পৃথক ছিল প্রাক ১৯৭১ সালের ধারা থেকে। প্রাক ১৯৭১ সালের ধারাটির অন্য একটি নাম দিয়েছেন ইতিহাসবিদ ড. মুনতাসীর মামুন। তিনি একে বলেছেন ‘ঔপনিবেশিক পাকিস্তানি ধারা’ বা ‘পাকিস্তানি মানস ধারা’। এ ধারার বিরুদ্ধে আমরা সংগ্রাম করেছি, বাঙালি জাতীয়তাবাদী ধারা প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছি। এ দেশের বাম, মৃদু বাম, মধ্যপন্থি, যাদের আমরা প্রগতিশীল বা লিবারেল বলি, তারা এ ধারার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এ ধারাটিকে পুষ্ট করে পরিণতির দিকে নিয়ে যান। ১৯৭২ সালের সংবিধান এ ধারার জয় সূচিত করে।

এ ধারা বা বাংলাদেশ ধারার জয়ের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানি ধারা যে নিঃশেষ হয়ে যায়নি, তার বহিঃপ্রকাশ পনের আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড। এ বর্বরতম হত্যাকাণ্ডের পর এ দেশে পুনঃ প্রতিষ্ঠিত হলো প্রাক ১৯৭১ ধারা। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত চলেছে এর চর্চা। কিন্‌তু আনন্দ বা কিছুটা স্বস্তির সংবাদ এই যে, দেরিতে হলেও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে। এটা জাতির জন্য বড় দায় ছিল। এর মাধ্যমে আমরা বলতে পারি, আমরা পরাজিত ব্যক্তির প্রতিভূ নই। আমরা আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টার হত্যার বিচার কাজ সম্পন্ন করেছি।

যেটুকু না বললেই নয়, সেটা হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বৈশিষ্ট্যের প্রধান দিক হচ্ছে ‘মানুষের প্রতি ভালোবাসা’। এটি অতুলনীয় ও দুর্দমনীয়। তাঁর জীবন দর্শন ছিল এ দেশের গণমানুষের মুখে হাসি ফোটানো। তাদের সুখ-সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা। এ দর্শন গভীর মানবিক সংগ্রামী দর্শন হিসেবে বিশ্বে বিবেচিত। যার ভিত্তিমূলে ছিল ঐকান্তিক ভালোবাসা ও ঐতিহাসিক বিশ্বাস। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক যত দর্শন আছে, তার মূলে রয়েছে তাঁর ভালোবাসা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে