জল-পাহাড়ের উপত্যকা ডাকছে পর্যটকদের

রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | শনিবার , ২৯ মার্চ, ২০২৫ at ৫:২০ পূর্বাহ্ণ

ঈদ ঘিরে টানা ছুটিকে কেন্দ্র করে মেঘ, জলপাহাড়ের উপত্যকা রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় পর্যটকদের আগমনকে স্বাগত জানাচ্ছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে ঈদ ও বৈসাবি উৎসব কাছাকাছি সময়ে হওয়ায় খাগড়াছড়িতে এবার প্রচুর পর্যটক সমাগম হবে আশা করছে ব্যবসায়ীরা।

রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি কমার কারণে এখন হ্রদের মাঝে ভেসে উঠছে ছোটছোট ডুবোচর। হ্রদে পানিপূর্ণ সময়ের চেয়ে এই সময়টাতে সৌন্দর্য অন্যরকম। গ্রীষ্মের তীব্রতা ছড়িয়ে পড়ার আগে এ সময়টাতে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ অত্যন্ত আরামদায়ক বলছেন সংশ্লিষ্টরা। পর্যটকদের সেবা দিয়ে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্নের কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা। নিরাপত্তাজনিত কোনো শঙ্কা দেখছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও। রাঙামাটি শহরের পর্যটন শিল্প মূলত কাপ্তাই হ্রদ কেন্দ্রিক। নৌপথে বেশিরভাগই পর্যটন স্পটে যাতায়াতের সুযোগ রয়েছে। জেলা শহরের পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ডিসি বাংলো পার্ক, পলওয়েল পার্ক, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঝুলন্ত সেতু, সুবলং, কাপ্তাই হ্রদ, আসামবস্তিকাপ্তাই সংযোগ সড়ক, আরণ্যক, চাকমা রাজবাড়ি, রাজবন বিহার উল্লেখ্যযোগ্য। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কাপ্তাই হ্রদের মাঝে গড়ে উঠা ও আসামবস্তিকাপ্তাই সংযোগ সড়কের পাশে গড়ে উঠা বিভিন্ন রিসোর্টকটেজ জেলার পর্যটনে নতুনমাত্রা যোগ করেছে। শহর এলাকার বাইরে এ সময়টাতে জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ভ্যালি ও কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী নদীঘেঁষা পর্যটনকেন্দ্র ভ্রমণ পিপাসুদের পছন্দের শীর্ষে। ঈদকে ঘিরে রাঙামাটি জেলা শহরের পর্যটন মোটেল ছাড়াও ৫৪টির অধিক হোটেলমোটেল এবং ২০টির অধিক রিসোর্টকটেজ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি রাঙামাটির সাজেক ভ্যালির এক তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ৩৪ রিসোর্টকটেজ আগুনে পুড়ে ধ্বংস হলেও এখনো ৯১টি কটেজরিসোর্টে পর্যটকদের থাকা ও রাত্রিযাপনের সুব্যবস্থা রয়েছে। সাজেকের রিসোর্টকটেজ মালিকরা অবশ্য বলছেন, অন্যান্য ঈদ মৌসুমের চেয়ে এবার সাজেক ভ্যালিতে পর্যটক আগমনে কিছুটা ভাটা নেমেছে। গত ফেব্রুয়ারি সাজেকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৩৪টির মতো রিসোর্টকটেজ পুড়ে যাওয়ায় অনেকেই সাজেকমুখী হচ্ছেন না। আবার কেউ কেউ ভাবছেন সাজেকের রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা নেই। মূলত আগুনে এক তৃতীয়াংশ কটেজরিসোর্ট ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বাকিগুলো অক্ষত রয়েছে।

রাঙামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা জানান, আগামী ৩ এপ্রিল থেকে ৫৬ দিন পর্যন্ত আমাদের ৫০ শতাংশ বুকিং রয়েছে। আশা করি চৈত্র সংক্রান্তি ও নববর্ষ পর্যন্ত এমন থাকবে। যেহেতু এখনো সময় আছে। বুকিং আরো বেড়ে যাবে। আমাদের যে সকল সংস্কার কাজ প্রয়োজন তা ইতোমধ্যে শেষ করেছি। ঈদের ছুটিতে পর্যটক বরণে আমরা সানরাইজ ইকো পার্ক নামে একটি নতুন পার্ক উদ্বোধনের চেষ্টা করছি।

ট্যুরিস্ট পুলিশ রাঙামাটি রিজিয়নের পুলিশ সুপার নিহাদ আদনান তাইয়ান জানান, ঈদের ছুটিতে পর্যটন স্পটগুলোতে পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমাদের জনবলের ৮০ শতাংশ ছুটিতে যাচ্ছে না। বাকি যারা ছুটিতে থাকবেন তারাও ঈদের দুইতিনদিনের মধ্যে ফিরবেন। সব মিলিয়ে আমরা পর্যটকদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছি। আশা করছি পর্যটকরা স্বস্তিতে রাঙামাটি ভ্রমণ করতে পারবেন।

খাগড়াছড়ি : এবার ঈদ ও বৈসাবি উৎসব কাছাকাছি সময়ে হওয়ায় খাগড়াছড়িতে প্রচুর পর্যটক সমাগম হবে আশা করছে ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যে পর্যটকদের বরণে প্রস্তুতি চলছে। পর্যটক সমাগম বাড়লে ভালো ব্যবসা হওয়ার আশা পর্যটন সংশ্লিষ্টদের। পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে ট্যুরিস্ট পুলিশ।

পাহাড়, অরণ্য, ঝিরি, ঝরনা ও উপত্যকা নিয়ে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি। সারা বছরই আলুটিলা রহস্যময় সুড়ঙ্গ, ঝুলন্ত ব্রিজ, তারেং, রিছাং ঝরণাসহ বিভিন্ন দর্শনীয় পর্যটকের পদভারে মুখরিত থাকে। তবে এবার ঈদসহ যেকোনো উৎসবে পর্যটকদের ভিড় বাড়ে কয়েকগুণ। পর্যটকদের আগমনকে কেন্দ্র করে পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে চলছে মেরামত ও সংস্কার কাজ। ঈদে আগত পর্যটকদের ভালো সেবা দিতে প্রস্তুত পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।

খাগড়াছড়ি আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক কোকোনাথ ত্রিপুরা বলেন, এবার ঈদে পর্যটক সমাগম বাড়বে। কারণে ঈদ ও বৈসাবি উৎসব কাছাকাছি সময়ে উদযাপিত হবে। ঈদকে কেন্দ্র করে পর্যটন কেন্দ্রগুলো সংস্কার করা হচ্ছে। পর্যটকদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে পারব। খাগড়াছড়ি ট্যুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ মো. জাহিদুর রহমান বলেন, ঈদের আগে, ঈদের সময় এবং ঈদের পরে এই তিন স্তরে খাগড়াছড়ির প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রে আমার টিম কাজ করবে। আলুটিলাসহ প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। জেলা পুলিশের টিমের সাথে ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করবে। এবারের টানা বন্ধে খাগড়াছড়ি ও সাজেকে অন্তত লক্ষাধিক পর্যটক সমাগম হবে বলে আশা ব্যবসায়ীদের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচকরিয়া সুন্দরবনে লাগানো হবে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির ৩ লাখ চারা
পরবর্তী নিবন্ধপর্যটক বরণে প্রস্তুত কক্সবাজার