জলাবদ্ধতা নিরসন : প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বক্তব্যে আশাবাদী নগরবাসী

| শুক্রবার , ৫ মে, ২০২৩ at ৭:০৪ পূর্বাহ্ণ

নগরবাসী জেনে খুবই আশ্বস্ত হলেন যে, জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের সিংহভাগ কাজ শেষ হওয়ায় আসন্ন বর্ষা মৌসুমে নগরবাসীর ভোগান্তি কম হবে। ৩ মে দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী মাসে শেষ হচ্ছে নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের মেয়াদ। অথচ ইতোমধ্যে প্রকল্পের ভৌত কাজ শেষ হয়েছে ৭৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। এছাড়া প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৫৪ শতাংশ, যা টাকার অংকে তিন হাজার ১৮ কোটি টাকা। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা এবং খালের জায়গা বেদখল হওয়ায় প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। তাই প্রকল্পটির উন্নয়ন প্রস্তাবনা সংশোধন বা আরডিপিপি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। আরডিপিপি অনুমোদন পেলে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হবে। একইসঙ্গে বাড়বে টাকার অংকও। ডিপিপি অনুযায়ী, এই প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ সালের জুনে শেষ হয়। তবে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়।

পাশাপাশি প্রকাশিত দুটো প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, প্রকল্পভুক্ত খালগুলোতে কাজের সুবিধার্থে দেয়া বাঁধ ও মাটি অপসারণ করা হয়েছে। তাই খালের কারণে এবার কোথাও জলাবদ্ধতা হবে না। তবে প্রকল্পের বাইরে থাকা শহরের অনেকগুলো ড্রেন এখনো ভরাট রয়েছে। যেগুলো পরিষ্কার না করায় ড্রেন সংশ্লিষ্ট এলাকার পানি খালে আসতে বাধাগ্রস্ত হয়। এর প্রভাবে কোথাও জলাবদ্ধতার শঙ্কা রয়েছে। চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের অগ্রগতি জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ আশা এবং শঙ্কার কথা জানানো হয়।

প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী বলেন, আমাদের প্রকল্পের কারণে এবার জলাবদ্ধতা হবে না। রেগুলেটরের কাজ প্রায় শেষ। এগুলোর সুফল পাচ্ছি। আগ্রাবাদ এলাকা বিশেষ করে মা ও শিশু হাসপাতালে জোয়ারের পানি ঢুকে যেত। গত অমাবস্যায় কিন্তু পানি উঠেনি। শহরকে পুরোপুরি জলাবদ্ধতা মুক্ত করার জন্য প্রকল্পের বাইরে যে ২১টি খাল আছে সেগুলো সচল করতে হবে। প্রকল্পের বাইরে প্রায় সাড়ে ১৩শ কিলোমিটার ড্রেন আছে। সেগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে। নগরে জলাবদ্ধতার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খালের অবৈধ দখল, সব ধরনের আবর্জনা খালে ফেলা এবং খালকে ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার করা, অপরিকল্পিত ও অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, খালের সাথে ড্রেনেজ ব্যবস্থার পরিকল্পিত সংযোগ না থাকা, নিয়মিত খাল ও ড্রেন পরিস্কার না করা এবং গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইনের মাধ্যমে ব্রিজ ও কালভার্টের পানির প্রবাহ ব্যহত হওয়া দায়ী। ৬১টি পয়েন্ট রয়েছে যেখানে ইউটিলিটি সার্ভিসের কারণে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়।

চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি কম হয়নি। গণমাধ্যমগুলো অনেক দিন ধরে সোচ্চার এ বিষয়ে। সরকারের নানামুখী উদ্যোগ,বিশেষজ্ঞদের মতামত, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পরামর্শ কোনোটাই যেন কাজে আসে নি। প্রাকৃতিকভাবে জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও নেই। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃত্রিমভাবে যে ড্রেনগুলো আছে সেগুলো সঠিকভাবে মেরামত করতে পারলে কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন নগরবাসী। এই ড্রেনেজ সিস্টেম মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ একক কর্তৃত্বে আনতে বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ গুরুত্বসহ বিবেচনা করা প্রয়োজন।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা যে বক্তব্য গণমাধ্যমে দিয়েছেন, তাতে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন নগরবাসী। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বক্তব্যে আস্থা রেখে তাঁরা বিশ্বাস করছেন, আগামীতে তেমন ভোগান্তি হবে না। প্রকল্পের সব কাজ তাঁরা দ্রুত শেষ করতে চান। কেননা প্রকল্পের কাজ শেষ হলে চট্টগ্রামবাসী জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্ত হবে। সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাসুদুর রহমানের মতো আমরাও আশা করতে পারি, কাজের সুফল পেতে পারেন নগরবাসী। সেহিসেবে আগের মত জলাবদ্ধতা নগরে হবে না।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রামের খালগুলো ভূমিকা রাখতে সক্ষম। চলমান মেগা প্রকল্পের ৭৬ দশমিক ২৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা দরকার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে