জাগ্রত হোক সমপ্রীতিবোধ

লিপি বড়ুয়া | মঙ্গলবার , ৪ এপ্রিল, ২০২৩ at ৫:১৮ পূর্বাহ্ণ

পৃথিবীর প্রায় সবকটি দেশেই বিভিন্ন ধর্ম বর্ণ গোত্র এবং বিভিন্ন ভাষা ও বিভিন্ন সংস্কৃতির লোক একত্রে বসবাস করে। সকলের প্রতি সকলের একতা সকলের প্রতি সকলের সম্মান প্রদর্শন সমপ্রীতির বন্ধনকে সুদৃঢ় করে।

মানবসমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির আবশ্যকতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি আমাদের বাংলাদেশের ঐতিহ্য। আবহমানকাল থেকে এই ভূখণ্ডে মুসলিম হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান উপজাতি সবাই মিলে মিশে বসবাস করে আসছে এবং সকলের প্রতি সকলে আন্তরিক শ্রদ্ধা সম্মান প্রদর্শন করে আসছে। সকলে মিলেমিশে সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে।

স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের সংবিধানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ধর্মনিরপেক্ষতার মূলনীতি যুক্ত করে মূলত অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে গেছেন। তারই সুযোগ্য কন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির আদর্শ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার এই মূলমন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অনুদান দিয়ে যাচ্ছে নিয়মিত। মুসলিম হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান সকলেই যেন নিজ নিজ ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে পালন করতে পারে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রয়েছে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর শান্তিচুক্তির অবাস্তবায়িত ধারাগুলো বাস্তবায়ন ও পার্বত্য এলাকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ সর্বস্তরের জনগণের উন্নয়নে নানামুখী উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সরকার যথাযথভাবে পার্বত্যবাসী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনগণকে সাংবিধানিক স্বীকৃতিও প্রদান করে। এ চুক্তি পাহাড়িবাঙালিদের সমপ্রীতি অটুট রাখতে বিরাট একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়।

পিতৃপুরুষের আমল থেকে আমরা দেখে আসছি বিভিন্ন ধর্মের লোক পাশাপাশি বসবাস করার কারণে একে অপরের প্রতি তৈরি হয়েছে গভীর মমত্ববোধ। আজো বড় মায়ায় জড়িয়ে রয়েছে সম্পর্কগুলো।

তবে দেশবিরোধী একটি গোষ্ঠী আমাদের হাজার বছরের এ সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি নষ্ট করার কূটকৌশল বাস্তবায়নে লিপ্ত হয়েছে বারবার। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ কায়েম করে সমপ্রীতির মর্মমূলে আগুন ঢেলে দেওয়াই যেন তাদের মূল উদ্দেশ্য। তারা এ দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ দেখতে চায় না। হীন চক্রান্তের মাধ্যমে বারবার চেষ্টা করছে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে। অসামপ্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ কিছু চক্রান্তকারী, কুচক্রী কূটকৌশলীর কাছে হেরে যেতে পারে না। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা। এই স্বাধীন বাংলাদেশের সমপ্রীতি নষ্ট হোক এটা কখনো কাম্য নয়। এ দেশ স্বাধীন করতে সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে। স্বাধীনতার মতো এই দুর্লভ অর্জন এসেছে একমাত্র সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির কারণে।

তাই সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির ধারাকে রক্ষা করতে হবে।

নিজ নিজ চেতনায় সামপ্রদায়িক সমপ্রীতিবোধ জাগ্রত করতে হবে। ইতিমধ্যে সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি বজায় রাখতে বাংলাদেশ সরকার নানাবিধ কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সফলতা লাভ করেছে। পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনী পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কোনো গোষ্ঠী বা দল যাতে দেশে সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি বিনষ্ট করতে না পারে, সে বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি রক্ষায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব, বিভ্রান্তিমূলক বা উস্কানিমূলক পোস্ট, ভিডিও প্রচারকারীকে শনাক্ত করার মাধ্যমে আইনের আওতায় আনার জন্য সাইবার ক্রাইম মনিটরিং সেল গঠনসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

সরকারের যথাযথ প্রচেষ্টা সকলের ঐক্যবদ্ধ আন্তরিক প্রচেষ্টায় সমপ্রীতির বন্ধন আরো সমৃদ্ধ হবে এই আশা রাখছি।

গণসচেতনতার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সমপ্রীতির মনোভাব ছড়িয়ে দিতে পারলেই বন্ধ হবে সন্ত্রাসবাদ জঙ্গিবাদ ও অন্য ধর্মের প্রতি নির্যাতন নিপীড়ন। সেদিন হয়তো আর বেশি দূরে নয় যেদিন বিশ্ববাসী অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখবে সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির অনন্য বাংলাদেশ।

লেখক: কবি ও গল্পকার

পূর্ববর্তী নিবন্ধভালোবাসার প্রহসন
পরবর্তী নিবন্ধজনমানুষের আস্থা নিয়ে গড়ে উঠুক আধুনিক ব্যাংকিং সংস্কৃতি