জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনার বাস্তবায়ন চাই

সবগুলো সংস্থার সমন্বয় জরুরি

| রবিবার , ১২ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৮:২৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত ১০ জানুয়ারি দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চট্টগ্রামে নগরবাসীর জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের এক সভায় এই নির্দেশনা দেন ড. ইউনূস। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বৈঠক সম্পর্কে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, বর্ষাকালে চট্টগ্রাম নগরীতে জলাবদ্ধতা একটি নৈমিত্তিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব নগরীর এই জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রেস সচিব বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের এ সভায় নগরীর যানজট সমস্যা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে, যার প্রেক্ষিতে আগামী দিনে যানজট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ দৃশ্যমান হবে।

অল্প কিছুদিন আগে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রয়াত উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফও চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানে চলমান চারটি প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করার পাশাপাশি নাগরিকদের সচেতন করার ওপর জোর দিয়েছিলেন। একইসঙ্গে তিনি জলাবদ্ধতা নিরসনসহ অন্যান্য উন্নয়ন কাজে সিটি কর্পোরেশন ও ওয়াসাসহ সংশ্লিষ্টদের ‘প্রাতিষ্ঠানিক ইগো’ দূর করে সমন্বিতভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেন। তিনি বলেছেন, খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে। এমনকি নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে। নদীতে ৬ থেকে ৭ মিটার পলিথিন ব্যাগ ও প্লাস্টিক ইত্যাদি দিয়ে জমাট বেঁধে গেছে। এসব বর্জ্য তো সিটি কর্পোরেশন ফেলে নাই। আমি, তুমি বা আমরা ফেলেছি। এই জায়গায় জনগণকে সচেতন করতে হবে, যেন বর্জ্যের প্রপারলি ম্যানেজমেন্টের মধ্যে তারাও অংশীদার হয়। উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ আরো বলেন, চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে পুরনো সমস্যা হচ্ছে জলাবদ্ধতা। বহু বছর ধরে এটা নিরসনের জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। তার অগ্রগতি আপাত দৃষ্টিতে চোখে পড়ছে না। বাস্তবে কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। কাজ করতে গিয়ে যে সমস্যাগুলো উঠে আসছে সেগুলো কিভাবে সমাধান করা যায় সেটা নিয়ে আলোচনা করেছি। তিনি বলেন, পদে পদে সমন্বয়ের কিছুটা অভাবের কারণে এটা হচ্ছে। সেখানেও একটা ভালো সাজেশন আছে। সমস্ত মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত যে মিটিংগুলো করা দরকার বা প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত মিটিংগুলো করা হয় সেটা যাতে আরো ত্বরান্বিত হয় এবং সুষ্ঠুভাবে হয়। জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানে সংশ্লিষ্ট সবগুলো সংস্থাকে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে হবে। শুধু প্রকল্পের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান সম্ভব না। এজন্য প্রয়োজন জনগণের সহযোগিতা। জনগণকে সচেতন করতেও কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। সভায় তিনি জলাবদ্ধতা নিরসন চট্টগ্রামের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ মন্তব্য করে বলেন, চট্টগ্রামের সাথে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি জড়িত। এজন্য এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সংস্থাগুলোকে ইগো ত্যাগ করে জনস্বার্থে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।

বাস্তবিক অর্থে জলাবদ্ধতা চট্টগ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের দুঃখগাথা হয়ে আছে। বর্ষা মৌসুমে ভারী কিংবা অল্প বৃষ্টিতে নগরের অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে যাবে, এই নিয়তি একপ্রকার মেনে নিয়েছে নগরবাসী। এমনকি বৃষ্টি না থাকলেও অনেক সময় জোয়ারের পানিতেও ভোগ্যপণ্যের বড় পাইকারি বাজার, হাসপাতালসহ বসতবাড়ি ডুবে যাওয়ার ঘটনা এখানে নৈমিত্তিক। বিশেষজ্ঞরা বলেন, জলাবদ্ধতার মূল কারণ অপরিকল্পিত নগরায়ণ। বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করার সময় জলপ্রবাহের যে রাস্তা ছিল তা বন্ধ করে দেয়া হয়। সে কারণেই জলাবদ্ধতার সমস্যা হচ্ছে। এর বাইরে এলাকা ভিত্তিকও নানা কারণ থাকতে পারে। জলাবদ্ধতার পেছনে পাহাড় কাটা, কর্ণফুলী নদী ভরাট হয়ে যাওয়া, খাল নালা দখল হওয়াসহ নানা কারণ আছে। চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীলদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। মেগা প্রকল্পে জলাবদ্ধতা নিরসনে যে সুপরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, তার বাস্তবায়ন জরুরি। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা এবার কাজ দেবে বলে অনেকেই আশা করছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে