জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ

৭টি খাল সিডিএকে বুঝিয়ে দিচ্ছে সেনাবাহিনী জুনের মধ্যে দেয়া আরো ১১টি

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৩০ মার্চ, ২০২২ at ৬:২৭ পূর্বাহ্ণ

প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের ৬৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ৭টি খাল প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে। আগামী জুনের মধ্যে বুঝিয়ে দেয়া হবে আরো ১১টি খাল। ৩৬টি খালের মধ্যে ১৮টি খালের কাজ শেষ হওয়া এবং বাকি ১৮টি খালের সংস্কার, খনন ও রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ কাজ এগিয়ে থাকায় আগামী বর্ষায় নগরীর জলাবদ্ধতার ক্ষেত্রে বড় ধরনের সুফল মিলবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। অবশ্য ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতা নিরসন না হলে প্রকল্পের কার্যক্রম সংকটে পড়ার শঙ্কাও রয়েছে।
মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ বড় ধরনের একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সমপ্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক এই মেগা প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের আগস্টে একনেকের অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পটিতে ভূমি অধিগ্রহণ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা। বাকি ৩ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয় খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে। এর মধ্যে খালের পাড়ে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, খাল থেকে বালি ও মাটি উত্তোলন এবং নগরীর বিভিন্ন স্থানে নালা নির্মাণে বড় ধরনের ব্যয় ধরা হয়।
২০১৯ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। ২০২২ সালের জুন মাসে এটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা, প্রয়োজনীয় অর্থের যোগানসহ নানা কারণে প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে শেষ করা সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ২শ কোটি টাকার মতো। ভূমি অধিগ্রহণে কিছু সমস্যা থাকায় প্রকল্পের কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী আজাদীকে বলেন, আমাদের এই প্রকল্পে সর্বমোট ৩৬ খাল রয়েছে। এর মধ্যে আমরা ১৮টি খালের কাজ শেষ করে এনেছি। আগামী জুন মাসের মধ্যে এই ১৮টি খাল সিডিএকে বুঝিয়ে দিতে পারব। ১৮টি খালের দৈর্ঘ্য ২৮.৮৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৬.৯৫১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ৭টি খালের দুই পাশের রিটেইনিং ওয়ালের কাজ শেষ। এই সাতটি খাল আমরা সিডিএকে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য চিঠি দিচ্ছি। খালগুলো হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ মিটার দৈর্ঘ্যের রাজাখালী-২, ৫২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের সদরঘাট-১, ১৪০০ মিটার দৈর্ঘ্যের সদরঘাট-২, ৪০০ মিটার দৈর্ঘ্যের কলাবাগিচা, চাক্তাই এলাকার ৭১৬ মিটার দৈর্ঘ্যের মরিয়মবিবি খাল, এয়ারপোর্ট এলাকার ২ হাজার ২৩ মিটার দৈর্ঘ্যের গুপ্তাখাল এবং আমবাগান এলাকার ১ হাজার ৮৭ মিটার দৈর্ঘ্যের আজব বাহার খাল। এসব খাল এখন পানি চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত এবং কার্যকর রয়েছে।
তিনি বলেন, এই ৭টি খালের বাইরে বাকি ১১টি খালের রিটেইনিং ওয়ালসহ আনুষাঙ্গিক কাজ আগামী জুনের মধ্যে সম্পন্ন করে সিডিএকে বুঝিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ওই ১১টি খালের দৈর্ঘ্য ২১.১৩ কিলোমিটার।
