যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসবমুখর পরিবেশে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে প্রতিবছরের ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামে আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের উদ্যোগে ঐতিহ্যবাহী জশনে জুলুস অনুষ্ঠিত হয়। ৪৬ বছরের মধ্যে এবার করোনার জন্য সীমিত পরিসরে জুলুস অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু জুলুস শুরু হওয়ার পর তা ব্যাপক আকার ধারণ করে। অগুনতি মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে দরুদ ও সালাম দিতে দিতে জুলুসে শরিক হন এবং তা লাখো মানুষের বৃহত্তম এক জনসমুদ্রে পরিণত হয়। জুলুস থেকে ফ্রান্সে মহানবী (দ.) এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানানো হয়েছে। ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) উপলক্ষে শুক্রবার সকাল ৮টায় নগরীর ষোলশহরস্থ আলমগীর খানকাহ্-এ-কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া থেকে ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মহসিনের নেতৃত্বে জুলুস বের হয়। জুলুসটি নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ময়দানে মাহফিলে মিলিত হয়।
জুলুস ময়দানের মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন আনজুমানের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মহসিন। এতে দরবারে আলিয়া কাদেরিয়া সিরিকোট শরীফের সাজ্জাদানশীন আওলাদে রাসূল আল্লামা মুহাম্মদ তাহের শাহ্ (মা.জি.আ.) ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বের মুসলিম উম্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত করেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ্ (মা.জি.আ.) ও ছাহেবজাদা আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ আহমদ শাহ্ (মা.জি.আ.)। আওলাদে রাসুল আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ্ (মা.জি.আ.) বলেন, মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় হাবীবকে এ দিনে পৃথিবীতে প্রেরণ করে সৃষ্টি জগতের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। আর এ অনুগ্রহের শোকরিয়া স্বরূপ মহান আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় পবিত্র জশ্নে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করে আসছে মুসলিম সম্প্রদায়। আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ (র.) চট্টগ্রাম থেকে এ দিনের সম্মানে জশ্নে জুলুস প্রবর্তন করেছেন। এজন্য তাঁকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।
মাহফিলে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য মুহাম্মদ মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মান্নাফী, আনজুমান ট্রাস্টের সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় গাউসিয়া কমিটির চেয়ারম্যান পেয়ার মোহাম্মদ। বীর মুক্তিযোদ্ধা মান্নাফী তার বক্তব্যে ফ্রান্সের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ইসলাম বিরোধী যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন আনজুমান ট্রাস্ট’র এডিশনাল জেনারেল সেক্রেটারি মুহাম্মদ সামশুদ্দিন, জয়েন্ট জেনারেল সেক্রেটারি মুহাম্মদ সিরাজুল হক, অ্যাসিস্টেন্ট জেনারেল সেক্রেটারি এস এম গিয়াস উদ্দিন শাকের, ফাইন্যান্স সেক্রেটারি মুহাম্মদ সিরাজুল হক, প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন সেক্রেটারি প্রফেসর কাজী শামসুর রহমান, জামেয়ার চেয়ারম্যান প্রফেসর মুহাম্মদ দিদারুল ইসলাম, আনজুমান সদস্য মুহাম্মদ শাহজাদ ইবনে দিদার, মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক, মুহাম্মদ কমর উদ্দিন সবুর, মুহাম্মদ আবদুল হাই মাসুম, তসকীর আহমদ প্রমুখ।
বক্তব্য রাখেন অ্যাড. মুহাম্মদ মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার, উপাধ্যক্ষ ড. মাওলানা মুহাম্মদ লিয়াকত আলী, আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ সোলাইমান আনসারী, মুফতি কাজী মুহাম্মদ আবদুল ওয়াজেদ, আল্লামা কাজী মুহাম্মদ মঈন উদ্দীন আশরাফী, অধ্যক্ষ আল্লামা আবদুল আলিম রেজভী, উপাধ্যক্ষ আল্লামা আবুল কাশেম মুহাম্মদ ফজলুল হক, আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ আশরাফুজ্জামান আলকাদেরী, অধ্যক্ষ মাওলানা আবু তৈয়ব চৌধুরী প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ফ্রান্স রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় নবী (দ.) এর যে অবমাননা করে যাচ্ছে এর জবাবে তাদের পণ্য বর্জনসহ সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। এ জন্য ওআইসি, আরব লীগসহ মুসলিম বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে সাহসী ভূমিকা রাখতে হবে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আনজুমান সদস্য মুহাম্মদ আবদুল হামিদ ও হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আনিসুজ্জামান। পরিশেষে, মহামারী করোনা হতে আরোগ্য লাভ, বাংলাদেশসহ মুসলিম বিশ্বের শান্তি, অগ্রগতি ও কল্যাণ কামনায় আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করেন জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার অধ্যক্ষ আল্লামা মুফতি ছৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান।