জাগো হে মানুষ

ফারজানা আজিম | বৃহস্পতিবার , ২৪ জুন, ২০২১ at ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ

প্রত্যেক মানুষ তার খারাপ কাজের শাস্তি পায়, কেউ আগে পায় আর কেউ হয়তোবা কয়েকদিন পরে। কিন্তু সে শাস্তি পাবেই। সময় মত হয়তো আমরা বুঝে উঠতে পারিনা কোন কাজের শাস্তি পাচ্ছি। কাউকে কষ্ট দিয়ে কাউকে কাঁদিয়ে কাউকে অপমান করে আর কাউকে ছোট করে বেমালুম ভুলে যাই আমরা। কিন্তু প্রকৃতি ভুলেনা এবং ক্ষমাও করেনা। এমনকি এই মুহূর্তে আপনি যার সাথে অন্যায় করে গর্বে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, হয়তো সে প্রতিবাদ করবে না, কিন্ত তার ওই কষ্ট থেকে আসা অভিশাপ আপনাকে ছাড়বে না। আল্লাহ কাউকে ঠকায় না, তিনি কারো একার না। দ্বিমুখীতা, অহংকারী তা, স্বার্থপরতা কখনো শান্তি বয়ে আনে না, আনতে পারে না।
প্রসঙ্গক্রমে স্বর্ণ ও লোহার গল্পটি মনে পড়ে গেল, আপনারা অনেকেই জানেন নিশ্চয়ই আবারও বলছি : একদা স্বর্ণ ও লোহা দুজনে বসে গল্প করছিল তখন হঠাৎ স্বর্ণ লোহাকে প্রশ্ন করল আচ্ছা, আমাদের দুইজনকেই আগুনের হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয় কিন্ত আমি তো এত চিৎকার করি না তুমি এত চিৎকার করো কেন? তখন লোহা বলল ভাই তুমি বুঝবে না, যখন নিজের কেউ মারে তখন ব্যথাটা অনেক বেশি লাগে।
ঠিক তেমনি আমাদের মাঝে এমন কিছু আপনজন থাকে যাদের দেয়া কষ্ট কখনো সহ্য করা যায় না। এই সব মানুষেরা শুধু আপন জন সেজে মানুষের ক্ষতিই করে যায়। এমন কি তারা যদি জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও দাঁড়ায় তবুও কয়লার মত পরিবর্তন হতে পারেনা। তারা শুধু যে আমাদের জীবন ধ্বংস করে তা না তারা তাদের স্বভাব সুলভ প্রতারণা দ্বারা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ তথা গোটা দেশটাকে ধ্বংস করে। এরা উই পোকা প্রজাতির। ভেতরটা শেষ করে উপরের খোলসটা রাখে শুধু। এরা বুঝতে পারেনা অন্যের ক্ষতি করতে চাইলে নিজেরও ক্ষতি হবেই। হয়তো ক্ষতির ধরণ ওসময় একটু ভিন্ন, তবে ক্ষতি হবেই। কারণ প্রকৃতি তার আপন গতিতে প্রতিশোধ নেয়। আমরা মানুষেরা আয়নায় যদি নিজের চেহেরার বদলে চরিত্রটাকে দেখতে পেতাম তবে বিশ্বাস করুন আমরা চেহারা নয় চরিত্রটাকেই সুন্দর করতে বেশী জোর দিতাম।
বর্তমান সময়ে সবচেয়ে কঠিন কাজ হল মানুষকে বুঝতে পারা। কারণ কে সত্যি বলছে আর কে অভিনয় করছে সেটা বোঝা খুবই কঠিন। আজকাল আমাদের সম্পর্কগুলোর মধ্যে অনুভূতির বাঁধনটা আর নাই। আমি বিশ্বাস করি যেখানে অনুভূতির বাঁধন থাকে সেখানে পরও আপন হয়ে যায়, সম্পর্কগুলো জীবন পায়। আর যেখানে অনুভূতির বাঁধন নাই সেখানে আপন ও পর হয়ে যায়, সম্পর্কগুলো মরে যায়। এখন আমাদের সমাজটাই এমন, আমরা একে অপরের আপন হয়ে আপনই আপনকে মারছি। বুঝতেও পারছিনা কে আপন কে পর। একে অপরের সাথে ঠুংকো স্বার্থ নিয়ে এমন ভাবে ক্ষতি করতে লিপ্ত হচ্ছি যা ভাবাই কষ্টকর।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইচ্ছেঘুড়ি
পরবর্তী নিবন্ধপলিদূষণ বনাম নাগরিক অঙ্গীকার