জাকাত সংগ্রহ ও বণ্টনে রাষ্ট্রকেই উদ্যোগ নিতে হবে

আ ব ম খোরশিদ আলম খান | রবিবার , ১৬ মার্চ, ২০২৫ at ৪:০৯ পূর্বাহ্ণ

সমাজ থেকে দারিদ্র্য রুখতে জাকাত একটি অর্থনৈতিক ফরজ বিধান। দারিদ্র্য বিমোচনে ইসলামের অর্থনৈতিক কর্মসূচি হচ্ছে জাকাত। নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে বিত্তবানদের জাকাত দিতে হবে। বিক্ষিপ্ত, বিচ্ছিন্নভাবে জাকাত দিলে জাকাতের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। তাই রাষ্ট্রকেই জাকাত সংগ্রহ ও বণ্টনে উদ্যোগ নেওয়ার দিকনির্দেশনা দেয় ইসলাম।

খোলাফায়ে রাশেদার শাসনামলে রাষ্ট্রীয়ভাবে জাকাত সংগ্রহ ও বণ্টন করা হতো। ফলে সেই সময় দরিদ্র মানুষের সংখ্যা হ্রাস পায়। বর্তমানে আমাদের দেশে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাকাত পরিদপ্তর আছে। তা তেমন কার্যকর নয়। মাত্র কয়েক কোটি টাকা জাকাত সংগ্রহ করে এ সংস্থাটি। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশে যে পরিমাণ বিত্তবান আছে, বছরে তাদের কাছ থেকে অন্তত ৫০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করা যায়। এই টাকা রাষ্ট্রীয়ভাবে সংগ্রহ করে পরিকল্পিতভাবে বণ্টন করলে এক দশকে দেশ থেকে দারিদ্র্য হটানো সম্ভব। এজন্য আলাদাভাবে জাকাত মন্ত্রণালয় গঠন করা যেতে পারে।

জাকাত সংগ্রহ ও বণ্টনে রাষ্ট্রকে উদ্যোগী হওয়ার দিকনির্দেশনা দিয়ে নবী করিম (.) বলেছেন, ধনীদের থেকে অর্থ (জাকাত) আদায় করা হবে এবং দরিদ্রফকিরদের মাঝে তা বণ্টন করা হবে। (বুখারি শরিফ, হাদিস নং ১৪২৫)

জাকাত শব্দের অর্থ হলো বৃদ্ধি পাওয়া, প্রবৃদ্ধি, পবিত্রতা অর্জন করা, বরকত লাভ করা। জাকাত দিলে ধনসম্পদ পবিত্র হয় এবং বৃদ্ধি পায়। কেরআন মজিদের সূরা তওবার ৬০ নং আয়াতে জাকাত প্রদানের নির্দিষ্ট আটটি খাত উল্লেখ করে মহান আল্লাহ পাক বলেন, জাকাত কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত, জাকাত আদায়কারী কর্মচারী, যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণ ভারাক্রান্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জিহাদকারী ও মুসাফিরের জন্য। এটা আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, বিজ্ঞানময়।

অভাবগ্রস্ত বা দরিদ্র তাকেই বলে যে ব্যক্তি নিসাব পরিমাণ (বর্তমান বাজার মূল্যে ৬৩০০০ টাকা) অর্থ সম্পদের মালিক নয়। তার নিকট যে পরিমাণ অর্থ আছে তার চেয়ে তার অভাব আরও বেশি। এমন ব্যক্তিকে ইসলামের দৃষ্টিতে দরিদ্র বলা হয়। মিসকিননিঃস্ব বা সর্বহারা বলতে এমন ব্যক্তিকে বোঝায়, যার সম্পদ বলতে কিছুই নেই। আমিলিন বা জাকাত আদায়কারীদের পারিশ্রমিক হিসেবে জাকাতের টাকা প্রদান করা যাবে।

কোরআনে পাকে গারিমিন বা ঋণগ্রস্তদের জাকাত দেওয়ার জন্য বিশেষভাবে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ফকিরকে জাকাত দেওয়ার চেয়ে ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে জাকাত দেওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে উত্তম পন্থা। দ্বীনের জন্য জিহাদকারীদের জাকাত দেওয়ার কথা কোরআন মজিদে উল্লেখ রয়েছে। ইসলাম ধর্ম শিক্ষারত গরিব ও এতিম শিক্ষার্থীদের এবং দরিদ্রদের চিকিৎসা সহায়তা হিসেবে জাকাত দেওয়া জায়েজ।

নবী করিম (.) জাকাতের মাপকাঠি হিসেবে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে ৫২ তোলা রৌপ্য বা তার সমমূল্যের কোনো ধন সম্পদকে নিসাব বলে ধার্য করেন। বছর শেষে ওই পরিমাণ স্বর্ণ, রৌপ্য বা টাকা থাকলে জাকাত দিতে হবে। প্রতি লাখে আড়াই হাজার টাকা এবং এক কোটি টাকা থাকলে আড়াই লাখ টাকা জাকাত দিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচমেক হাসপাতালে আয়ার অবহেলায় শিশু মৃত্যুর অভিযোগ
পরবর্তী নিবন্ধতর্কাতর্কির জের ধরে নিজ দলের কর্মীদের মারধর, যুবকের মৃত্যু