লাখো মানুষের অংশগ্রহণ, হামদ-নাত আর দরুদে মুখর পরিবেশে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী জশনে জুলুস। জুলুসকে ঘিরে সৃষ্টি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। জুলুসের পতাকা, ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন, তোরণে সাজে নগরের মোড়, সড়কদ্বীপ ও সড়ক বিভাজক। হামদ-নাত আর দরুদে মুখর পরিবেশে জুলুসে লাখো লাখো মানুষের ঢল নামে। জুলুসে শিশু কিশোরসহ নানা বয়সী মানুষের অংশগ্রহণে একাকার হয়ে পড়ে নগরীর রাজপথ। আখতারুজ্জমান ফ্লাইওভার, সড়কের দুই পাশ, ফুটওভার ব্রিজ, বাসাবাড়ির ছাদে শুধু মানুষ আর মানুষ। যেদিকে চোখ যায় শুধু পাঞ্জাবি টুপি পরিহিত মুসল্লিদের ভিড় ছিল সারাদিন। গত ৯ অক্টোবর সকাল পৌনে ৯টায় নগরীর মুরাদপুর আলমগীর খানকাহ্-এ-কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া থেকে বের হয় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর (দ.) জশনে জুলুস।
জুলুসে নেতৃত্ব দিয়েছেন আওলাদে রাসুল আল্ল্ল্ল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ (মজিআ)। আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট ও গাউছিয়া কমিটির ব্যবস্থাপনায় এ জুলুস অনুষ্ঠিত হয়। জুলুস আলমগীর খানকা শরীফ প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে মুরাদপুর, চকবাজার, চট্টগ্রাম কলেজ, গণি বেকারী, কাজির দেউড়ি, ওয়াসা, জিইসি, ২নং গেইট প্রদক্ষিণ শেষে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদরাসা মাঠে গিয়ে জুলুস শেষ হয়। এরপর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদরাসা মাঠে মাহফিল শুরু হয়।
ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) মাহফিলে প্রধান অতিথি ছিলেন আওলাদে রাসুল আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ। আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ (ম.জি.আ.)’র সভাপতিত্বে মাহফিলে বিশেষ অতিথি ছিলেন শাহজাদা আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ কাসেম শাহ (ম.জি.আ.), সিটি মেয়র এম. রেজাউল করিম চৌধুরী, মোছলেম উদ্দিন আহমেদ এমপি, পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফি মিজানুর রহমান, এটিএম পিয়ারুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মহসিন ও সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ আেেনায়ার হোসেন।
মাহফিলে প্রধান অতিথি বলেন- বিশ্ব মানবতার মুক্তিদূত রাহমাতুল্লিল আলামিন হজরত মুহাম্মদ (দ.) এর শুভাগমন বিশ্ববাসীর জন্য সবচেয়ে বড় রহমত, আল্লাহর পক্ষ থেকে বড় অনুগ্রহ। মহান আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী এ রহমত ও অনুগ্রহ প্রাপ্তিতে মহান আল্লাহর শোকরিয়া আদায় ও খুশী উদযাপন করতে হবে। এ খুশী উদযাপনের উত্তম পন্থা জশনে জুলসে ঈদে মিলাদুন্নবী। যা ১৯৭৪ সালে গাউসে জমান আল্লামা হাফেজ ক্বারী সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহির নির্দেশক্রমে আনজুমান এ রহমানিয়া আহমদিয়াসুন্নিয়া ট্রাস্ট শুরু করেছে। আল্লামা তৈয়্যব শাহ (রা.) এ জুলুসের দীর্ঘ নেতৃত্ব দিয়েছেন। এরপর বর্তমান হুজুর কিবলা আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ (ম.জি.আ.)’র সময়ে এ জুলুসের ব্যাপ্তি ঘটেছে।
আন্জুমান ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মহসিন জশনে জুলুসে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রণালয়, স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ, ওয়াসাসহ সকল দফতরের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। ট্রাস্টের সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন তাঁর শুভেচ্ছা বক্তব্যে জুলুসে আগত লাখো আশেকে রাসুলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বিশ্বের সর্ববৃহৎ জশনে জুলুস হিসেবে স্বীকৃত এ জুলুস ধর্মীয় র্যালিকে ওয়ার্ল্ড গিনেজ বুকে রেকর্ডের দাবি জানান।
এতে উপস্থিত ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট একিউআই চৌধুরী, এডিশনাল জেনারেল সেক্রেটারি মোহাম্মদ সমশুদ্দিন, জয়েন্ট জেনারেল সেক্রেটারি মোহাম্মদ সিরাজুল হক, এসিস্টেন্ট জেনারেল মোহাম্মদ সেক্রেটারি এসএম গিয়াস উদ্দিন শাকের, ফাইন্যান্স সেক্রেটারি মোহাম্মদ এনামুল হক বাচ্চু, অর্গানাইজিং সেক্রেটারি মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম, গাউসিয়া কমিটি বাংলদেশের চেয়ারম্যান পেয়ার মোহাম্মদ, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যন মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক, মহাসচিব মুহাম্মদ সাহাজাদ ইবনে দিদার, চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি তছকির আহমদ, দক্ষিণ জেলার সভাপতি মোহাম্মদ কমরুদ্দিন সবুর, আনজুমান সদস্য মোহাম্মদ তৈয়বুর রহমান, লোকমান হাকিম মো. ইব্রাহীম, শেখ নাছির উদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ আবদুল হামিদ, নূর মোহাম্মদ কন্ট্রাক্টর, মুহাম্মদ আবদুল হাই মাসুম, মোহাম্মদ হাসানুর রশীদ রিপন, গাউসিয়া কমিটি কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব এড. মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার, মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল্লাহ, এড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, মাস্টার মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ প্রমুখ। মাওলানা হাফেজ মুহাম্মদ আনিসুজ্জমান ও মাওলানা মুহাম্মদ আবুল হাশেমের সঞ্চালনায় সকাল থেকে মাহফিলে বক্তব্য পেশ করেন- জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ মুফতি সৈয়্যদ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান, মাওলানা কাযী মোহাম্মদ মঈন উদ্দীন আশরাফী, মুফতি কাযী মুহাম্মদ আবদুল ওয়াজেদ, হাফেয মাওলানা মুহাম্মদ সোলাইমান আনসারী, হাফেয মাওলানা মুহাম্মদ আশরাফুজ্জামান আলক্বাদেরী, অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ হারুনুর রশিদ, অধ্যক্ষ হাফেয কাযী মুহাম্মদ আবদুল আলীম রেজভী, উপাধ্যক্ষ মাওলানা আবুল কাশেম মুহাম্মদ ফজলুল হক, অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ আবু তৈয়্যব চৌধুরী ও অধ্যক্ষ মাওলানা আবুল কালাম আমিরী, হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান আলকাদেরী, মাওলানা আহমদুল্লাহ ফোরকান কাদেরী প্রমুখ। পরিশেষে, হুজুর কেবলা আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ্ (মাঃজিঃআঃ) বাংলাদেশসহ সমগ্র মুসলিম উম্মার সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া ও মুনাজাত করেন।
প্রতিবছরের মতো এবারও জুলুসের শৃঙ্খলা রক্ষায় ভোর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি আনজুমান সিকিউরিটি ফোর্স, গাউসিয়া কমিটিসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করেন। এদিকে জুলুস দেখতে সড়কের পাশে জড়ো হয় হাজারো মানুষ। এছাড়া জুলুসের পতাকা, ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন, তোরণে সাজানো হয় নগরীর সড়ক, মোড় সড়ক, বিভাজক। জশনে জুলুস উপলক্ষে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।