উক্ত ১১টি খাল হচ্ছে চান্দগাঁও শমসের পাড়া এলাকার ৩ দশমিক ৬০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ত্রিপুরা খাল, ২ দশমিক ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রুবি সিমেন্ট খাল, ৬৫৬ মিটার দৈর্ঘ্যের নয়াহাট খাল, ১ দশমিক ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ফিরিঙ্গিবাজার খাল, ১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের টেকপাড়া খাল, ৭২০ মিটার দৈর্ঘ্যের মোগলটুলি খাল, ২ দশমিক ৯৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রামপুর খাল, ১ দশমিক ৭৭৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের নাছির খাল, ২ দশমিক ৭৯৫ মিটার দৈর্ঘ্যের রাজাখালী-১, ১ দশমিক ৬ মিটার দৈর্ঘ্যের রাজাখালী-৩ এবং ২ দশমিক ৩৩৮ মিটার দৈর্ঘ্যের বাকলিয়া খাল। উক্ত ১৮টি খাল জুনের মধ্যে সিডিএ বুঝে নেবে। এরপর খালগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে বুঝিয়ে দেয়া হবে।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বাকি ১৮টি খালের পাড়ে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণসহ আনুষাঙ্গিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে এসব খালের কাজও অগ্রসর হচ্ছে। তবে ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজের সমস্যা হচ্ছে।
এই প্রকল্পে সিডিএর পক্ষে প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আহমেদ মাইনুদ্দিন বলেন, ভূমি অধিগ্রহণের ৮টি প্রস্তাব জেলা প্রশাসকের নিকট পাঠানো হয়েছিল। কিছু সমস্যা চিহ্নিত হওয়ার পর তা সংশোধন করে আবারো পাঠানো হয়েছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অপর একটি সূত্র বলছে, নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় ৪ হাজার কোটি টাকা বেড়ে গেছে। প্রকল্পের আওতায় ৩৬টি খালের দুই পাশে ১৭৬ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। কিন্তু ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে ৪ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা। রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের সময় খালপাড়ের বহুতল ভবন রক্ষা করতে শিট পাইল করতে হচ্ছে, যা প্রকল্পের শুরুতে ছিল না। এতেও ব্যয় বাড়ছে। এর বাইরে প্রকল্পে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মাত্র ১৫ কিলোমিটার নালা নির্মাণ করার ব্যয় ধরা হয়েছিল। মাঠ পর্যায়ে কাজে নেমে দেখা যাচ্ছে, নালা নির্মাণ করতে হবে ৯০ কিলোমিটার। এতে ব্যয় হবে ৩৫৮ কোটি টাকা। রাস্তার পাশের নালা নির্মাণে খরচ বেড়ে গেছে ৩৫৪ কোটি টাকা।
সিডিএর একজন কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পের প্রাক্কলন ব্যয় নির্ধারণকালে ধরা হয়েছিল, ৩৬টি খাল থেকে ৪ লাখ ২০ হাজার ঘনফুট কাদা অপসারণ করতে হবে। এতে ব্যয় হবে ২৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। কিন্তু কাজ শুরু করার পর ক্রমান্বয়ে হিসেব পাল্টাতে শুরু করে। বর্তমানে মাঠ পর্যায়ের হিসেবে দেখা যায়, ৩৬টি খাল থেকে মোট ১৯ লাখ ৫৮ হাজার ঘনফুট কাদা সরাতে হবে। এতে ব্যয় হবে ১৭২ কোটি টাকা। খাল সম্প্রসারণে সর্বমোট ৫ লাখ ২৮ হাজার ঘনফুট মাটি কাটার কথা ছিল, যাতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৭ কোটি টাকা। কিন্তু এখন হিসেব করে দেখা যাচ্ছে, প্রকল্পের পুরো সুফলের জন্য মাটি কাটতে হবে ২১ লাখ ঘনফুট, যাতে ব্যয় হবে ১৭০ কোটি টাকা। এভাবে নানা খাতে ব্যয় বৃদ্ধির ফলে প্রকল্প ব্যয় ৪ হাজার কোটি টাকা বেড়ে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকায় ঠেকেছে।
২০২৪ সালের জুন নাগাদ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এর মধ্যে নির্মাণ সামগ্রীর দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে প্রকল্প ব্যয় আরো এক দফা বৃদ্ধি পাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউপজেলায় অগ্নিদগ্ধ রোগীরা চিকিৎসা পাবে : প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধ৪২নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভা