জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে সমন্বয় আনার চেষ্টা

মেয়রের উদ্যোগে বুধবার সভা

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:২৬ পূর্বাহ্ণ

নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে গত চার বছর ধরে ১০ হাজার ৯২১ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে পৃথক চারটি প্রকল্পের কাজ চলছে। অথচ এ সময়ে জলাবদ্ধতাজনিত দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলেনি নগরবাসীর! প্রকল্পগুলোর কাজ চলতি বছরেও শেষ হবে না। অর্থাৎ আগামী বর্ষায়ও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মেলার সম্ভাবনা কম। চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে সিডিএর দুইটি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) একটি করে প্রকল্প রয়েছে। অভিযোগ আছে, সমন্বয়হীনভাবে চলছে এসব প্রকল্পের কাজ। তাই কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলছে না। এ অবস্থায় সমন্বয় নিশ্চিতে আগামী বুধবার প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সমন্বয় সভা হওয়ার কথা রয়েছে। চলতি শুষ্ক মৌসুমে সমন্বিতভাবে কাজ করে আগামী বর্ষায় জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে নগরবাসীকে রক্ষার উপায় বের করা হবে সমন্বয় সভায়। সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর উদ্যোগে টাইগারপাসস্থ নগর ভবনে অনুষ্ঠেয় সমন্বয় সভায় সিডিএ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম ওয়াসা, জেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। জানা গেছে, গত বছর নগরের চশমা খালে পড়ে প্রাণ হারান চারজন। এছাড়া আগ্রাবাদের নালায় পড়েও মারা যান এক কলেজ শিক্ষার্থী। এসব প্রাণহানির পর খাল-নালায় প্রতিবন্ধকতা না দেয়ায় সিডিএ ও সিটি কর্পোরেশনকে দায়ি করে নগরবাসী। তবে বরাবরই দুই সংস্থা পরষ্পরকে দোষারোপ করে। তখন দুই সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের দাবি উঠেছিল। সর্বশেষ ৪১ ওয়ার্ডের ৫৯৮ টি খাল-নালার তালিকা করে গত ১১ ডিসেম্বর থেকে খনন কার্যক্রম শুরু করে চসিক। তবে এসব কাজ করতে গিয়ে ‘ডুপ্লিকেশন’ (দ্বৈততা) দেখা দেয়। কারণ কিছু কিছু খাল সিডিএর মেগা প্রকল্পেরও আওতায় রয়েছে। তাই একই খালে দুই সংস্থায় কাজ করা বা দ্বৈততা এড়াতে প্রয়োজন দেখা দেয় সমন্বয়ের। এরপ্রেক্ষিতে সমন্বয় সভা আয়োজন করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নগরে ৫৭টি খাল রয়েছে। যার মোট দৈর্ঘ্য ১৬৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার। এর বাইরে ৯৭২ কিলোমিটার নালা রয়েছে। বিপরীতে জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের আওতায় ৩৬ টি খাল এবং ৩০২ নালা সংস্কারের কাজ করছে সিডিএ। অর্থাৎ ২১ টি খাল এবং ৬৭০ কিলোমিটার নালা মেগা প্রকল্পের বাইরে রয়ে গেছে। যা দীর্ঘদিন ধরে খনন, পরিষ্কার বা সংস্কার করা হয়নি। অনুষ্ঠেয় সমন্বয় সভায় এসব খাল কোন উপায়ে খনন করা হবে সেটা নিয়েও আলোচনা হবে। সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, সমন্বয়ের কোনো বিকল্প নাই। সিডিএ অনেকগুলো খালে গাইড ওয়াল নির্মাণ করেছে। ওসব খালে মাটি জমে গেছে। এসব মাটি যদি এখনই অপসারণ না করে তাহলে বর্ষায় জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ বাড়বে। অনেকগুলো খালে বাঁধ দেয়া আছে। সেগুলো তো বর্ষার আগে অপসারণ করতে হবে। গতবার কিন্তু বাঁধের জন্য অনেক জায়গায় পানি আটকে ছিল। এসব কিভাবে সমাধান করা যাবে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। তিনি বলেন, মেগা প্রকল্পের বাইরে কিন্তু ২১টি খাল আছে। ওসব খাল যদি পরিষ্কার করা না হয় বা উদ্ধার করা না হয় তাহলে তো জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলবে না। এসব খাল কীভাবে পরিষ্কার করা যায় সেসব নিয়েও উপায় খোঁজা হবে।
প্রসঙ্গত, নগরে চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সমপ্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক সিডিএর মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এক হাজার ৬২০ কোটি ৭৩ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা বা জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। দুই হাজার ৩১০ কোটি ২৪ লাখ ২০ টাকায় ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। এছাড়া এক হাজার ৩৭৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরের বহাদ্দারহাট বাড়ইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল নতুন খাল খননে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের একটি প্রকল্প আছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকলেজ ছাত্রীর নামে ফেসবুকে অপপ্রচার শিক্ষক গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধরেমিটেন্সে প্রণোদনা আড়াই শতাংশ করার ঘোষণা