দৃষ্টিকটূ ভুল বোঝাবুঝিতে দুই ব্যাটসম্যানই একই প্রান্তে। নন–স্ট্রাইক প্রান্ত থেকে যাওয়া জাকের আলি মাঠেই গজরাতে থাকলেন। মাঠ ছেড়ে যাওয়ার সময়ও তাকে দেখা গেল প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। একটু পরই বদলে গেল চিত্র। চরম বিস্ময়ে জাকের জানতে পারলেন, তিনি রান আউট হননি। ক্রিজে ফিরে গেলেন। একটু পর রান আউটে হারালেন আরেক সঙ্গী শামীমকে। জাকের হতাশ হলেন। কিন্তু দ্রুতই সামলে নিলেন নিজেকে। চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় উপহার দিলেন অসাধারণ এক ইনিংস। কিভাবে ফিরলেন জাকের ? গত জুনে ওয়েস্ট ইন্ডিজে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চারটি ম্যাচ খেলেছিলেন জাকের। একটিতে ১৪ রানে অপরাজিত ছিলেন। বাকি তিন ম্যাচ মিলিয়ে রান ছিল মোট ২১। এরপর দেশে ফিরে ঘাম ঝরালেন। ক্যারিবিয়ান সফরের জন্যই প্রস্তুতি নিলেন বিশেষভাবে। বিশ্বকাপের আঁধার থেকে বেরিয়ে এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজে তিন সংস্করণেই তিনি উজ্জ্বল। দুটিই ঘুরে দাঁড়ানোর নজির। দুটিই জাকেরের মানসিকতার প্রতিচ্ছবি। সফরের শেষ ম্যাচে ম্যান অব দ্যা ম্যাচের পুরস্কার নিয়ে সেই গল্প শুনিয়ে বাংলাদেশের এই ব্যাটসম্যান বললেন সবকিছুই মানসিকতার ব্যাপার।
ক্যারিবিয়ান জয়ের পথে এবার জাকেরের সাফল্যের শুরু অ্যান্টিগা টেস্ট দিয়ে। প্রথম ইনিংসে দলের বিপর্যয়ে খেলেন ৫৩ রানের ইনিংস। পরের ইনিংসে লড়াই করে ৩১। জ্যামাইকায় প্রথম ইনিংস ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ৮ চার ও ৫ ছক্কায় তার ৯১ রানের অসাধারণ ইনিংস বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয় জয়ের পথে। ওয়ানডে সিরিজে দল হোয়াইটওয়াশড হলো। কিন্তু জাকের ঠিকই নিজেকে মেলে ধরলেন। প্রথম মাচে ৪০ বলে ৪৮, শেষ ম্যাচে ৫৭ বলে অপরজিত ৬২। টি–টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে করলেন ২৭ ও ২১। ম্যাচের প্রেক্ষাপটে দুটিই কার্যকর ইনিংস, কিন্তু পূর্ণতা ছিল না ঠিক। শেষ ম্যাচে যেন পুষিয়ে দিলেন সব। ৪১ বলে ৭২ রানের অসাধারণ ইনিংসটি দলকে নিয়ে গেল জয়ের মতো জায়গায়। ম্যাচের পর জাকের ফিরে তাকালেন গোটা সফরে। বললেন এই ম্যাচের কথাও। তার চেষ্টা ছিল তাড়াহুড়ো না করে ইনিংস গড়ার। আমার জন্য দারুণ এক সিরিজৃ টেস্ট সিরিজ, ওয়ানডে সিরিজ ও এখন টি–টোয়েন্টি সিরিজ। আজকে উইকেট খুব ভালো ছিল গত দুই ম্যাচের তুলনায়। আমি চেষ্টা করছিলাম সময় নিতে, নিজেকে সময় দিতে। জানতাম, যদি খেলাটাকে গভীরে নিতে পারি, তাহলে রান করতে পারব।।
জাকেরের রান এক পর্যায়ে ছিল ১৩ বলে ১০। পরে একটি ছক্কা মারলেও রান আউট হওয়ার পর তার রান ছিল ১৭ বলে ১৬। পরে ‘নতুন জীবন’ পেয়ে তিনি বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন। শেষ পাঁচ ওভারে তার ব্যাট থেকে আসে তিনটি চার ও পাঁচটি ছক্কা। রান আউট হওয়ায় মাঠে তার শরীরী ভাষা যেরকম ছিল, মানসিক অবস্থাও ছিল তেমনই। শেষ পর্যন্ত তিনি টিকে যান, স্ট্রাইক প্রান্তে থেকেও সময়মতো ব্যাট নামাতে না পেরে রান আউট হন শামীম হোসেন। এক বল পর রান আউট হয়ে যান শেখ মেহেদি হাসানও। হতাশ হলেও তখন হাল ছাড়েননি জাকের। ভয়ঙ্কর এক ভুল বোঝাবুঝি ছিল। ড্রেসিং রুমে ফিরে নিজের ওপরই রাগ হচ্ছিল আমার, ব্যাট–প্যাড একেক দিকে ছড়িয়ে ছিল। হঠাৎ তৃতীয় আম্পায়ার (চতুর্থ আম্পায়ার) ডাকলেন আমাকে। এরপর আরেকটি রান আউট হলো, ওই সময় ভেঙে পড়েছিলাম আমি। তবে সৌভাগ্যবশত দলের জন্য খেলতে পেরেছি, রান করতে পেরেছি। তিন সংস্করণে খেলা হয়েছে ভিন্ন চারটি দ্বীপে। কন্ডিশন, উইকেট, চ্যালেঞ্জ সব ছিল ভিন্ন। জাকের জানালেন, আলাদা করে প্রস্তুতি নিয়ে তবেই সফল হয়েছেন তিনি। সবকিছু হলো মানসিকতার ব্যাপার। আমি জানতাম, ক্যারিবিয়ানরা যে কোনো সংস্করণেই কঠিন পরীক্ষা নেবেন। বিশেষ করে, এ কন্ডিশনে। এখানে বিশ্বকাপ খেলেছি আমি। কিন্তু ভালো করতে পারিনি। দেশে ফেরার পর এই সফরের জন্য সুনির্দিষ্ট করে প্রস্তুতি নিয়েছি। সবকিছু আমার জন্য ভালো যাচ্ছে এখন। শেষ টি–টোয়েন্টিতে ক্যারিবিয়ান বোলারদের তুলাধুনা করে যখন ফিরছেন জাকের, ধারাভাষ্যে নিখিল উত্তামচান্দানি তখন বললেন, “ইটস জাকের–শো। সুপারস্টার ইন দ্যা মেকিং। বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন অপেক্ষায় থাকবে, জাকের আলির মহাতারকা হয়ে ওঠার জন্য।